Advertisement
Advertisement

Breaking News

Yuri Gagarin

ইউরি গ্যাগারিন কি সত্যিই মহাকাশে যাওয়া প্রথম মানুষ? ইতিহাসের আড়ালে সংশয়ের কাঁটা

সদ্য ৬০ বছর পূর্ণ হল গ্যাগারিনের মহাকাশবিজয়ের।

Some sources suggest that Soviet casualties existed both before and after Gagarin’s historic flight on April 12 1961 । Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 16, 2021 9:36 pm
  • Updated:April 16, 2021 9:36 pm

বিশ্বদীপ দে: ১৯৬১ সাল। ১২ এপ্রিল। অবশেষে সশরীরে মহাকাশে (Space) পৌঁছে গেল মানুষ। মহাকাশ বিজয়ের আখ্যানে রচিত হল প্রথম অধ্যায়। সেই জয়ের গর্বের সঙ্গে মিশে ছিল যুদ্ধজয়ের উল্লাসও! হ্যাঁ, যুদ্ধ। সে এক আশ্চর্য যুদ্ধ। যুদ্ধের চিরচেনা গনগনে উত্তাপের ঠিক উলটো ছবি যেন। চাপা উত্তেজনা আছে। কিন্তু তা গভীরে। উপরে উপরে কেমন এক আশ্চর্য শীতলতা। ইতিহাসের পাতায় এটাই ছিল ঠান্ডা যুদ্ধ। দুই প্রতিপক্ষ রাশিয়া (Russia) (তখন অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন (Soviet Union) ও আমেরিকা (US)। সকলেরই জানা, সেই লড়াইয়ের আঁচ কেমন করে গিয়ে পৌঁছেছিল মহাকাশেও। বিজ্ঞান, প্রযুক্তির সঙ্গে কীভাবে যেন জড়িয়ে গিয়েছিল রাজনীতিও। গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে ইউরি গ্যাগারিনকে (Yuri Gagarin) মহাকাশে পাঠিয়ে ওই লড়াইয়ের প্রথম রাউন্ডে প্রতিপক্ষকে নকআউট করে দিয়েছিল সোভিয়েত। কিন্তু এই বিজয় গৌরবের আড়ালেই লুকিয়ে আছে কত অশ্রুত আর্তনাদ, কত শ্বাসরোধী মৃত্যুর করুণ প্রতিচ্ছবি। আর রয়েছে একটি প্রশ্ন, ইউরি গ্যাগারিন কি সত্যিই প্রথম মহাকাশে পৌঁছে যাওয়া মানুষ? নাকি সত্যিটায় মিশে আছে সংশয়ের কুয়াশা?

সেই মর্মান্তিক ইতিহাসে পৌঁছনোর আগে আরেকবার ফিরে দেখা যাক মহাকাশ যুগের সেই ঠান্ডা লড়াইকে। সে এক দারুণ সময়। মহাকাশে কে ওড়াবে বিজয় পতাকা? পাঁচের দশকের শেষদিক থেকেই প্রবল হয়ে উঠেছিল সেই জিজ্ঞাসা। একেবারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দৌড়চ্ছে দুই দেশ। গ্যাগারিনের মহাকাশজয়ের একমাসের মধ্যে মহাকাশে পৌঁছলেন মার্কিন মহাকাশচারী অ্যালান শেফার্ড। একটুর জন্য মহাকাশ রেসে ‘দ্বিতীয়’ হলেন তিনি। প্রথম রাউন্ডের পরও লাগাতার সাফল্য পেতে থাকল সোভিয়েত। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন প্রথম মহিলা মহাকাশচারীর কৃতিত্ব অর্জন করলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। ১৯৬৫ সালের ১৮ মার্চ আলেক্সেই লিওনভ প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশে পায়চারি করলেন। সেই সময় সত্যিই মনে হচ্ছিল, আমেরিকার কোনও আশা নেই। একতরফা ভাবে সব সাফল্যের নুড়িপাথর ঝুলিতে ভরবে সোভিয়েত। কিন্তু দশকের একেবারে শেষদিকে এসে চন্দ্রাভিযানের তুমুল সাফল্যের আলোয় সব যেন মুছে গেল। এদিকে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার ধাক্কায় ক্রমেই যেন আমেরিকার সঙ্গে মহাকাশ-দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল সোভিয়েত ইউনিয়ন।

Advertisement

Yuri

Advertisement

[আরও পড়ুন: ৯৯ বছরে যুবরাজ হয়েই প্রয়াণ, কেন ‘রাজা’ হওয়া হল না প্রিন্স ফিলিপের?]

এই জয়-পরাজয়ের দোলাচল ছিল গোটা ছয়ের দশক জুড়েই। ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের এক অভূতপূর্ব ‘গনগনে’ পরিস্থিতি। আর এই সব উত্তেজনার আড়ালেই রয়ে গিয়েছিল করুণ মৃত্যুর জলছবি। যে কথা লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে। যে সব মৃত্যুকে নাকি চেপে দেওয়া হয়েছিল সুকৌশলে। পরাজিতদের কথা কে আর মনে রাখতে চায়? এবার সেকথাই বিস্তারে বলা যাক।

Italy Brothers

দুই ভাই অ্যাচিল্লে ও জিওভানি জুডিকা-কর্ডিগলিয়া। ইটালির বাসিন্দা। শখের রেডিও অপারেটর তাঁরা। পাঁচের দশকের শেষদিকে তাঁরা একটি স্টেশন তৈরি করেন। সোভিয়েত রেডিওর ট্রান্সমিশন ধরা পড়ত তাঁদের যন্ত্রে। একের পর এক তরঙ্গ অনুসরণ করতে থাকেন ওই দুই ভাই। আর তারপর প্রকাশ করেন চাঞ্চল্যকর ন’টি অডিও রেকর্ডিং। যার সব ক’টিতেই ছিল মহাকাশ থেকে ভেসে আসা সোভিয়েত মহাকাশচারীদের সংলাপ।
রেকর্ডিং তো নয়, যেন মৃত্যুর নাটকীয় প্রকাশ! প্রথম রেকর্ডিং ১৯৬০ সালের মে মাসের। শেষটি ১৯৬৪ সালের এপ্রিলে। এর মধ্যে চারটি রেকর্ডিং ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশযাত্রার আগের!

[আরও পড়ুন: মাকড়সার জাল থেকে বেরিয়ে এল সুর! অবাক কাণ্ড ঘটালেন বিজ্ঞানীরা]

তাহলে কি ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশে যাওয়া প্রথম মানুষ নন? আসলে তিনি পৃথিবীর প্রথম সফল মহাকাশচারী! যিনি মহাকাশে গিয়েও নির্বিঘ্নে ফিরে আসতে পেরেছিলেন। তাঁরও আগে যাঁরা পৌঁছেছিলেন, তাঁদের নাম চলে গিয়েছে অতলে। মহাকাশের হিম অন্ধকারে একাকী মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করে তাঁদের আর্তনাদ ভেসে এসেছিল পৃথিবীর বেতার তরঙ্গ বেয়ে। কিন্তু তাঁরা আর ফিরতে পারেননি। বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে জ্বলেপুড়ে গিয়েছিল তাঁদের নশ্বর শরীর। কিংবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে গিয়েছিল অনন্ত মহাশূন্যে।

Space flight

ওই অডিও রেকর্ডিংগুলির মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন ফেলেছিল এক মহিলা মহাকাশচারীর আর্তস্বর। মহাকাশে গিয়ে ফিরে আসার পরে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতেই তাঁদের মহাকাশযান ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। ভয় পেয়ে তিনি বলতে থাকেন, ”আমি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছি। এটা কি ভয়ংকর নয়? আমার সঙ্গে কথা বলো। কথা বলো…”

বলাই বাহুল্য, অ্যাচিল্লে-জিওভানিদের প্রকাশ করা অডিও রেকর্ডিংকে কোনও রকম পাত্তা দেয়নি সোভিয়েত সরকার। পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সমস্তটাই। এমনকী, ঠান্ডা যুদ্ধের শেষে যখন বহু গোপন সোভিয়েত নথি প্রকাশ করা হয়, তখনও এই সব হারিয়ে যাওয়া ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হয়ে থাকা মহাকাশচারীদের বিষয়ে কোনও রকম মুখ খোলা হয়নি। এবং সটান দাবি করা হয়, এসবই নিছক প্রপাগান্ডা। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সুকৌশলে রটানো হয়েছিল মাত্র।

কিছু সত্যি থাকে, যা ইতিহাসের আড়ালে গোপন ‘পকেটে’ লুকিয়ে থাকে। যার হদিশ হয়তো সরাসরি মেলে না। কেবল তা সত্যিমিথ্যের আড়ালে ভেসে থেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকে ইতিহাসকে। সদ্য ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশবিজয়ের হীরকজয়ন্তী পূর্ণ হল। ফের মহাকাশপ্রেমী মানুষদের চর্চায় ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়। সেই সঙ্গেই তা যেন ফিরিয়ে আনল বিতর্কিত অডিও রেকর্ডিংগুলিকেও। ইতিহাসের খোঁদলে হারিয়ে যাওয়া সেই সব আর্তনাদ, সাফল্যের আড়ালে প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়ে যাওয়া সেই সব অচেনা মানুষদের করুণ বলিদান কিছুক্ষণের জন্য আমাদের স্তব্ধ করে দেয়। যে প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনও দিন মিলবে না তার ব্যর্থ অন্বেষণটুকুই থেকে যায়। আর তৈরি হতে থাকে এক প্রতি-ইতিহাস। যা হয়তো কোনওদিনই লেখা হবে না। কিন্তু নাগাড়ে অস্বস্তি দিতে থাকবে বিজয়ীর ইতিহাসকে।

Astronaut

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ