Advertisement
Advertisement
Neanderthal

৬৫ মাইল দুর্গম পথ পেরিয়ে প্রেমিকের দেখা! শিহরিত করে ৯০ হাজার বছরের প্রাচীন প্রেমকথা

নিয়ান্ডারথাল মানবীর এই প্রেমকাহিনি সত্যিই বিস্মিত করে।

Neanderthal Woman’s Walk of Love 90,000 Years Ago Between two Caves 65 Miles Apart | Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:January 22, 2021 5:31 pm
  • Updated:April 14, 2021 5:09 pm

বিশ্বদীপ দে: প্রেম ছাড়া কি দিনবদলের গান শোনানো যায়? বাংলা জীবনমুখী গানের প্রান্ত ছুঁয়ে থাকা এই প্রশ্ন আসলে সর্বজনীন। দেশকালের বেড়া ডিঙিয়ে সভ্যতার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এক অমোঘ বাতিস্তম্ভের মতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোহার শরীরেও মরচে রং ধরে। কিন্তু ভালবাসা একবার মায়াবি কিংবদন্তি হয়ে গেলে বছরের পর বছর তা মিশে থাকে বাতাসের ভিতরে। আমাদের চিরায়ত সাহিত্য ও লোকশ্রুতির ভিতরে একে একে ভেসে আসে রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, হির-রাঞ্ঝার নাম। এসবেরই মধ্যে ইতিহাসবিদরা খুঁজে পেয়েছেন এক প্রাগৈতিহাসিক প্রেমকাহিনি। বয়সের নিরিখে যার সঙ্গে সভ্যতার বাকি প্রেমকাহিনিগুলির কোনও তুলনাই হয় না।

যে কোনও রূপকথার গল্পই শুরু হয় ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম’ দিয়ে। এই প্রেমকাহিনিও তেমনই এক সময়ের। তবে তার বয়স বুঝি কল্পনারও অতীত। ৯০ হাজার বছর! হ্যাঁ, তখনও পৃথিবীর মাটিতে পা রাখেনি আজকের হোমো স্যাপিয়েন্সরা। এই গল্পের প্রধান দুই চরিত্রের একজন নিয়ান্ডারথাল (Neanderthal)। অন্যজন ডেনিসোভান (Denisovan)। আদিম মানুষের দুই ভিন্ন প্রজাতি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, কীভাবে তাদের কাহিনি অতীতের বুকে জলছাপ রেখে গেল?

Advertisement

Cave

Advertisement

[আরও পড়ুন: ব্যাকটেরিয়া বধে ব্যর্থ অ্যান্টি বায়োটিক! শত্রু খতমের নয়া ব্রহ্মাস্ত্রের হদিশ দিলেন গবেষকরা]

আসলে এই গল্পের সূত্রপাত ডেনির হাত ধরে। তেরো বছরের কিশোরীর শরীরের অবশেষ মিলেছিল এক গুহায়। তার আঙুলের হাড়ের ডিএনএ থেকে জানা যায়, মেয়েটির বাবা ডেনিসোভান আর মা নিয়ান্ডারথাল। আর এখানেই চমক। কেননা যে গুহায় ডেনিরা থাকত, সেটা ডেনিসোভানদের গুহা (Denisova Cave)। তারা ওই অঞ্চলেরই স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু সেখানে নিয়ান্ডারথাল এল কোথা থেকে? নিয়ান্ডারথালরা সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিল না। পূর্ব ইউরোপের ক্রোয়েশিয়া থেকে তারা এসেছিল সাইবেরিয়ায়। ডেনিসোভানদের গুহা থেকে ৬৫ মাইল দূরে অবস্থিতি চাগিরস্কায়া গুহাতেই বাস ছিল তাদের। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাঝের পাথুরে দূরত্ব পেরিয়েই এক নিয়ান্ডারথাল মানবী এসে পৌঁছেছিল এই গুহায়। সেই আশ্চর্য প্রণয়েরই ফসল ডেনি। একে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘ওয়াক অফ লাভ’।

কিন্তু… এই কাহিনির ভিতরে ঢুকে রয়েছে ‘কিন্তু’ও। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার বছরের মধ্যে চাগিরস্কায়া গুহায় থাকত নিয়ান্ডারথালরা। সেখানে ডেনিসোভানরা ৯০ হাজার বছর আগে ওই এলাকায় থাকত। তাহলে? টাইমলাইনই যে মিলছে না! আসলে এটাও হলফ করে বলা মুশকিল। এই খটকারও যে পালটা যুক্তি রয়েছে। প্রাচীন যুগের মানুষদের দেহ পরীক্ষা করে তাঁদের সময়কালকে চিহ্নিত করার দু’টি ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। মলিকিউলার ক্লক ও ডেটিং পদ্ধতি। এর ফলে আলাদা আলাদা সময়খণ্ড উঠে আসতে পারে। মনে করা হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা একদিন সব অনুমানকে সরিয়ে দিয়ে আসল সত্যের কাছে পৌঁছবে। তখন হয়তো এই প্রেমকাহিনিও বাতিল হয়ে যেতে পারে!

Neanderthals

[আরও পড়ুন: পৃথিবীর চেয়ে ভারী হয়েও অধিক গতিশীল! সৌরজগতের বাইরে নতুন গ্রহের সন্ধান]

এসবই বিজ্ঞানের কচকচি। রোম্যান্টিক মন তা মানতে চায় না। বরং আঁকড়ে ধরতে চায় প্রাগৈতিহাসিক প্রেমের আখ্যানটিকেই। ডেনিসোভানদের গুহার ভিতরে এমনই কত যে কাহিনির বীজ লুকিয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে আবিষ্কৃত হওয়া গুহার মধ্যে রয়েছে সুন্দর সুন্দর ব্রেসলেট, পাথরের গয়না, ম্যামথের চামড়া দিয়ে তৈরি টায়রা। এর মধ্যে কোনওটা কি ডেনির বাবা তার মাকে উপহার দিয়েছিল? ইতিহাসে তার খোঁজ নেই। তবে কল্পনাপ্রবণ মন অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতেই পারে।

আসলে যুগ যুগ ধরে মানুষ তো গল্পই খুঁজে এসেছে। আর প্রেমের গল্পের আবেদন যে কেমন, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। পৃথিবীর অধিকাংশ কিংবদন্তি প্রেমের গল্পের পরিণতিই বিয়োগান্তক। প্রশ্ন জাগে, ডেনির বাবা-মায়ের গল্পটা ঠিক কেমন ছিল? সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির দুই নরনারীর প্রেম কি মেনে নিয়েছিল তাদের প্রজাতির কেষ্টবিষ্টুরা? দু’জনের বাবা-মার অনুমতি মিলেছিল? আর ডেনি? কী হয়েছিল তার? কেন মাত্র তেরো বছরেই থেমে গিয়েছিল তার জীবন! তাকে কি কোণঠাসা করে দিয়েছিল তার সমাজ? একরত্তি মেয়েটার চোখের সামনে খুলে গিয়েছিল নিষ্ঠুর পৃথিবীর চালচিত্র?

Inside excavations

প্রশ্নগুলো যতই জেগে উঠুক, এর উত্তর কোনও দিনই মিলবে না। কালের গর্ভে তলিয়ে যাওয়া সেই প্রশ্নে কেবল অধিকার রোম্যান্টিক মনের মানুষদের। অবসরের মুহূর্তে তাদের মনের কোণে জেগে ওঠে কবেকার ফেলে আসা এক দৃশ্যপট। দুর্গম পাথুরে পথে ওই চলেছে এক নিয়ান্ডারথাল যুবতী। বহু মাইল দূরে জঙ্গলের আবহে তার অপেক্ষায় রয়েছে ডেনিসোভান প্রেমিক। কেবল পাথর নয়, সময়ের আড়াল পেরিয়েও সে এসে দাঁড়াচ্ছে আধুনিক পৃথিবীতে। যাকে ধরা যায় না। অনুভব করা যায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ