Advertisement
Advertisement
FIFA World Cup 2022

বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েও খেলেনি ভারত, শুধু বুটের অভাব নয়, নেপথ্যে ছিল আরও বড় কারণ!

ফিফাকে একেবারে শেষ মুহূর্তে 'না' করে দেয় এআইএফএফ।

Here is Why India does not play World Cup, here lies the reason। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 9, 2022 5:24 pm
  • Updated:December 9, 2022 8:08 pm

বিশ্বদীপ দে: ফুটবল জগতের আনন্দযজ্ঞে ‘নিমন্ত্রণ’ পেয়েছিল ভারতও। কিন্তু সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেনি সদ্য স্বাধীন দেশ। এই আপসোসের ইতিহাস প্রতিবারই ফিরে আসে বিশ্বকাপের সময়। এবারও কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) কাউন্ট ডাউন শুরু হতে না হতেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রতিবারই শোনা যায়, বুট পরে খেলার অভ্যাস না থাকাতেই নাকি ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ (World Cup) থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল ভারত। কিন্তু সত্য়িই কি তাই? বিষয়টা এমন নিছক সরল নয়।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেই বিশ্বকাপের আবহকে বুঝে ওঠা কঠিন। ভারত তখন সদ্য স্বাধীন একটা দেশ। গোটা বিশ্বেরই ছবিটা এখনকার থেকে আলাদা। কেননা মাত্র বছর পাঁচেক হল শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তার ‘আফটার শক’ বিদ্যমান পুরোদস্তুর। চিরঞ্জীবের ‘বিশ্বকাপ ফুটবল’ বইয়ে পাচ্ছি ‘১৯৩৮-এ ফ্রান্সের পর আবার দেখা হল ১৯৫০-এর ব্রাজিলে (Brazil)।… ১৯৫০-এ বিশ্বকাপকে অনেকেই বলতে লাগলেন জুল রিমে ট্রফির খেলা।’ সুতরাং বোঝা যাচ্ছে বিশ্বকাপ তখনও আজকের দিনের মতো কৌলিন্য পায়নি। অলিম্পিকের পাশাপাশি ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ হিসেবে ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধকেও চিহ্নিত করা শুরু হয়নি। কেননা ততদিন পর্যন্ত বিশ্বকাপ হয়েছে মাত্র তিনবার। তারপর বিশ্বযুদ্ধ এসে সব ঘেঁটে দিয়েছে। এহেন টালমাটাল সময়ে ব্রাজিলে আয়োজিত হল চতুর্থ বিশ্বকাপ। চিরঞ্জীব লিখছেন ‘১৯৫০-এর বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনে একটু দ্বিধা দেখা গেল, তবে ফুটবল নিয়ে এমন উত্তেজনা বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম।’

Advertisement
1950 World Cup
ব্রাজিল বিশ্বকাপের পোস্টার

[আরও পড়ুন: ‘মেসি সেরা ছন্দে রয়েছে, তাই আর্জেন্টিনাই আমার ফেভারিট’, বলছেন কার্লোস ভালদেরামা]

উত্তেজনা থাকলে হবে কী, মন কষাকষি, দলাদলি ও নাম প্রত্যাহারের ধাক্কায় চাপে পড়ে গেল আয়োজক দেশ। স্কটল্যান্ড, তুরস্ক এবং ভারত। প্রতিযোগিতার মূল পর্বে খেলার আমন্ত্রণ পেয়েও শেষ মুহূর্তে নাম তুলে নিয়েছিল এই তিন দেশ। ফলে ষোলো দলের বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত খেলেছিল মাত্র ১৩টি দেশ। ভারত সেই অর্থে এশিয়া থেকে ‘ফার্স্ট চয়েস’ ছিল না। জানা যাচ্ছে, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া ও বর্মা নাম তুলে নেওয়ায় ভারতের কাছে সুযোগ চলে আসে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর অব্যবহিত আগেই ভারত জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সম্ভব ছিল না।

Advertisement

কিন্তু কেন? কেন ভারত রাজি হয়নি খেলতে? এবিষয়ে সবচেয়ে প্রচলিত থিয়োরি হল তখনও ভারতীয় ফুটবলাররা খালি পায়েই খেলতে অভ্যস্ত। বুট পরে খেলতে চাননি তাঁরা। কিন্তু এই থিয়োরিকে নাকচ করে দিয়েছিলেন শৈলেন মান্না। তৎকালীন ভারত অধিনায়ক জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিশ্বকাপে না খেলতে চাওয়ার কারণ এটা ছিল না।

1948 Olympic Indian Football World Cup
১৯৪৮ অলিম্পিকের ভারতীয় ফুটবল দল

অনেকে বলেন, সুদূর ব্রাজিলে খেলতে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য ভারতীয় দলের ছিল না। বলা হয়, সরকারি ভাবে ভারতের তরফে এমনটাই নাকি জানানো হয়েছিল খেলতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে। কিন্তু এই থিয়োরিও সেই অর্থে টেকে না। কেননা ফিফার অফার ছিল দলের ভ্রমণের সমস্ত খরচ বহন করার।

[আরও পড়ুন: নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে আজ নামছে আর্জেন্টিনা, মেসিকে পাহারায় রাখবেন ভ্যান গল]

এমনও শোনা যায় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন এরপর যে বিবৃতি দিয়েছিল সেখানে তুলে ধরা হয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে কর্মকর্তাদের বিরোধের বিষয়টি। দল নির্বাচন নিয়ে মতানৈক্য থেকেই এই বিরোধ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই থিয়োরিও ততটা জোরালো থাকেনি। এতদিন পেরিয়ে আসার পরে মনে করা হয়, আসল কারণ ছিল অন্য। আসলে অলিম্পিকের মতো গুরুত্ব বিশ্বকাপকে দিতে চায়নি ভারত। আর সেই কারণেই ব্রাজিল যেতে রাজি হয়নি তারা।

এর ঠিক দু’বছর আগে, ১৯৪৮ সালে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিল ভারত। একমাত্র ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয়। তখনও অবশ্য খালি পায়ে খেলায় বারণ ছিল না। কিন্তু সেই বছরের শেষ দিকেই বুট পরে খেলা বাধ্যতামূলক করে ফিফা। ফলে শেষ পর্যন্ত নানাবিধ কারণেই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েও পিছিয়ে আসে এআইএফএফ। কিন্তু আসল কারণ সম্ভবত বিশ্বকাপকে গুরুত্ব দিতে না চাওয়াই। এরপর কেটে গিয়েছে সাতটা দশক। আর সুযোগ আসেনি। কেবল দীর্ঘ হয়েছে অপেক্ষা আর দীর্ঘশ্বাস।

Sailen Manna
শৈলেন মান্নাকে সম্মানিত করছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

তবে বিশ্বকাপে না খেললেও ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত গোটা ফুটবল বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিল ভারত। ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগ সেটাই। সইদ আবদুল রহিমের কোচিংয়ে এশিয়ার অন্যতম দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শৈলেন মান্নারা। ১৯৫১ সালে এশিয়ান গেমসে ১-০ গোলে ইরানকে হারিয়ে সোনা জেতে ভারত। সেই শুরু। যদি ১৯৫২ সালের অলিম্পিকে জবরদস্ত ঠান্ডায় মানিয়ে না নিতে পেরে যুগোস্লাভিয়ার কাছে ১০-১ গোলে পর্যদুস্ত হতে হয়েছিল। ১৯৫৪ সালের এশিয়ান গেমসেও পৌছতে পারেনি নকআউটে পর্বে। কিন্তু এরপরই ১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে দুরন্ত খেলে চতুর্থ স্থান দখল করে ভারত। অল্পের জন্য মিস হয় সোনা।

ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এভাবেই শক্তিশালী দলগুলিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল ভারত। কাজেই ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে খেললে ভারত যে কোনও রূপকথা তৈরি করতে পারত না তা বলা যায় না। আর সেই কীর্তিও রচিত হত কোনও বাঙালি খেলোয়াড়ের নেতৃত্বেই। কিন্তু ইতিহাসে ‘যদি’র কোনও স্থান নেই। তাই এখন দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপানের মতো এশীয় দেশের সাফল্যের নজির দেখতে দেখতে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কোনও পথই আর অবশিষ্ট নেই ভারতের সামনে। তবে আগামিদিনে কখনও নিশ্চয়ই সুযোগ আসবে। বিশ্ব ফুটবল মঞ্চের মূল আসরে অবতীর্ণ হবে ভারতও। আপাতত তা স্বপ্নই। যার গায়ে লেগে রয়েছে ইতিহাসের সোনালি দীর্ঘশ্বাস। মনে হতে থাকে, ইস… যদি…

India take on Hong Kong in AFC Asian Cup Qualifier
এই সময়ের ভারতীয় দল

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ