Advertisement
Advertisement

Breaking News

Sachin Tendulkar

‘আমার বাড়িতে তুলিতে হাতেখড়ি’, শচীনকে নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানালেন শিল্পী সনাতন দিন্দা

চিত্রকলা, পেন্টিং নিয়ে শচীনের খুব আগ্রহ, জানাচ্ছেন সনাতন দিন্দা।

Painter Sanatan Dinda pens his experience on Sachin Tendulkar on his 50th birthday | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 23, 2023 1:53 pm
  • Updated:April 23, 2023 1:53 pm

সনাতন দিন্দা: সেটা ২০০৯ সাল। আইপিএল চলছে। হঠাৎ প্রাইভেট নম্বর থেকে ফোন। উলটোদিকে স্বয়ং শচীন তেণ্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। আবদার করে জানাল, ”তোমার আঁকা ‘যুগপুরুষ’ আমার চাই।” স্বয়ং শচীন চাইছে বলে কথা! আমি প্রায় রাতারাতি একটা ছবি তৈরি করে নিয়ে গেলাম ওঁর কাছে। সুতো, গোলাপের পাপড়ি – এই সিরিজের ছবিগুলোতে যা যা থাকে সবই দেখল খুব মন দিয়ে। তারপর ছবিটা (Painting)নিজেই হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল। শচীনের সঙ্গে পরিচয়ের শুরুটা ছবির সূত্রেই।

আর একটা দিনের গল্প। সেদিন রাখিবন্ধন। হঠাৎ দেখি, শচীনের ব্যক্তিগত নম্বর থেকে ফোন আসছে। বলল, ওর এক বন্ধু আমার একটা ছবি কিনতে চায়। এটা বলেই বেশ দুষ্টুমি করে বলল, ”আমি ওকে যে ডিসকাউন্ট দিই, তা যেন আর কাউকে না দিই।” ভাবুন! অমন বড় মানুষ, অথচ কী শিশুসুলভ!

Advertisement

[আরও পড়ুন: পাঠ্যক্রম থেকে বাদ মুঘল থেকে গান্ধীহত্যা! প্রতিবাদে নিজেরাই বই ছাপানোর হুঁশিয়ারি কেরলের]

২০১১ সালে তো আমার বাড়িতেও চলে এল। ১৭ নভেম্বর। জানাল, ”কলকাতায় এসে ঘণ্টাখানেক সময় আছে, আমি তোমার বাড়িতে যাব।” দিনটা আমার কাছে রীতিমতো স্মরণীয় হয়েই থাকবে। পাঁচতারা হোটেল থেকে চলে এল আমার ফ্ল্যাটে। দুর্দান্ত আড্ডা দিয়েছিলাম আমরা। একঘণ্টা কী করে যে পেরিয়ে গেল, কেউ যেন ঠাহরই করতে পারলাম না। আর শচীন তো আড্ডা ছেড়ে উঠতে নারাজ। বলছে, ”ঠিক আছে নাহয় ফ্লাইট মিস হবে!” আমি তো ঠিক করেই রেখেছিলাম যে, তাঁকে টেনে আনব রং-তুলি-ক্যানভাসের দুনিয়াতেও। ৩ ফুট বাই ৬ ফুটের একটা ক্যানভাস (Canvas) রেডি করে রেখেছিলাম। বললাম, ”একটা ছবি আঁকবে?” ও তো হকচকিয়ে গেল। বলল, ”আমি কী করে ছবি আঁকব?” আমি বললাম, ”চেষ্টা করেই দেখো না! তুলিটা ক্যানভাসে বোলাও, কিছু একটা তো হবে।”

Advertisement

Sachin accused casino of using morphed image for advertisement

তো ও বাধ্য ছেলের মতো সে-ই কাজ করল। তারপর আমি খানিক তুলি ধরলাম। এই করতে করতে শচীন যেন এই আঁকার আনন্দে বুঁদ হয়ে গেল। আর সে কী স্বর্গীয় হাসি তখন ওর মুখে। ওর সেই হাসিমুখের ছবিটা তোলা হয়েছিল, আছে আমার কাছে। পুরো ওই আড্ডা জুড়েই সেটা বোঝা গিয়েছিল। ও যে একজন মহান মানুষ, জগদ্বিখ্যাত লোক, সেই সব ব্যাপার যেন ও মাথাতেই রাখে না। আমাদের বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে দিব্যি খোশোমেজাজে গল্প করল। একটু গানবাজনা হচ্ছিল। ও তো প্রায় নাচতে শুরু করে দিচ্ছিল। আসলে ঘরোয়া এই পরিবেশটা ওর খুব ভালো লেগেছিল। ওকে যে কেউ বিরক্ত করছে না এই ব্যাপারটায় ও খুব আনন্দ পেয়েছে। এদিকে আমার বাড়ির চারপাশে তো লোকে লোকারণ্য। ওকে বললাম, সবাইকে ও যদি একবার দেখা দেয়। একটুও আপত্তি করল না। আমাদের বাড়ির বাচ্চাদের নাম ধরে ধরে প্রত্যেককে অটোগ্রাফ দিল। সন্দেশ এনেছিলাম, আয়েশ করে খেল। ওর বাড়ির জন্যও সন্দেশ পাঠিয়ে দিলাম। চিত্রকলা বা পেন্টিং নিয়েও ওর খুব আগ্রহ খেয়াল করেছিলাম। ভাস্কর্য নিয়েও নানা কথা জিজ্ঞেস করছিল। সেদিন দু’জনে যে পেন্টিং করেছিলাম, তাতে দু’জনেই সই করে তারিখ দিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। এমন একটা বন্ধুত্বে রাঙানো সোনালি দিন তো মনে রাখারই মতো।

[আরও পড়ুন: ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মায়ের কোলে ফিরল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে ‘উধাও’ হওয়া শিশু, গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত]

ওর যখন ৯৯টি সেঞ্চুরি হয়েছে, তখন আমি ওকে একটা শার্ট দিয়েছিলাম, সেখানে ‘টেন’ শব্দটা বদলে লেখা ছিল ‘হান্ড্রেডডুলকর’। একশো সেঞ্চুরির আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। শচীন যে কত বড় মানুষ, তা তো আমি জানি। তাই আমি ওকে খুব বেশি বিরক্ত কখনওই করিনি। তাই বোধহয় মনের যোগাযোগটা থেকেই গিয়েছে। একবার বলল, ”তুমি আমাকে নদী নিয়ে একটা স্কাল্পচার-পেন্টিং করে দাও।” ওর মেয়ের এই ধরনের ছবি নাকি খুব পছন্দ। সেবার ওর আমার গড়িয়ার বাড়িতে আসার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে কলকাতা পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তো আমি ছবিটা নিয়ে গেলাম হোটেলে। সেদিনও একসঙ্গে চা খেলাম, গল্প করলাম। আমি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আমি ওর ছেলেমানুষি যেমন দেখেছি, তেমন অধ্যাবসায়ও দেখেছি। একজন মানুষকে শিখরে পৌঁছতে গেলে যে কী অধ্যাবসায় করতে হয়, তা আমি শচীনকে না-দেখলে বোঝা যায় না।

Why Sachin Tendulkar is still the 'God of cricket'

আমার মনে হয়, ক্রিকেটে তো ও শিখরে আছে, কিন্তু একজন মানুষ হিসাবে উত্তরণের যে পর্যায়ে ও নিজেকে উন্নীত করেছে, সেদিকেও বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। কারও সঙ্গে কারোর তুলনা করতে চাই না, তবে একটা কথাই বলতে চাই, আমার কাছে শচীন এই শতাব্দীর এক বিস্ময়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ