Advertisement
Advertisement

Breaking News

ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি, কাঁদছে জন্মভূমি, দেশের হাল দেখে চোখে জল শ্রীলঙ্কার ‘বাঙালি’ কোচের

ঝরঝরে বাংলা ভাষায় কথা বলে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন এই শ্রীলঙ্কান কোচ।

Former Sri Lanka football coach Pakir Ali laments economic crisis | Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:April 8, 2022 2:34 pm
  • Updated:April 9, 2022 12:51 am

কৃশানু মজুমদার: ঝরঝরে বাংলায় কথা বলতে পারেন তিনি। অতীতে এদেশের ক্লাবে কোচিংও করিয়ে গিয়েছেন। সেই পাকির আলি (Pakir Ali) কলম্বো থেকে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে বললেন, ”এত সুন্দর একটা দেশ শ্রীলঙ্কা। সেই দেশের অবস্থা এরকম হয়ে গেল কেন, সেটাই তো বুঝতে পারছে না কেউ।”

পাকিরের দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। দেউলিয়া অবস্থা দ্বীপরাষ্ট্রের। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি-খাদ্যসংকট। অন্যদিকে চিনের কাছে বিপুল ঋণের বোঝা। সেই জালে জড়িয়ে পড়ে গভীর সমস্যায় শ্রীলঙ্কা। সেদেশের মানুষ পথে নেমেছেন। প্রতিবাদ মিছিলে নেমেছেন পাকিরও। আবেগের বাষ্প গলায় জড়িয়ে পাকির বলছিলেন, ”এই তো কয়েকদিন আগেও আমরা প্রতিবাদ মিছিলে নেমেছি। এত সুন্দর একটা দেশের অবস্থা এরকম হয়ে গেল কেন, সেটাই তো বোধগম্য হচ্ছে না। রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসছে। সর্বস্তরের মানুষের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। টাকা যখন আছে, তখন জিনিসপত্র নেই। আবার জিনিসপত্র যখন আছে, তখন টাকা নেই। দেশের অবস্থা এতটাই হতশ্রী যে বলে বোঝানো যাবে না।” কথাগুলো বলার সময়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের কোচ। শ্রীলঙ্কার মানুষের ব্যথা, বেদনা, যন্ত্রণা, কষ্টের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিল পাকিরের কণ্ঠে। তাঁর মুখে বাংলা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার নন, তিনি এই বঙ্গেরই মানুষ।  

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘১৬তলা থেকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি’, প্রাক্তন সতীর্থের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক চাহাল]

বাংলা ভাষা নিয়ে কত বিতর্ক! বাংলা মাধ্যম বনাম ইংরেজি মাধ্যম নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। অথচ ভিনদেশি এক কোচ বলছেন, ”বাংলা বড় মিষ্টি ভাষা। একবার শিখলে মনে থেকে যায়। সহজে ভোলা যায় না।” কিন্তু কীভাবে তিনি এত ভাল বাংলা শিখলেন? হাসতে হাসতে পাকির বলছিলেন, ”বাধ্য হয়ে আমাকে বাংলা শিখতে হয়েছে। সে এক দারুণ ঘটনা। বলতে পারেন খিদে মেটানোর জন্যই বাংলা শিখতে হয়েছিল।”  

Advertisement

কোচিংয়ে মগ্ন পাকির। 

নস্ট্যালজিক পাকির আলি টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে বলতে শুরু করেন, ”১৯৮১ সালে আবাহনীর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে খেলতে গিয়েছিলাম। তখন ডিসেম্বর মাস। প্রবল ঠাণ্ডা। আবাহনীর ক্যাম্পও হচ্ছিল না। আমরা দু-চার জন ফুটবলার কেবল ছিলাম ক্যাম্পে। আমাদের রান্না বান্না করে দিতেন কয়েকজন রাঁধুনি। এদিকে আমি বাংলা জানি না। ইংরেজি জানি। আবার ওখানকার রাঁধুনিরা বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষা বোঝেন না। একদিন খেতে গিয়ে আমি সেই রাঁধুনিকে জিজ্ঞাসা করি এটা কি চিকেন? কিন্তু সেই রাঁধুনি চিকেন শব্দের অর্থই বুঝছিলেন না। আমাকে তিনি পালটা বলে বসলেন, এটা তো মুরগি। আমি আবার মুরগি শব্দের অর্থ বুঝি না। পরে মুরগি যেভাবে ডাকে, মুখ দিয়ে ঠিক সেই ভাবে শব্দ করে দেখালাম। তখন সেই রাঁধুনি জানালেন যে সেটাই চিকেন। তখন থেকেই স্থির করি বাংলা ভাষা শিখতে হবে।”

যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ। বাংলা শিখলেন শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পাকির। এখনও তিনি নাগাড়ে বাংলা বলে যেতে পারেন। তবে লিখতে পারেন না। পাকির বলছিলেন, ”বাংলা আর শ্রীলঙ্কার ভাষার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। ফলে আমার বাংলা শিখতে সমস্যা হয়নি। আমি যেখানেই যেতাম, সেখানকার সংস্কৃতি রপ্ত করার চেষ্টা করতাম। এটাই আমার হ্যাবিট।”

আবাহনী ক্রীড়াচক্রে খেলেছেন প্রায় ৯ বছর। তার আগে গোয়ায় ভাস্কো ক্লাবে খেলেছেন। রোভার্স কাপে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলার সময়ে নজরে পড়েছিলেন তৎকালীন সবুজ-মেরুন কোচ অরুণ ঘোষের। পদ্মাপারের দেশের ক্লাবে দীর্ঘসময় কোচিং করিয়েছেন। ভারত,শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও মলদ্বীপে খেলেছেন এবং কোচিংও করেছেন। বছর দুয়েক আগেও বাংলাদেশ পুলিশ দলকে কোচিং করিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। প্রায় দশ বছর আগে এদেশের ক্লাব চিরাগ ইউনাইটেডের রিমোট কন্ট্রোল হাতে ছিল তাঁর। শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের কোচ ছিলেন দু’ বছর। এখন তিনি ক্লাব খুঁজছেন। 

ভবিষ্যতের ফুটবলার তৈরি করায় দক্ষ পাকির। 

১২ তারিখ এএফসি কাপের (AFC Cup) প্রি কোয়ালিফাইং ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) সামনে পাকির আলির দেশের ক্লাব ব্লুস্টার এসসি। জুয়ান ফেরান্দোর দল তৈরি হচ্ছে। অন্য দিকে ব্লুস্টারের কোচ, ফুটবলাররা গতকাল রাতে দেশে ফিরেছেন। পাকির বলছেন, ”শক্তির নিরিখে বিচার করলে এটিকে মোহনবাগান অনেক এগিয়ে। শ্রীলঙ্কার ফুটবল এখন এগোচ্ছে। ভারতের মতো এখনও কম্পিটিশন নেই শ্রীলঙ্কার ফুটবলে। ভারতের ক্লাবগুলোর শক্তি অনেক বেশি। এটিকে মোহনবাগান খুবই শক্তিশালী দল। তবে ব্লুস্টারও লড়াই করবে বলেই আমার বিশ্বাস।”

জাতীয় দলে পাকিরের অধীনে খেলেছেন এমন কয়েকজন ফুটবলার রয়েছেন এই ব্লুস্টার দলে। ১২ তারিখ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যখন এটিকে মোহনবাগান নামবে ব্লুস্টারের বিরুদ্ধে তখন টিভির পর্দায় চোখ রাখবেন পাকির। খুঁজবেন তাঁর শিষ্যদের। ফিরে যাবেন পুরনো দিনে। এই বিশালাকায় স্টেডিয়ামে একদা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দল সাজিয়েছিলেন পাকির। সেই ম্যাচের স্মৃতি আজও মনে রয়েছে তাঁর। বলছিলেন, ”আমরা মোহনবাগানের কাছে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিলাম। সেটা ছিল আই লিগে আমাদের দ্বিতীয় ম্যাচ।” কে বলে ফুটবলে শুধু হার-জিতই থাকে! ফুটবল তো অনেক কিছুই ফিরিয়ে দেয়। অনেক কিছু শেখায়ও। সবুজ ঘাসের মাঠ একজনকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। পাকির আলিই তার বড় প্রমাণ। 

[আরও পড়ুন: কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন কুম্বলে, ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য বিনোদ রাইয়ের বইয়ে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ