Advertisement
Advertisement

Breaking News

‘ঝুলনদিকে টপকানো যাবে না’, ‘চাকদা এক্সপ্রেস’-এর অবসরের দিন আবেগে ভাসছেন বাংলাদেশের জাহানারা

ঝুলন গোস্বামীর বিদায়ী ম্যাচ ঘিরে আবেগের বিস্ফোরণ গোটা ক্রিকেট বিশ্বে।

Cant topple Jhulan Goswami, said emotional Jahanara Alam । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:September 24, 2022 7:03 pm
  • Updated:September 24, 2022 9:52 pm

কৃশানু মজুমদার: এক অদ্ভুত সমাপতন! বিষন্নতার সমস্ত মেঘ যেন জড়ো হয়েছিল ওই বিলেতের আকাশে। একদিকে লেভার কাপের পর টেনিস জগৎকে বিদায় জানিয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছেন রজার ফেডেরার (Roger Federer)। তাঁর কান্না আবেগী করে তুলছে নাদাল, জোকারদের মতো মহারথীদেরও। বহু চেষ্টা করেও চোখের জল বাঁধ মানছে না তাঁদের। 

কান্নার সেই ছোঁয়াচ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে টেনিস জগতের বাইরেও। শনিবারের পর ফেডেরারের সঙ্গেই একই ব্র্যাকেটে বাংলার ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami)। ক্রিকেটজগৎকে যিনি আলবিদা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন, লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটা খেলেই তিনি জুতোজোড়া তুলে রাখবেন। মহিলা ক্রিকেটের এই মহীরূহের প্রস্থানে শোকাচ্ছন্ন ভারত। বিশ্ব ক্রিকেটও চোখের জল ফেলছে। সেই বিষণ্ণতার ঢেউ চোখে মেখেই যেন মনকেমনের ডায়রির পাতা ওলটাচ্ছেন পদ্মাপাড়ের জোরে বোলার জাহানারা আলম (Jahanara Alam)। তিনি নিজেও তো হতে চেয়েছিলেন ঝুলনের মতোই। টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে বাংলাদেশের পেসার ফিরে যাচ্ছেন সেই ২০০৮ সালে। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘সতীর্থ যখন এভাবে কাঁদে…’, ফেডেরার-নাদালের কান্নায় আবেগে ভাসলেন বিরাট কোহলিও]

জাহানারা স্মৃতিরোমন্থন করে বলছেন, ”২০০৮ সালে আমি দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করি। সেই সময়ে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজ চলছিল। দেশের হয়ে সেটাই আমার প্রথম খেলা ছিল। আমাদের প্রথম ম্যাচটাই ছিল ভারতের সঙ্গে। ওই ম্যাচে ঝুলুদি এমন একটা ডেলিভারি করেছিল যে আমাদের ওপেনারের বেল উড়ে থার্ড ম্যান বাউন্ডারি লাইনের প্রায় কাছে এসে পড়ে। ওই দৃশ্য দেখার পর থেকে আমি ঝুলন গোস্বামীর ভক্ত হয়ে যাই।” 

Advertisement

২০ বছর ধরে সবুজ ঘাসের মাঠে দাপট দেখিয়েছেন ঝুলন। বলকে কথা বলিয়েছেন। উঠতি ক্রিকেটারদের আইডল হয়ে উঠেছেন। র‌্যাঙ্কিংয়েও তিনি শীর্ষ স্থান দখল করেছিলেন। কবির কথায়, ‘যেখান দিয়ে হেসে গেছে, হাসি তার রেখে গেছে।’ কিংবদন্তি ঝুলন প্রসঙ্গে জাহানারা বলছেন, ”২০০৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আমার টার্গেট কী? উত্তরে আমি বলেছিলাম র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে আসাই আমার লক্ষ্য। আমাকে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল, দ্বিতীয় কেন? প্রথম নয় কেন? জবাবে আমি বলেছিলাম, ঝুলন গোস্বামীকে টপকানো সম্ভব নয়। তাই আমি দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই।”

মহিলাদের ক্রিকেটে ঝুলন গোস্বামী সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। তাঁর কীর্তি বাকিদেরও অনুপ্রাণিত করে। আরও ভাল খেলার প্রেরণা জোগায়। জাহানারা এক নিশ্বাসে বলছিলেন, ”প্রথম বারের আইপিএল-এর সময়ে ঝুলুদির সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল। ঝুলুদি আমাদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলত। হ্যান্ডশেক করার সময়ে বা বাইশ গজে টুকটাক যা কথা হত, তা বাংলাতেই হত। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সময়ে শেষ বার কথা হয়েছিল ঝুলুদির সঙ্গে। আমিই ব্যাট করছিলাম। আর বোলার ছিল ঝুলুদি। আমি ওর বলে এক রান নিই। নন স্ট্রাইক এন্ডে যখন পৌঁছই, তখন বলি, ঝুলুদি তোমার বোলিংয়ে দারুণ বৈচিত্র রয়েছে। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বাউন্সার দেবে। তুমি স্লোয়ার করলে।” বোলিং রান আপের দিকে যাওয়ার আগে ঝুলন বাংলাদেশের বোলারের উদ্দেশে বলেন, ”তুই বুঝতে পেরেছিলি তাই না! সবসময়ে কি আর এক বল ব্যাটারকে করা যায় রে!”

বয়স নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব ক্রীড়াবিদকেই। কিন্তু চ্যাম্পিয়নরা বারংবার প্রমাণ করে দিয়েছেন, বয়স কেবল একটা সংখ্যা। এর বেশি কিছু নয়। জাহানারা বলছেন, ”ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা পরিবেশগত সুবিধা পায়। কিন্তু এই উপমহাদেশে তিরিশ পেরিয়ে গেলেই সবাই মনে করেন বয়স বেড়ে গিয়েছে। ভাল পারফরম্যান্স করা আর সম্ভব নয়। কিন্তু মিতালিদি আর ঝুলুদিই দেখিয়ে দিয়েছে বয়স কেবল একটা সংখ্যামাত্র। বিভিন্ন জায়গায় ওদের কথা আমি বলি। ওরা দৃষ্টান্ত। মনে মনে আমিও ভাবি, ওরা যদি পারে, তাহলে আমি কেন পারব না?” এই ভাবনা, এই উপলব্ধিই আগামিদিনে এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশের জোরে বোলারকে। 

অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর থেকে জাহানারার কাজল পরা চোখ নিয়ে চর্চা হচ্ছে। জাহানারা অবশ্য এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ক্রিকেট খেলার  শুরু থেকেই তিনি  কাজল পরেন। আইসিসি বিশ্বকাপে খেলার সময়ে বেশি করে সবার নজরে পড়েন জাহানারা। কিন্তু তিনি তো চান পারফরম্যান্স দিয়ে সবার নজর কাড়তে। নিজে বোলার বলে বোঝেন ঝুলনের লড়াই। ‘চাকদা এক্সপ্রেস’-এর শক্তি-দুর্বলতা প্রসঙ্গে জাহানারা বলছেন, ”২০০৮ সালে একটা পার্টিতে ঝুলুদির সঙ্গে একটা ছবি তুলেছিলাম। ঝুলনদি এতটাই লম্বা যে আমি ওর আন্ডার আর্মের কাছে। পরে উপলব্ধি করেছি, ওই উচ্চতার জন্যই ঝুলনদির বলের গতি এত ভাল।” জাহানারাও যে বাইশ গজে গতির ঝড় তোলার জন্য বিখ্যাত। 

ঝুলনের দীর্ঘ ২০ বছরের ক্রিকেট পরিক্রমা টানে পদ্মাপাড়ের বোলারকে। তিনি বলছিলেন, ”সাবাস মিতু সিনেমাটা আমি দেখেছি। ছবিতে ঝর্ণা ঘোষ নামে একটা চরিত্র ছিল। আমার সিনেমাটা দেখে মনে হয়েছে ওই ঝর্ণা ঘোষই হয়তো ঝুলুদি। সিনেমাতেই দেখেছি লোকাল ট্রেনে প্রায় ৮০ কিলোমিটার যাতাযাত করে ঝর্ণা ঘোষ।” প্রায় রাত থাকতে ট্রেনে উঠে ঝুলনের প্র্যাকটিসে আসার গল্প তো এখন কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। 

ঝুলনের বায়োপিক ‘চাকদা এক্সপ্রেস’ মুক্তি পাবে শীঘ্রই। প্রিয় ঝুলনদির বায়োপিকের মুক্তির অপেক্ষায় জাহানারা। তিনি বলছেন, ”সাবাশ মিতু দেখেছি। তাপসী পান্নুর অভিনয় আমার খুব ভাল লেগেছে। তবে ছবিটা দেখেছিলাম মিতালির জীবন জানার জন্য। ঠিক তেমনই ঝুলন গোস্বামীর উপর তৈরি ছবিটা দেখব ঝুলুদির জীবন পরিক্রমা জানতেই। বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আমি পছন্দ করি। আমরা একটা বিশেষ শট বা একটা বিশেষ ডেলিভারি রপ্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অনুশীলন করি। আর সেই জায়গায় তাপসী পান্নু, অনুষ্কা শর্মার মতো অভিনেত্রীরা কত সহজে সেটা ফুটিয়ে তোলে, তা দেখে মনে হয় অভিনেত্রী হিসেবে ওরা দারুণ পারদর্শী।” 

আজ শনিবারের পর ঝুলন গোস্বামী প্রাক্তন ক্রিকেটার হয়ে যাবেন। তাঁর সঙ্গে আর ২২ গজ শেয়ার করা হবে না জাহানারার। মন ভারাক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারের। দার্শনিকের মতো শোনায় জাহানারাকে, ”দিনকয়েক আগে মিতালিদি মাঠ ছেড়ে চলে গেল, ঝুলুদিও চলে যাচ্ছে। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে এটাই জীবন। ক্রিকেট ছাড়ার পরের জীবনের জন্য শুভকামনা রইল ঝুলনদির জন্য।”  

জাহানারার কথা শুনে মনে হচ্ছে, কে বলে ঝুলন গোস্বামী শুধু এবাংলার। তিনি তো গোটা বিশ্বের। তাঁর ক্রিকেট-জার্নি বাকিদের মতো অনুপ্রাণিত করে পদ্মাপাড়ের মহিলা ক্রিকেটারদেরও। করে চলবে আগামিদিনেও। মাঠ ছাড়লেও মাঠেই থেকে যাবেন ঝুলন।

[আরও পড়ুন: খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদির উপর হামলার ছক ছিল PFI-এর, বিস্ফোরক দাবি ইডির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ