সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাজ সহজ ছিল না। সূর্য মানেই পৃথিবীর বুকে আগুনের লক্ষ তিরের সমাহার, শক্তির সমষ্টি। আর তার গহ্বরে লুকিয়ে অগ্নিকুণ্ড। সৌরজগতের ‘রাজা’ প্রকৃত চরিত্র তুলে ধরার কাজ মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেই কঠিন আর নজিরবিহীন কাজ করে ফেলল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা (NASA)।
অতি শক্তিশালী যন্ত্র দিয়ে গত ১০ বছরের সূর্যের নানা ছবি ও ভিডিও তুলে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নক্ষত্রের সামগ্রিক বদলের একটা স্পষ্ট ধারণা দিল বিশ্ববাসীকে। শুধু তাইই নয়, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আরও চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে বলছে, এক দশকে সৌরজগতের উপর মহাজাগতিক চৌম্বক ক্ষেত্র এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে সূর্যের দুই মেরু সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ উত্তর মেরু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ মেরু উত্তর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
[আরও পড়ুন: চাঁদে শৌচাগার বানাতে নকশা চাইছে নাসা, মডেল পছন্দ হলে রয়েছে নগদ পুরস্কার]
সূর্য আসলে ঠিক কেমন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়সের ভারে তার শরীর কতটা বদলাচ্ছে, এসব জানার আগ্রহ তো আছে অনেকেরই। বিশেষত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশের। সেই আগ্রহ পূরণে সোলার ডায়নামিক অবজারভেটরি (SDO) – এই যন্ত্রের সাহায্যে নাসা সূর্যের বিভিন্ন সময়ের ছবি তুলেছে, বিভিন্ন দিক থেকে। নাসা সূত্র বলছে, High Resolution-এ মোট সাড়ে ৪২ কোটি ছবি তোলা হয়েছে সূর্যের বহিরঙ্গের। গত ১০ বছর ধরে এভাবে বিভিন্ন সময়ের ছবি এবং ভিডিও তোলার পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে – টাইম ল্যাপস। অর্থাৎ ১০ বছর সময়কালকে সংকুচিত করে SDOকে কাজে লাগানো হয়েছে। হিসেব বলছে, এই সময় সংকোচন করতে গিয়ে প্রতি ০.৭৫ সেকেন্ডে সূর্যের একেকটি ছবি তোলা হয়েছে। এরপর তা দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেছে নাসা। যাতে সূর্যের এক দশকের যাত্রা দেখানো হয়েছে মাত্র ১ ঘণ্টায়। সেটাকেই ‘টাইম ল্যাপস’ ভিডিও বলা হচ্ছে।
কাজ পুরোটাই যান্ত্রিক। সোলার ডায়নামিক অবজারভেটরি যন্ত্রের সাহায্যে সূর্যের পরিবর্তনের ছবি তোলা। কিন্তু এই যান্ত্রিকতাটুকু বাদ দিলে নাসার বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব অন্যত্র। এক দশক ধরে SDO-র তোলা গুচ্ছ গুচ্ছ ছবির প্রত্যেকটি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, অঙ্ক কষা এবং এত ছবি থেকে একটা ভিডিও তৈরি করে সাধারণের বোধগম্য করে তোলা। অসীম ধৈর্য আর পরিশ্রম না থাকলে একাজ সম্ভব হতো না। এখানেই নাসা ফের বুঝিয়ে, তার কাজের তুলনা একমাত্র সে নিজেই। তবে বিজ্ঞানী মহলের একাংশের ধারণা, এই টাইম ল্যাপস ভিডিওয় সূর্যের অনেক অজানা দিক উঠে এসেছে। ভবিষ্যতের গবেষণা ক্ষেত্রে তা বিশেষ কাজে লাগবে।