মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: আমফান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হয়েছে হাওড়ার বিখ্যাত বটগাছের। সেই আমফানের ফলে প্রভাব পড়ল শ্যামপুরের বিখ্যাত গ্রেটা থুনবার্গ ফরেস্টেও। ঝড়ে গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। অনেকগুলো হালকা মচকেও গিয়েছে। তাছাড়া লাঠি দিয়ে গাছগুলো খাড়া করে বাঁধা ছিল। ঝড়ে লাঠি উপড়েছে। সেই লাঠির ভারেও অনেক গাছের নুয়ে পড়ে যায়। সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি এই ফরেস্ট রাজ্যে পাইলট প্রোজেক্ট। কর্মীদের বক্তব্য কমপক্ষে ২০ শতাংশ গাছ আমফান ঘূর্ণিঝড়ে মচকে গিয়েছে।
তবে এখনও পর্যন্ত ওই মচকে যাওয়া চারাগাছগুলো নষ্ট হয়নি। কিন্তু কিছু গাছের পাতা শুকোতে শুরু করেছে। আশঙ্কা ওই গাছগুলো মরে যেতে পারে। কর্মীরা ও প্রশাসনের কর্তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে সব গাছকে বাঁচাতে। শ্যামপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সঞ্চয়ণ পান বলেন, ‘সেই অর্থে ফরেস্টের ক্ষতি কিছু হয়নি। তবে যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। গাছগুলো নুয়ে পড়ে। আমরা দ্রুত লোক লাগিয়ে সেই নুয়ে পড়া গাছগুলোকে লাঠির সঙ্গে ফের সোজা করে বেঁধে দিয়েছি। জোর কদমে পরিচর্যা করা হচ্ছে শ্যামপুরের গ্রেটা থুনবার্গ ফরেস্টের।’
হুগলি নদীর তীরে শ্যামপুর ১ নম্বর ব্লকের ডিঙাখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন শিবগঞ্জে ভাগীরথী কো-অপারেটিভ জয়েন্ট ফার্মিং সোসাইটি লিমিটেডের ১০০০ বর্গমিটার জায়গার উপর তৈরি (১০০০ বর্গ মিটার) গ্রেটা থুনবার্গ ফরেস্ট। সেখানে ৩৯টি প্রজাতির ১১ হাজারেরও বেশি চারা গাছ লাগানো হয়েছে। এটা রাজ্যে পাইলট প্রোজেক্ট। বিশেষ পদ্ধতিতে এই ফরেস্ট তৈরি করছে রাজ্য সরকার ও শ্যামপুর ১ নম্বর ব্লক ও ডিঙাখোলা গ্রাম পঞ্চায়েত। এই পদ্ধতির পোশাকি নাম মেওয়াকি পদ্ধতি। এটি একটি জাপানি প্রযুক্তি। এটাকে গাছেদের সমাজ অর্থাৎ ঘন অরণ্যও বলা যায়। ডিঙাখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শান্তিরঞ্জন মাইতি বলেন, প্রশাসন আন্তরিকভাবে অরণ্যের পরিচর্যা করছে। এছাড়া গড়চুমুক মৃগদাবে প্রায় পাঁচশোর বেশি নানা প্রজাতির গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা পরিষ্কারের কাজ করছে প্রশাসন। সঞ্চয়ণবাবু বলেন এনবিআরএফের টিম কাজ করছে। শীঘ্রই মৃগদাব পরিষ্কার হয়ে যাবে। হাওড়া জেলা পরিষদের বনভূমি কর্মাধক্ষ্য অন্তরা সাহা ও হাওড়া জেলা পরিষদের-সহ সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘মৃগদাব পরিষ্কার হয়ে গেলেই আমরা নতুন ভাবে একে সাজাব।’
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি অরণ্য নয় বরং মানুষের তৈরি ঘন অরণ্য। এখানে কম জায়গার উপর ঘন অরণ্য তৈরি করা হয়। যেখানে দু-চারটে নয়, ৬০-৭০ প্রজাতির গাছ থাকে। এখানকার গাছগুলো কলম থেকে তৈরি চারা নয়, সেই চারাগুলো বীজ থেকে তৈরি। প্রশাসনের কর্তাদের মতে এটা খুবই পরিবেশবান্ধব। এই অরণ্য তৈরির ফলে প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্রের খুব ভালো ভাবে বজায় থাকে এবং অক্সিজেনের মাত্রও বেশি বৃদ্ধি পায়। নগর বা শহরের ক্ষেত্রে এটা খুবই উপযোগী। প্রশাসনের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী দিনে বিভিন্ন জায়গায় এই পদ্ধতিতে অরণ্য বা গাছেদের সমাজ গড়ে তুলবে। প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন মানুষ যেমন সমাজের মধ্যে থেকেই সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে বা মানুষের সঠিক বৃদ্ধি হয়, তেমনি অরণ্যের মধ্যেই গাছের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে।
অরণ্যে বহু প্রজাতির গাছ একসঙ্গে থাকে। সেখানে গাছেরা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে এমনকী এর জন্য আলাদা দেখভালেরও প্রয়োজন হয় না। এছাড়া অরণ্য থেকে মানুষ বহুমুখী সুবিধা পায়। অরণ্য থেকে মানুষ যেমন কাঠ মধু পায়। তেমনি আগামী দিনে এখানে মৌমাছি চাষেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন। তাছাড়া বাস্তুতন্ত্রে বজায় রাখতে গেলে যেন পোঁকা মাকড়, পাখিরও প্রয়োজন হয়। ঘন অরণ্য থাকলে এদেরও সমাগম হয়। এই ভাবনা থেকেই রাজ্য সরকার মেওয়াকি পদ্ধতিতে গাছেদের সমাজ বা অরণ্য তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, বিগত এক দশক ধরে সামাজিক বনসৃজন করছে প্রশাসন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে অরণ্যের সুবিধা সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সামাজিক বনসৃজন থেকে সরে এসে এই গাছেদের সমাজ বা মানুষের তৈরি ঘন অরণ্য তৈরির পরিকল্পনা। আর পাইলট প্রোজেক্টটি হচ্ছে শ্যামপুর ১ নম্বর ব্লকের ডিঙাখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবগঞ্জে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.