সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজ বিশ্বকর্মা পুজো। আকাশে রং-বেরঙের ঘুড়ি ওড়ানোর দিন। শরতের নীলচে আকাশে রং বেরঙের ঘুড়ি ডানা মেলে ওড়ার দিন। গনগনে রোদে কোনও বালাই না করে লাটাই হাতে দে ছুট ছাদে। আর খিদে পেলে? চিন্তা কীসের? থরে থরে রান্নাপুজোর রান্না সাজিয়ে মা-কাকিমা তো বসেই রয়েছেন হেঁশেলে। শাক-সবজি, ডাল, রকমারি মাছের পদ-থেকে শেষপাতে চাটনি। সব মজুত। চেটেপুটে লেহন করাই বাকি! তাই তো? যৌথ পরিবারে রান্নাপুজোর নিয়ম কানুন এখন নস্ট্যাজিয়াতেই বসত করে বটে! কারণ, এখন ‘নিউক্লিয়ার’ যুগ মশাই। তবে সে যাই হোক রান্নাপুজোর নিষ্ঠাতেও কিন্তু বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি। নিয়ম করে এখনও সেই রীতি-পালন চলছে বাংলার ঘরে ঘরে। তা এই ‘রান্নাপুজো’ কী?
‘রান্নাপুজো’ আসলে প্রাচীন শস্যোৎসবের স্মৃতিবাহী। যাকে অরন্ধন পুজোও বলা হয়। আগের দিনের রান্না করা খাবার খাওয়া হয় এই দিন। নবান্নে যেমন শস্যের উৎসব হয়, ঠিক তেমনই বাংলার আরও এক শস্য উৎসবের নাম রান্নাপুজো। বিশ্বকর্মা কিন্তু কৃষিরও দেবতা। তাই তাঁর বাহন হাতি, শাস্ত্র অন্তত এমনটাই বলছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সমস্ত পুজো তিথি মেনে হলেও একমাত্র এই বিশ্বকর্মা পুজোই সূর্যের স্থান পরিবর্তন অনুযায়ী হয়। ভাদ্র-সংক্রান্তির দিন সূর্য সিংহ লগ্ন থেকে কন্যা লগ্নে প্রবেশ করে। বৃহৎসংহিতা গ্রন্থ মতে, গ্রীষ্মান্তে যে সূর্য মেঘ রচনা করে বর্ষণের মাধ্যমে কৃষিকর্ম সংরক্ষণ করেন তিনিই বিশ্বকর্মা। আর সূর্যের অবস্থানের সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের সম্পর্কও হয়েছে, যার সঙ্গে শস্যচাষ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আর সেই উপলক্ষেই শস্য উৎসব উদযাপন হয় এই রান্নাপুজোর মধ্য দিয়েই।
বিশ্বকর্মার জন্ম নিয়ে নানা পুরাণে নানা রকম কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার জন্ম। আবার ভবিষ্যপুরাণ মতে, অষ্টবসুর অন্যতম প্রবাসের ঔরসে এবং বৃহস্পতির ভগিনী বরবর্ণিনীর গর্ভে বিশ্বকর্মার জন্ম। স্কন্দপুরাণ মতে আবার, বিশ্বকর্মার পাঁচটি মুখ ও দশটি হাত।
বিশ্বকর্মা অলংকার ও ভূষণ প্রস্তুতকারক। তিনি শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য বিশারদ। তাঁর স্থাপত্য বিদ্যার উল্লেখযোগ্য কাজ- কুবেরের অলকাপুরী, লঙ্কার প্রাসাদ, কৃষ্ণের দ্বারকাপুরী প্রভৃতি। এমনকী স্বর্গলোকও নাকি তাঁরই হাতের জাদুতে গড়া। হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ তাঁরই পরিকল্পনা। তাছাড়া মৎস্য পুরাণের মতে কূপ ও জলাশয় খনন, প্রতিমা নির্মাণ, বাড়ি ও বাগানের পরিকল্পনা এইসব কাজ ও শিল্পের উদ্ভাবক হচ্ছেন বিশ্বকর্মা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.