Advertisement
Advertisement
Lakshmi

কেবল হিন্দু ধর্ম নয়, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মেও উল্লেখ মেলে দেবী লক্ষ্মীর

সৌন্দর্য ও ধনসম্পদের দেবীর উপাসনার উল্লেখ পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলিতেও পাওয়া যায়।

Not only Hindus but also Buddhists and Jains adore Lakshmi। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 7, 2022 5:24 pm
  • Updated:October 7, 2022 5:24 pm

বিশ্বদীপ দে: উড়ে গিয়েছে দশমীর নীলকণ্ঠ পাখি। কৈলাসে ফিরে গিয়েছেন উমা। এবার সময় লক্ষ্মীর (Lakshmi) আরাধনার। সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি, সৌন্দর্য, উর্বরতা ও ধনসম্পদের দেবী আসবেন গৃহস্থের ঘরে। বারোয়ারি পুজোমণ্ডপেও তাঁর দেখা মেলে। কিন্তু কোজাগরী মানেই যে ‘কে জেগে আছ?’ তাই এই পুজো মানেই যেন গভীর রাতে গৃহস্থের আঙিনায় দৈবী পদস্পর্শের অলৌকিক মহিমা। দেশের অন্য প্রান্তে দীপাবলির সন্ধ্যায় এই পুজো হলেও দেশের এই অঞ্চলে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো হয় দুর্গাপুজোর অব্যবহিত পরে (kojagari Lakshmi puja 2022)। কিন্তু লক্ষ্মী কি কেবলই এক হিন্দু দেবী? তাঁর উল্লেখ কিন্তু রয়েছে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মেও।

সেকথায় যাওয়ার আগে একবার দেখে নেওয়া যাক লক্ষ্মীপুজোর ইতিহাসকে। সৌন্দর্য ও ধনসম্পদের দেবীর উপাসনা পৃথিবীর প্রতিটি প্রাচীন সভ্যতাতেই লক্ষিত। গ্রিসে কোর, রোমে ডিমিটার, মিশরে আইসিস, পারস্যে অ্যানাহিতা, ভাইকিংদের ফ্রেয়া। একই ভাবে হিন্দুদের আরাধনায় লক্ষ্মী। ঋগ্বেদে যদিও লক্ষ্মীর উল্লেখ নেই। কিন্তু উল্লেখ রয়েছে ‘শ্রী’ শব্দটির। এও লক্ষ্মীরই নাম। বহু নথির উপরে ‘শ্রী’ লেখার রীতি কিন্তু প্রাচীন। একই ভাবে যে কোনও দেবদেবীর নামোল্লেখের আগে ‘শ্রী’ উচ্চারণ করতে হয়। কেবল ঈশ্বর নয়, যে কোনও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও শুরুতে শ্রী বলা হয়। শ্রীসূক্তে আমরা পাই ‘শ্রী’ নামের এক দেবীকে। তিনি পদ্মাসনা। নিঃসন্দেহে ইনিই দেবী লক্ষ্মীর আরেক প্রকাশ।

Advertisement

Laxmi-Pujo

Advertisement

[আরও পড়ুন: গরুপাচার মামলার ‘মূল পৃষ্ঠপোষক’ অনুব্রত, গ্রেপ্তারির ৫৭ দিনের মাথায় চার্জশিটে দাবি সিবিআইয়ের]

তবে ভারতে লক্ষ্মী কেবল হিন্দুদেরই পূজিতা নন। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মেও উল্লেখ রয়েছে তাঁর। আসলে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ব্রাহ্মণ্যবাদী মতবাদ ও বৈদিক আচার থেকে সরে এসেই জন্ম এই দুই ধর্মের। কিন্তু তারা লক্ষ্মীকে ত্যাগ করতে পারেনি।

বৌদ্ধ জাতকে পাই, দুর্ভাগ্যকে দূর করতে লক্ষ্মীর আরাধনা করছেন বিপন্ন নারী-পুরুষরা। দুর্ভাগ্যের দেবী কলঙ্কিনীর কবল থেকে বাঁচাতে তাঁরই উপাসনা করতে দেখা যায় তাঁদের। আবার ‘অভিধানপ্পদীপিকা’ ও ‘সিরি-কালকন্নি’ জাতকেও দেখা মেলে দেবী লক্ষ্মীর। এছাড়াও বৌদ্ধতন্ত্রে বসুধারা নাম্নী যে দেবীর উল্লেখ পাই তিনিও সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যের দেবী। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশগুলিতে জনপ্রিয়তম দেবদেবীদের অন্যতম বসুধারা। ‘বসুধারা ধরণি’ গ্রন্থে প্রথম তাঁর উল্লেখ মেলে। পাশাপাশি বৌদ্ধ স্তূপগুলিতে যক্ষরাজ কুবেরেরও দেখা মেলে। তিনি ধনসম্পত্তির রক্ষক। সাধারণভাবে লক্ষ্মীকে চঞ্চলা বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ একস্থানে বেশিদিন থাকেন না তিনি। আবার কুবের স্থায়ী সম্পদের দেবতা। তাই লক্ষ্মীর সঙ্গে কুবেরের সম্পর্ক অতি নিবিড়। দু’জনই বৌদ্ধ ধর্মে স্থান করে নিয়েছেন।

Basudhara
বসুধারা

 

[আরও পড়ুন: মালবাজারে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বিজেপির প্রতিনিধি দল, মৃতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ]

পাশাপাশি জৈন ধর্মেও দেখা পেলে দেবী লক্ষ্মীর। তীর্থঙ্কর তথা মহাবীরের জন্মের আগে তাঁর মা স্বপ্নে অনেকগুলি শুভ জিনিসের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন দেবী শ্রী। এছাড়াও তাঁর স্বপ্নে ভেসে উঠেছিল পাত্র, রত্নের স্তূপ, নাগ, যক্ষ, ঘোড়া, হাতি, শঙ্খ, সিংহাসন, ইচ্ছাপূরণকারী গাছ।
ওই দুই ধর্মেও লক্ষ্মীর জনপ্রিয়তা থেকে এমনও অনুমান করা হয়, সম্ভবত বৈদিক যুগেরও আগে প্রচলন ছিল লক্ষ্মীর আরাধনার। যা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ঋগ্বেদ হয়ে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মেও নিজের স্থান করে নিয়েছে। আগেই বলেছি পরবর্তী সময়ে শ্রী ও লক্ষ্মী একই সঙ্গে ব্যবহৃত হলেও কালক্রমে তাঁরা পৃথক দুই দেবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

সেই দেবীই আশ্বিনের শারদ পূর্ণিমায় পূজিতা হন। লক্ষ্মীকে ঘিরে পৌরাণিক আখ্যানের পাশাপাশি লোককথাও রয়েছে। যেমন, অলক্ষ্মী বিদায়ের আখ্যান। এক রাজার কাছে মূর্তি বিক্রি করতে আসেন এক কারিগর। রাজা কথাও দেন, তাঁর কাছে যে মূর্তিই থাকুক সেটাই তিনি কিনবেন। কিন্তু তাতেই ঘটে গেল গণ্ডগোল। কেননা ওই শিল্পীর কাছে ছিল একটিই মাত্র মূর্তি। সেটি অলক্ষ্মীর। আর তাতেই তাঁর রাজ্যে দেখা দিল দুর্যোগের ঘনঘটা। শেষ পর্যন্ত সেই রাজ্যের হারানো শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে দিলেন দেবী লক্ষ্মী। তাঁকে আহ্বান করতে তিনি লক্ষ্মীপুজো করেছিলেন সেই রাজা। তবে সেই পুজো আসলে অলক্ষ্মী বিদায়। যেটা দীপাবলির সন্ধ্যাতেই সম্পন্ন হয়। প্রথমে অলক্ষ্মীকে বিদায় করে তারপর লক্ষ্মীকে আহ্বান করে গৃহিণীরা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন।

Laxmi Puja

তবে তার আগে হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। নীহাররঞ্জন রায় তার ‘বাঙালীর ইতিহাস’ বইয়ে লিখেছেন, ‘এই লক্ষ্মী কৃষি সমাজের মানস-কল্পনার সৃষ্টি; শস্য-প্রাচূর্যের এবং সমৃদ্ধির তিনি দেবী। এই লক্ষ্মীর পূজা ঘটলক্ষ্মী বা ধান্যশীর্ষপূর্ণ চিত্রাঙ্কিত ঘটের পূজা।’ তাঁর দাবি, মোটামুটি ভাবে দ্বাদশ শতক থেকেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর প্রচলন হয়। দুর্গাপুজোর বিসর্জনের বাদ্যি বেজে ওঠার সঙ্গেই অপেক্ষা শুরু হয় গৃহস্থের। বিশ্বাস, কোজাগরী রাতে ধরাধামে আবির্ভূত হন দেবী। যে ভক্ত রাত জেগে তাঁর উপাসনা করেন তিনি পান মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ। তাঁর জীবনে আসে প্রাচুর্য ও সৌভাগ্য। এই আধুনিক পৃথিবী পুরাণ ও মঙ্গলকাব্যের সময়কাল থেকে যতই দূরে সরে যাক, আজও মানুষের মনের স্থির বিশ্বাসে জ্যোৎস্নায় ভরে থাকা উঠোনে পড়ে লক্ষ্মীর শ্রীচরণ। রাত জেগে গৃহস্থ পরিবার অপেক্ষায় থাকে কখন তাঁর বাড়িতেও উপস্থিত হবেন লক্ষ্মী। জানতে চাইবেন, ”কে জেগে আছ?”

Laxmi

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ