প্রীতিকা দত্ত: কখনও আয়লা। কখনও বুলবুল। বারবার ঘূর্ণিঝড়ের রোষে পড়ছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবন (Sunderban)। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিনে ম্যানগ্রোভ ছাড়া কলকাতাকে বাঁচানো যাবে না, কথাটা এতদিনে ভালই বুঝেছে আমআদমি।
তবু কতজন আর ভাবেন সুন্দরবন নিয়ে? জলবায়ু পরিবর্তনের ভ্রূকুটিকে হারিয়ে কী করলে বাঁচবে সুন্দরবন? কতটা লবণাক্ত হয়েছে এলাকার মাতলা-সহ অন্য নদীগুলো? বঙ্গোপসাগরের জলস্তরই বা বাড়ল কতটা? বাঘ, কুমির-হানা তুচ্ছ করে কীভাবে বেঁচে আছেন ব-দ্বীপের মানুষজন? ইত্যাদি নানা প্রশ্নের জবাব পেতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ দপ্তরকে পাশে নিয়ে কাজ শুরু করল কলকাতাস্থিত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশন, নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (শিবপুর)।
সম্প্রতি দাভোসে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে সুইডেনের ১৭ বছরের গ্রেটা থুনবার্গ ভারতের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত জলবায়ু সংক্রান্ত যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তা সামাল দিতে বিজ্ঞানের সাহায্য নিন। নতুন ‘লিভিং ডেল্টা রিসার্চ হাব’ যেন গ্রেটার কথাই শুনে ফেলেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওসানোগ্রাফিক স্টাডিজের অধ্যাপক তুহিন ঘোষ বলেন, ‘লিভিং ডেল্টা রিসার্চ হাব মূলত তিনটি দেশের ব-দ্বীপ নিয়ে কাজ করছে। ভারত, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম। এখানে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের ব-দ্বীপ নিয়ে কাজ করা হবে। সুন্দরবনের গতিপ্রকৃতি, বঙ্গোপসাগরের জলের উষ্ণতা বাড়ার পাশাপাশি এই প্রজেক্টে সুন্দরবনের নদী-পুকুর-ভৌমজলের যে ডেটাবেস তৈরি করার কাজ হবে, সেটাই ভবিষ্যতে খুব সাহায্য করবে।’
আসলে সুন্দরবন প্রসঙ্গে উঠলেই পরিবেশবিদ এবং গবেষকেরা ‘ডেটাবেস’ নেই বলে অভিযোগ করেন। সুন্দরবন ‘হলোসিন ডেল্টা’। সাধারণত এই ধরনের ব-দ্বীপে পলিস্তর জমা হয়ে আয়তনে বাড়ে। সুন্দরবনের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। উলটে দিনদিন কমছে আয়তনে। ১৭৮০ সালের সরকারি রিপোর্ট বলছে, ৫৪টা দ্বীপের জঙ্গল সাফ করে তৈরি হয় সুন্দরবনের বসতি।
পশ্চিমবঙ্গের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানালেন, এখন ৩৫টার বেশি দ্বীপ খুঁজে পাওয়া যাবে না ওখানে। অর্থাৎ কিছু নদী জুড়েছে। কিছু কালের নিয়মে লুপ্ত। সে সব কোনও তথ্যই নেই। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করেছি। একটা ‘ডেটাবেস’ তৈরির কাজ জরুরি। এই ধরনের ইন্টারডিসিপ্লিনারি গবেষণা আরও হোক, এটাই চাইব।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.