Advertisement
Advertisement

Breaking News

Mohammedan Sporting Club

আঁধার পেরিয়ে আলোয় মহামেডান, প্রথমবার আইএসএলে ৩ প্রধান, কলকাতা ফের ফুটবলের মক্কা

সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা চ্যাম্পিয়ন মহামেডানের।

Mohammedan Sporting Club creates history

ইতিহাস গড়ল মহামেডান।

Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:April 6, 2024 9:23 pm
  • Updated:April 6, 2024 9:35 pm

কৃশানু মজুমদার: কলকাতা থেকে শিলংয়ের দূরত্ব কত? গুগল সার্চ ইঞ্জিন বলবে হাজার কিলোমিটারের সামান্য কিছু বেশি। তবে যে জবাব পাওয়া যাবে না তা হল, কতটা স্বপ্নে হাঁটলে তবে নিয়নের স্রোতে ভাসা যায়!

কলকাতা থেকে প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরের শিলংয়ে শনিসন্ধ্যায় সত্যি সত্যি নিয়নের আলোর স্রোতে ভাসছে মহামেডান স্পোর্টিং (Mohammedan Sporting)। গোটা দেশের নজরে আবার রেড রোডের ধারের ক্লাব। শিলংয়ের মায়াবী সন্ধ্যার পরে সাদা-কালো রং আরও উজ্জ্বল। সাদা-কালো রংও যে হাজার ওয়াটের দ্যুতি ছড়াতে পারে, তা দেখিয়ে দিল পুনরুজ্জীবিত শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব। 

Advertisement

অথচ একটা সময়ে দিগভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল তারা। সাফল্য নেই, স্পনসর নেই, অন্তর্দ্বন্দ্ব, অর্থের অভাব, প্লেয়ারদের বেতন দিতে না পারা, কোচ বিতাড়ন–নেই নেই-এর স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল রেড রোডের ধারের ক্লাবটি। মহামেডান মানেই হতাশার ছবি। মহামেডান মানেই হয়ে গিয়েছিল মহেঞ্জোদারো! 

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘অ্যায়সা মউকা ফির কাহা মিলেগা’, গান গেয়ে মাঠের পুরনো তিক্ততা ভুলছেন কোহলি]

মিথের পর্যায়ে যেতে বসা এমন সব ধারণাকে আজ গঙ্গার জলেই ভাসিয়ে দিলেন মেসির দেশের অ্যালেক্সিজ, হন্ডুরাসের এডি, মণিপুরের ডেভিড, কেরলের জাসিম, রাশিয়ার কোচ আন্দ্রে চেরনিশভ।

ঐতিহ্যে, আড়ম্বরে, কৌলিন্যে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মতোই একসময়ে গর্বের দুনিয়ার বাসিন্দা ছিল মহামেডান স্পোর্টিং। স্বাধীনতার আগে টানা পাঁচবার কলকাতা লিগ জয়, বিদেশের মাটিতে প্ৰথম ভারতীয় দল হিসেবে ট্রফি জয়, একই সিজনে ১০০ গোল করা, এরকম আরও অসংখ্য নজির লেখা রয়েছে মহামেডানের শরীরে। একের পর এক দুর্লঙ্ঘ্য কীর্তির শিখর ছুঁয়েছে মহামেডান। বিপুল সংখ্যক আবেগী সমর্থক তাদের গর্ব।

কিন্তু গত কয়েক দশকে ইস্ট-মোহনের গ্ল্যামারের ঝলকে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল মহামেডান স্পোর্টিং। মহামেডান হয়ে পড়েছিল অবহেলিত। সংবাদমাধ্যমের পাতায় কমতে থাকে সাদা-কালো শিবিরের খবর। মহামেডান মানেই ছিল বিতর্ক আর বিতর্ক। ট্রফি ঢুকত না ক্লাবে। খেলতে নামলে হারই হয়ে উঠেছিল দস্তুর। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান যেখানে কলকাতা লিগ জিতত ফি বছর, সেখানে বহু পিছিয়ে পড়েছিল সাদা-কালো ব্রিগেড। আই লিগ থেকে নেমে গিয়েছিল, একবার এক সাংবাদিক মহামেডান স্পোর্টিং মাঠে গিয়ে বলেই ফেলেছিলেন, ”এই ক্লাবের যা অবস্থা তাতে অজগর সাপও বেরিয়ে পড়তে পারে।”

গত কয়েক বছরে বহিরঙ্গে অনেক পরিবর্তন হয়েছে মহামেডানের। তাঁবু আগের থেকেও ঝাঁ চকচকে হয়েছে। সাফল্যও এসেছে। স্পনসর আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে ক্লাব নিয়ে। তারই প্রতিফলন পড়েছে এবারের আই লিগে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট দেখিয়েছেন চেরনিশভের ছেলেরা।

কলকাতা ফুটবলের গর্ব তিন প্রধান। মহামেডান কীভাবে যেন হয়ে গিয়েছিল তৃতীয় শক্তি। প্রথমও নয়, দ্বিতীয়ও নয়। একেবারে তৃতীয়। মহামেডান-মোহনবাগান বা মহামেডান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচও হারিয়েছিল ডার্বির তকমা। হয়ে গিয়েছিল মিনি ডার্বি। তা নিয়ে সাদা-কালো কর্তাদের উষ্মা কম ছিল না।

আজকের পর থেকে কলকাতার ফুটবল যেন পূর্ণতা পেল। আনন্দনগরী সত্যি সত্যি ফুটবলের মক্কায় পর্যবসিত হল। আগামী বছর থেকে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হবে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডান স্পোর্টিং। একই শহরের তিনটি ক্লাব খেলবে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগ-আইএসএল। অন্য রাজ্য সম্ভ্রমের চোখে দেখবে বাংলার ফুটবলকে।

একসময়ে দেশের ফুটবলের মানচিত্রে বাংলারই দাপট ছিল। জাতীয় দলে বাংলা এবং বাঙালি ফুটবলারেরই সংখ্যাধিক্য ছিল। কিন্তু কালের নিয়মে জাতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা কমতে থাকে। জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলে একটা সময় পর্যন্ত দীর্ঘদিন সাফল্য ছিল না বাংলার ক্লাবের। সময় বদলাতে চলেছে। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে নেমে পড়েছে আগেই। বাকি ছিল মহামেডান। প্রহর গুনছিল তারা। এবার ফুটবলের মূলস্রোতে সাদা-কালো শিবিরও। 

[আরও পড়ুন: জাদেজার আউটের আবেদন প্রত্যাহার, ‘বিশ্বকাপে কোহলি থাকলে কী করতে’, প্রশ্ন প্রাক্তন তারকার]

অতনু ভট্টাচার্যের মতো সাদা-কালো শিবিরের প্রাক্তন গোলকিপার মহামেডানের এই দুর্দান্ত সাফল্যের পরে আবেগপ্রবণ। বলছেন, ”দুর্দান্ত সাফল্য বললেও কম বলা হবে। আমি বলব ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের থেকেও মহামেডান স্পোর্টিংয়ের কৃতিত্ব অনেক বেশি। রীতিমতো লড়াই করে আইএসএল খেলার ছাড়পত্র পেল মহামেডান।”

ইস্ট-মোহনের প্রবল জনসমর্থনের কথা ভেবেই টনক নড়েছিল আইএসএলের কর্তাদের। ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি-ও দিতে হয়েছিল দুই প্রধানকে। সেই জায়গায় চেরনিশভের ছেলেরা রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে, প্রতিপক্ষকে মাটি ধরিয়ে, দাপটের সঙ্গে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএলের গ্রহে পা রাখছে।

মহামেডান স্পোর্টিংয়ের জার্সি চাপিয়ে একসময়ে ঘাম ঝরিয়েছেন সাবির আলি। কোচ হিসেবেও তাঁর হাতে ছিল দলের রিমোট কন্ট্রোল। সেই সাবির আলি বলছেন, ”বাংলার ফুটবল হারিয়ে গিয়েছে, এমন সব কথা শুনতাম। মহামেডান জেতায়, তা ভুল প্রমাণ হল। তবে এখানে থেমে গেলেই হবে না। এগিয়ে যেতে হবে। আইএসএল আরও কঠিন মঞ্চ। সেখানে ভালো খেলতে হবে। আমি দলের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।”

মহামেডানের মুকুটে আরও একটি পালক যোগ হওয়ার দিনে নিঃশব্দেই ময়দানি ফুটবলের সঙ্গে নাড়ির যোগ ছিন্ন হতে চলেছে আই লিগেরও। ইস্ট-মোহন এখন আর আই লিগের প্রতিনিধি নয়। কলকাতার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে এতদিন ছিল মহামেডান। এবার তবে কে? সেই উত্তর অবশ্য সময়ের গর্ভে।

শনিবারের এই সাফল্যের পরে কলকাতা ফুটবল ইতিহাসের মোহনায়। আই লিগ নয়, এবার তিন প্রধানেরই সংসার ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। বহু বছর পর কলকাতা আবার ফুটবলের মক্কা।

[আরও পড়ুন: কংগ্রেসের ইস্তেহারে থাইল্যান্ডের ছবি! বিজেপি বলল, ‘ওটাই তো রাহুলের প্রিয় জায়গা’]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ