প্রতীকী ছবি
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ক্রমশ বাড়ছে বুনো হাতির হামলা। এপ্রিলের পনেরো দিনেই সাতজনের মৃত্যু উত্তরে। তাদের মধ্যে এক সপ্তাহে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। যুতসই খাবার না-পেলেই স্কুল বাড়ি, গৃহস্থের ঘরদোর, ফসল তছনছ করে পালাচ্ছে বুনোরা। নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় ওই হামলার ঘটনা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন বনদপ্তর।
এবার অনাবৃষ্টির জেরে এপ্রিলের শুরু থেকে একদিকে যেমন উত্তরের পাহাড়-সমতলের জঙ্গল এলাকার জলাভূমি, নদী, ঝোরা শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। অন্যদিকে অগ্নিবলয় হয়ে উঠেছিল। একের পর এক জঙ্গল দাউদাউ আগুনে পুড়ে খাক হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে আতঙ্কে বন্যপ্রাণ দিশাহারা ছিল। কোথাও জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়মুখী হয়েছে। আবার কোথাও প্রাণ বাচাতে গভীর জঙ্গলে ছুটেছে। ওই সময় যেখানে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য লোকজন জঙ্গলে পা রেখেছে সেখানেই বুনো হাতি মারমুখী হয়েছে। জঙ্গলের পেট চিরে যাওয়া রাস্তাতেও আক্রমণ শেনেছে বুনোরা। যেমন, ৪ এপ্রিল বোনের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে বাইকে চেপে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে কালিম্পংয়ের শিবচু এলাকায় হাতির আক্রমণের মুখে পড়েন এক দম্পতি। মর্মান্তিক মৃত্যু হয় স্ত্রীর। আবার লোকালয়ে ঢুকে তান্ডব চালাতেও ছাড়ছে না হাতি। সম্প্রতি শিবচুর সরকারি প্রাথমিক স্কুল লণ্ডভণ্ড করে তিনটি হাতির দল। ১২ এপ্রিল বীরপাড়ার ডিমডিমা চা বাগানের তারাঞ্জু লাইনে ঘর ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে হাতি। পালিয়ে কোনও মতে রক্ষা পায় পরিবার। পরদিন ১৩ এপ্রিল আলিপুরদুয়ার জেলার পূর্ব সাতালি এলাকায় তান্ডব চালায় হাতির দল। কয়েকজন কৃষকের সুপারি ও কলা বাগান ভেঙে দেয়। এর আগে ৫ এপ্রিল আপালচাঁদ জঙ্গল এলাকায় জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির হামলাায় প্রাণ হারান এক মহিলা। পরদিন ৬ এপ্রিল ওদলাবাড়ির কাছে কাঠামবাড়ির জঙ্গলে হাতির আক্রমণে একজন প্রাণ হারায়। ঘটনার রেশ না কাটতে ৭ এপ্রিল একই জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে গিয়ে হাতির হামলায় দু’জনের মৃত্যু হলে নড়েচড়ে বসেন বন কর্তারা। শিবচুর ঘটনা নিয়ে এপ্রিল মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে হাতির হামলায় উত্তরে পাচজনের মৃত্যুর ঘটনার পর জঙ্গলে কোনও বিবাগী হাতি আক্রমণাত্মক হয়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে ছয়জনের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় হাতি মারমুখী হয়ে ওঠার ঘটনা বেশি নজরে এসেছে। এলাকাগুলো হল জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়ির কাছে কাঠামবাড়ির জঙ্গল, কালিম্পংয়ের সিবচু, জলপাইগুড়ির বাতাবাড়ি, মেটেলি, সুখানি বস্তি, মোরাঘাট, বামনডাঙা, লাটাগুড়ি, বিচাভাঙা, টুন্ডু, নাগরাকাটা, কালামাটি, বানারহাট, আলিপুরদুয়ারের দলগাঁও, বীরপাড়া, রামঝোরা, মাদারিহাট, ডিমডিমা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার হাতির ষোলটি করিডোর এলাকা এখন রীতিমতো ভয়াবহ। মারাত্মক স্পর্শকাতর এলাকা হয়ে উঠেছে মোরাঘাট। এখানে অন্তত ত্রিশটি হাতি সব সময় থাকে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল এস কে মোলে বলেন, “সীমিত ক্ষমতা নিয়ে আমরা পরিস্থিতির মোকাবিলা করছি। সাধারণ মানুষ যেন জঙ্গলে না ঢোকে সেই বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.