Advertisement
Advertisement
Lord Shiva

কীভাবে হয়েছিল শিবের জন্ম? জানুন পুরাণে বর্ণিত দেবাদিদেবের লীলারহস্য

কোন রহস্যে যুগ যুগ ধরে শিবের মহিমা চির অমলিন?

Here is how Lord Shiva was born। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 18, 2023 5:28 pm
  • Updated:February 18, 2023 6:32 pm

বিশ্বদীপ দে: তিনি দেবাদিদেব মহাদেব (Lord Shiva)। ত্রিলোকনাথ পরমেশ। তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নয়। বেদব্যাসের ‘বৃহৎ শিবপুরাণ’-এ (অনুবাদ: কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন) রয়েছে- ‘শিব হতে শ্রেষ্ঠতর কিছুমাত্র নাই। শ্রীশিব সবার শ্রেষ্ঠ জানিবে সবাই।।’ এই শিবই শস্যশ্যামল বাংলার বুকে স্ফীত পেট, গোঁফদাড়িময় ভোলানাথ। বঙ্গ সংস্কৃতিতে তিনি মিশে গিয়েছেন সেই কবে। কিন্তু সে প্রসঙ্গ পরে। সভ্যতার উন্মেষ থেকেই তিনি আরাধ্য। কিন্তু পুরাণমতে তাঁর আবির্ভাব কবে? বিশ্বপতি তিনি। সমগ্র বিশ্বের অধিপতির জন্ম হয়েছিল কীভাবে?
‘বৃহৎ শিবপুরাণ’ অনুযায়ী ‘কল্পে কল্পে ব্রহ্মা বিষ্ণু লভেন জনম। কল্পে কল্পে হয় সর্ব বিশ্বের সৃজন। এরূপে সবার সৃষ্টি করি মহেশ্বর। সংহার করেন পুনঃ দেবাদেব হর।’ অর্থাৎ ত্রিদেবের (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর) মধ্যে প্রাচীনতম শিবই। তিনিই বাকিদের সৃষ্টি করেছেন। শিবপুরাণ তেমনই বলছে। তিনি আসলে স্বয়ম্ভূ। তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেননি। তিনি নিজে নিজেই উদ্ভূত হয়েছিলেন। যখন কিচ্ছু ছিল না, তিনি ছিলেন। আবার যখন সব ধ্বংস হয়ে যাবে, তখনও থেকে যাবেন তিনিই।

তবে আরও একটি কাহিনি রয়েছে। ব্রহ্মা (Lord Brahma) ও বিষ্ণুর (Lord Vishnu) কলহের ফলে নাকি আবির্ভূত হয়েছিলেন। কী সেই কাহিনি? একবার ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে তর্ক বাঁধল তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে। বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন আচমকাই সেখানে আবির্ভূত হল এক প্রকাণ্ড জ্বলন্ত স্তম্ভ। সেই স্তম্ভের শুরু কোথায়, কোথায়ই বা শেষ তার যেন তল পাওয়া যায় না। এরপরই শোনা গেল দৈববাণী। কোন সুদূর থেকে ভেসে আসা সেই স্বর দুই দেবতাকে জানিয়ে দিল, ওই স্তম্ভের আদি ও অন্ত যিনি খুঁজে বের করতে পারবেন তিনিই শ্রেষ্ঠ। সঙ্গে সঙ্গে একটি হাঁস হয়ে আকাশমুখে ভেসে চললেন ব্রহ্মা। অন্যদিকে বিষ্ণু শূকরের বেশে জমি খুঁড়ে স্তম্ভের শেষাংশ অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেন। সময় গেল কিন্তু তাঁরা সেই স্তম্ভের শুরু বা শেষ কিছুই খুঁজে পেলেন না। একটা সময় হাল ছেড়ে দিলেন দু’জনই। তখনই তাঁদের সামনে আবির্ভূত হলেন শিব। যেন তিনি অপেক্ষমাণ তাঁদের জন্য। শিবকে দেখার পরই ব্রহ্মা ও বিষ্ণু বুঝতে পারলেন তাঁর স্বরূপ। শিবের চিরন্তন তথা আদিঅন্তহীন রূপকে প্রত্যক্ষ করে তাঁরা বুঝতে পারলেন শিবের আসল পরিচয়।

Advertisement

Here is why devotees pray to Lord Shiva during Shravan month

Advertisement

 

[আরও পড়ুন: মন্দিরে মক্কা-মদিনা ও যিশুর ছবি! শিবরাত্রিতে মালবাজারে সম্প্রীতির চিত্র]

‘শিব’ কথাটির প্রকৃত ব্যঞ্জনা কী? এপ্রসঙ্গে উচ্চারণ করতেই হয় ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’। সত্য ও সুন্দরের সেতু তিনি। একমেবাদ্বিতীয়ম পরমব্রহ্ম। সভ্যতায় শিব চেতনা কবে থেকে শুরু? সেপ্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একবার ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর সঙ্গে শিবের সংযোগের প্রসঙ্গটি আলোচনা করা দরকার। সৃষ্টি-স্থিতি-লয় এই তিনের প্রতিভূ তিনজন। ব্রহ্মা সৃষ্টি, বিষ্ণু স্থিতি ও শিব প্রলয়।

শিব চেতনার কবে শুরু তার কোনও হদিশ মেলে না। তবে নানা রূপান্তরের মধ্যে দিয়েই আজকের শিবরূপ পরিগ্রহ করেছে সভ্যতা। মনে করা হয় শিব-কল্পনা বৈদিক যুগেরও বহু আগের। সিন্ধু সভ্যতায় মূলত মাতৃপূজার প্রচলন থাকলেও পুরুষ দেবতাও ছিলেন। তাঁদের অন্যতম তিনমুখ বিশিষ্ট এক দেবতা। একটি সিলে এই রূপটি দেখা যায়। তাঁর হাতে বাজুবন্দ। মাথায় শিং। আসনের নিচে ছিল একটি হরিণ। চারপাশে বাঘ, হাতি, গণ্ডার, মহিষ। ‘ত্রিমুখা’, ‘যোগেশ্বর’, ‘পশুপতি’, ‘মহাযোগী’ নানা নামে পরিচিত তিনি। তাঁকেই শিবের আদিরূপ বলে মনে করা হয়। বৈদিক যুগে প্রকৃতির শান্ত স্বরূপ থেকে কল্যাণময় যে চিন্তার জন্ম, সেই চিন্তা থেকেই মঙ্গলময় চেতনার প্রতীক শিবের জন্ম। সংহারের দেবতা রুদ্র ও মঙ্গলময় শিব মিলেমিশে রয়েছেন মানুষের ধর্মবিশ্বাসে একীভূত হয়ে। পৌরাণিক আমল থেকেই শিবের মূর্তির পাশাপাশি তাঁর প্রতীক লিঙ্গের উপাসনাও শুরু হয়। অনেকেই শিবলিঙ্গকে অনার্যদের ভাবনার মূর্ত স্বরূপ বলেও মনে করেন।

Shiva tandav

[আরও পড়ুন: শিবকে ছুঁলেই অনুভূত হয় রাবণের পদচিহ্ন, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ বৈদ্যনাথ ধামের মাহাত্ম্য জানেন?]

এই শিবই বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে মিশে গিয়েছেন ঘরের মানুষ হয়ে। এখানে ‘দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা’। তাই তিনি পেশিবহুল জ্যোতির্ময়, মাথার পিছনে জ্যোতির্বলয় এমন দেবতা নন। মুখময় গোঁফদাড়ি, হাতে কলকে, বাঘছাল পরিহিত এক মানুষ যাঁর শরীরে মেদের আধিক্য। স্ফীত পেট দেখলে মনে হবে চিরচেনা কোনও মধ্যবয়সি বাঙালি পুরুষ বুঝি। বছরের এই সময়টাই তাঁর আরাধনার মূল সময়।

Shiva

শিবরাত্রি থেকে নীলপুজো, গাজন, চড়ক- নানা ভাবে বঙ্গ সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য ও লোকসংস্কৃতিতে তাঁর রূপও অনেক। কোথাও তিনি পাঁচু ঠাকুর। কোথাও বা চাঁদ রায় কিংবা ধর্ম ঠাকুর, ক্ষেত্রপাল। মৎস্যজীবীদের কাছে তিনি মাকাল ঠাকুর। এই দেবতার অলৌকিক বিভার সঙ্গে মিশে গিয়েছে লৌকিক সংস্কৃতি। যেন বা ঘরের মানুষ। ‘শ্মশানে-মশানে থাকে/ ছাইভস্ম গায়ে মাখে’। অন্নদামঙ্গলেই রয়েছে ‘অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ।/ কোন গুণ নাহি তাঁর কপালে আগুন।’ এই বহুল পরিচিত ব্যজস্তূতির কথা কে না জানে? তাই ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

Shiva
শিবের বিয়ে

মাথায় জটাজুট, হাতে ত্রিশূলধারী, ষাঁড়ের পিঠে চড়া মানুষটিকে জামাই হিসেবে দেখে শাশুড়ি মেনকা জ্ঞান হারিয়েছিলেন। কিন্তু পরে যখন শিব তাঁর মনোহর রূপটি দেখালেন, তখন তিনি মোহিত হয়ে গেলেন। সহস্রসূর্যের প্রভাময় শরীর, মুকুটের দিব্য বিভা, কণ্ঠের অলঙ্কারের জৌলুস দেখে বুঝতে পারলেন, বাইরের এই রূপ আসল নয়। সমস্ত রূপকে অতিক্রম করে চিররূপময় শিব একমেবাদ্বিতীয়ম। এভাবেই এই বঙ্গে শিব রয়ে গিয়েছেন যুগ যুগ ধরে। সময় বদলেছে। কালীঘাটের পটচিত্র বা যামিনী রায়ের ছবি হয়ে শিব ধর্মীয় অস্তিত্বকে সঙ্গে নিয়েই সংস্কৃতিতেও চির অমলিন রূপ ধারণ করে রেখেছেন। হয়ে গিয়েছেন চিরকালীন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ