Advertisement
Advertisement

জল যন্ত্রণা রুখতে রাজ্যজুড়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নবান্নের, জারি নির্দেশিকা

পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ংকর হচ্ছে।

Plastic bags one of the major issue for Kolkata's sewage system | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Suparna Majumder
  • Posted:September 29, 2021 11:39 am
  • Updated:September 29, 2021 12:57 pm

স্টাফ রিপোর্টার: টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে শুধু মহানগর কলকাতার একাংশ নয়, শহরতলির বহু পুরসভা ও জেলার ব্যস্ত জনপদে এখনও জল জমে আছে। পুরসভাগুলির জমা জলের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করতেই রাজ্য সরকারের কাছে ধরা পড়েছে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগের যথেচ্ছ অপব্যবহার।

বস্তুত, নিকাশির ভিতরে কাদা-জলের সঙ্গে হাজার হাজার প্লাস্টিকের ব্যাগ মিশে, দলা পাকিয়ে জমাট বেঁধে ভয়ংকর বাধার প্রাচীর সৃষ্টি করায় বৃষ্টির জল আটকে যাচ্ছে। কলকাতা পুরসভার (KMC) ডিসিল্টিং মেশিন ভূগর্ভস্থ নিকাশি থেকে যে হাজার হাজার টন কাদামাটি ও ময়লা তুলছে, তারও একটা বড় অংশই হল প্লাস্টিকের ব্যাগ ও বর্জ্য। এমনকী কলকাতার জমা জল গঙ্গা ছাড়া যে ২৭টি খাল দিয়ে শহরের বাইরে যায় তার নাব্যতা কমার মূল কারণও কাদামাটির সঙ্গে বাজার থেকে নিয়ে এসে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ব্যাগ।

Advertisement
Rain Situation in Kolkata
ছবি: অরিজিৎ সাহা

এই কারণে কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত পুরসভাতেই ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে একগুচ্ছ নির্দেশনামা পাঠিয়েছে নবান্ন। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরই শেষ হচ্ছে ৭৫ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার। প্লাস্টিকের পাশাপাশি থার্মোকলের থালা-গ্লাসের সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে মঙ্গলবারই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দপ্তরে দীর্ঘ বৈঠক করেন।

Advertisement

বৈঠকের পরে পুরমন্ত্রী জানান, “প্লাস্টিক শুধু নয়, ব্যাপকহারে থার্মোকলও নিকাশি বন্ধ করে দিয়ে জলমগ্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। রাজ্যের প্রতিটি পুরসভাকে তাই বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সচেতনতা কর্মসূচি নিতে যেমন বলা হচ্ছে, তেমনই আইনি কড়াকড়ি চালুর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।” এদিন রাজ্যের সমস্ত পুরসভায় যে নিয়মাবলি পৌঁছেছে, সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আর ১২০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক বিপণনে ব্যবহার করা যাবে না।

[আরও পড়ুন: ভোর থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি, রাজ্যের একাধিক জেলায় ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস]

প্লাস্টিকের ব্যাগের পাশাপাশি পুরসভাগুলির ভূগর্ভস্থ নিকাশি কার্যত বন্ধ করে দেওয়ার নেপথ্যে যে হাজার হাজার ঠান্ডা পানীয়র বোতল, তা এদিন স্বীকার করেছেন বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়াররা। বস্তুত এই কারণে কেন্দ্রীয় সরকার এবার ‘বিদায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক’ নীতি দ্রুত কার্যকর করতে চলেছে। আগামী ২ অক্টোবর থেকে কেন্দ্র দেশজুড়ে বর্জ্য প্লাস্টিক সংগ্রহ অভিযানও শুরু করছে।

দৈনিক যে ১০,০০০ টন বর্জ্য প্লাস্টিক সারা দেশে সৃষ্টি হচ্ছে, তাকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার কর্মসূচিও নিচ্ছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরেও ‘এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্লাস্টিক ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়মাবলি এদিনই কলকাতা নগর নিগমের পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য পুরসভাতেও পাঠিয়েছে নবান্ন। কিন্তু পরিবেশ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন,‘‘নিকাশি বন্ধে প্লাস্টিক ব্যাগ সত্যিই বড় শত্রু হয়ে উঠেছে। কিন্তু করোনা (Coronavirus) কালের পর সবে পুজোর বাজার শুরু হয়েছে। গরিব হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়েই কেনাবেচা করছেন। তাই সতর্ক করলেও এক্ষুনি ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধ করতে বলতে পারব না।” কেন্দ্রীয় সরকারে যাঁরা ঠান্ডা ঘরে বসে দিল্লিতে এই সমস্ত আইন করেন তাঁরা বাস্তবের নির্মম ঘটনা জানেন না বলেও কটাক্ষ করেন পুরসভার পরিবেশ বিভাগের প্রশাসক।

Rain Water in Kolkata
ছবি: সুপর্ণা মজুমদার

এতদিন শুধুমাত্র পরিবেশ দূষণ রুখতে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু এখন ভারী বৃষ্টিতে ভূগর্ভস্থ নিকাশির পাশাপাশি ম্যানহোলের ভিতর থেকে যে কাদামাটি ও বর্জ্য উঠছে, তার একটা বড় অংশই প্লাস্টিক ব্যাগ। মূলত একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকই যে নিকাশি নালার মূল শত্রু, তা স্বীকার করছেন বিভিন্ন পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নগরায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মাইলের পর মাইল ভূগর্ভস্থ নিকাশি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু মাত্র কয়েক পয়সার ‘একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক ব্যাগ’ জলের টানে নিকাশি নালার ভিতরে ঢুকে জমাট বেঁধে ফের জলমগ্ন করছে গোটা এলাকা। তাই এবার প্রথমে ৭৫ ও পরে ১২০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে সরকার।

[আরও পড়ুন: WB By-Election: বিজেপির ‘প্ররোচনা’ এড়াতে সতর্ক তৃণমূল, ভবানীপুরের ভোটারদের বুথমুখী করাই টার্গেট]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ