Advertisement
Advertisement

Breaking News

Virat Kohli

অসম্ভবকে সম্ভব করার ১৫ বছর, অনুপ্রেরণার আরেক নাম বিরাট কোহলি

এই ১৫ বছরে কত রেকর্ড ভেঙেছেন, কত রেকর্ড গড়েছেন কোহলি, তার ইয়ত্তা নেই।

Virat Kohli completes 15 stunning years in international cricket arena । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:August 18, 2023 3:21 pm
  • Updated:August 18, 2023 9:34 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একসময়ে আমরা বলতাম, ”আমাদের একজন শচীন তেণ্ডুলকর আছেন।” সেই আমরাই এখন বলি, ”আমাদের একজন বিরাট কোহলি আছেন।”

শচীন ব্যাট হাতে ক্রিজে দাঁড়ানো মানেই ব্যাকগ্রাউন্ডে একসময়ে বাজতো, ”খেলছে শচীন, খেলছে শচীন, মারছে শচীন ছয়, খেলছে শচীন, খেলছে শচীন, মারছে শচীন চার।”

Advertisement

দেশের মানুষের অনন্ত চাপ বুকে নিয়ে বিরাট কোহলি ব্যাট হাতে দাঁড়ালে গোটা দেশের অদৃশ্য রিং টোন এখন, ”বন্দে মাতরম।” দেশের শ্বাস-প্রশ্বাসে এখন বিরাট কোহলি। তাঁকে দেখে, তাঁর ‘গাণ্ডীব’ ঘোরানো দেখে আমাদের গাইতে ইচ্ছা করে, ”তুই হেসে উঠলে সূর্য লজ্জা পায়, আলোর মুকুটখানা তোকেই পরাতে চায়।” 

Advertisement

Virat Kohli will face Shivnarine Chanderpaul's son Tagenarine and set to join Sachin Tendulkar in an elite list

বিরাটের চতুর্দিকে এখন আলোর বৃত্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পনেরো বছরের পরিক্রমা তাঁর চারপাশে তৈরি করে দিয়েছে আলোর বলয়। দিল্লির ওই রাগী, মাথা গরম করা যুবক এখন দেশের হৃদয়। জন গণ মনের অধিনায়ক। বড় কোনও বাজি জিততে, দেশের এক ও একমাত্র অস্ত্র যে এখন কোহলিই। আধুনিককালের মিডাস রাজা যা ধরেছেন, তাতেই সোনা ফলিয়েছেন। শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর নামের এক নক্ষত্রের পিছনে ধাওয়া করছেন তিনি। তাঁর কক্ষপথের কাছে পোঁছনোর চেষ্টা করছেন নিরলসভাবে। 

[আরও পড়ুন: পশুখাদ্য মামলায় জামিনের বিরোধিতা, লালুকে ফের জেলে পাঠাতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে CBI]

অস্ট্রেলিয়ার এক প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার একসময়ে বলেছিলেন, ”কোহলিকে ব্যাটিং করতে দেখে আমার শচীনের কথা মনে পড়ে যায়।” ছোট্ট কোহলির মনের গহিনে সেই কবে থেকেই তো বসে রয়েছে শচীনের বিগ্রহ। তিন বছরের ছোট্ট এক ছেলেকে বল ছুড়ে দিতেন বাবা। আর ছেলেটা প্লাস্টিকের ব্যাট দিয়ে সজোরে মারত। তখন কি আর কেউ ভেবেছিল এ ছেলের জন্যই একদিন দেশের রিংটোন হবে,”বিরাট কোহলি খেললে ভারত জেতে।”

১৯৯৮ সালের শারজা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মরণবাঁচন ম্যাচ ভারতের। জাতীয় দলের কোচ অংশুমান গায়কোয়াড় টিম মিটিংয়ে বলে উঠলেন, ”একজন কাউকে বড় রান করতেই হবে।” দলের খর্বকায় মারাঠী বললেন, ”চিন্তা করবেন না স্যর, আমি সেঞ্চুরি করব।” ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করে তবেই থেমেছিলেন শচীন। 

মারাঠীর খেলা বাবার সঙ্গে বসে দেখেছিল ছোট্ট সেই ছেলেটা। কী জাদু কে জানে মারাঠীর খেলায়! ওই বাচ্চা ছেলেটার পৃথিবী বদলে গেল এক নিমেষে। তার চিন্তাভাবনায় ঢুকে গেল ক্রিকেট। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে শুধুই ক্রিকেট।
দিল্লির ছোট্ট গলিতে ক্রিকেট খেলত বাচ্চা ছেলেটা। পাড়ার বড়দের সঙ্গে খেলতে একটুও ভয় পেত না। জোরে শট মারত। বলের আঘাতে কত বাড়ির কত জানালা ভেঙেছে তার ইয়ত্তা নেই। বয়স্ক ছেলেগুলো পালিয়ে যেত বকা খাওয়ার ভয়ে। কিন্তু বাচ্চা ছেলেটা ক্রিকেটকে এতটাই ভালবাসত যে স্টাম্প ছেড়ে, ব্যাট ফেলে রেখে পালাতে পারত না। সে যে পালিয়ে যাওয়ার ছেলেই নয়। পড়শিদের কাছে ধরা পড়ে যেত। বকুনি জুটত। তবুও ক্রিকেট ব্যাট ছাড়ত না। ওটাই যে ওর প্রাণের আরাম। 

Ravi Shastri fires massive Virat Kohli warning to Australia before Border-Gavaskar Trophy
উইকেটের অন্য প্রান্ত থেকে একের পর এক উইকেট চলে যেতে থাকে এখন। দমে যায় না ছেলেটা। সবাই চলে যেতে পারে আউট হয়ে, বিরাট কোহলি আউট হতে পারেন না। ওঁর আউট হতে নেই। গোটা দেশের হৃদকম্প বিরাট কোহলি।
বাবা একদিন ছেলেকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন অ্যাকাডেমিতে। তখন ন’বছর বয়স হবে। ওর থেকে বয়সে বড় ছেলেগুলোর সঙ্গে সমানে যুঝে যেত ছেলেটা। একদিন একটা বল এসে বুকে লাগল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। বুকে কালসিটে পড়ল। মা এসে তার কোচকে বলল, ”ওর বয়সি ছেলেদের সঙ্গে খেলান আমার ছোট ছেলেটাকে।” কোচ বুঝলেন মায়ের কথা। কিন্তু বেঁকে বসল ছেলেটাই। বলল, ”প্লিজ স্যর আমাকে বড়দের সঙ্গে খেলতে দিন। আমার সমবয়সিরা তো আমাকে আউটই করতে পারে না। ওদের সঙ্গে খেলে কী হবে?” 

[আরও পড়ুন: বাস্তবের ‘বব বিশ্বাস’, বাড়ির দরজা খুলতেই বিহারের সাংবাদিককে গুলি দুষ্কৃতীদের]

বিরাট কোহলি এখন ব্যাট করতে নামলে আউট হতে চান না। দেশের মানুষের প্রত্যাশার পাহাড়সমান চাপ নিয়ে রোজ ঘুম থেকে ওঠেন। ব্যাট করতে যান। কোহলি জানেন, নিজের দিনে কেউই তাঁকে আউট করতে পারবে না।
বাবার ছিল ব্যবসা। অত্যধিক চাপে, স্ট্রেসে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। ছোট ছোট স্ট্রোক হত মস্তিষ্কে। বাঁ দিকটা অসাড় হয়ে গিয়েছিল বাবার। ছেলেটা তখন মাটির সঙ্গে কথা বলে। রঞ্জি ট্রফির খেলা দিল্লি-কর্ণাটকের মধ্যে। দিনের শেষে অপরাজিত ছিল ছেলেটা। পরের দিন আবার ব্যাট করতে নামতে হবে। কিন্তু গভীরে রাতে ছেলেটার ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড বাবা জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন। ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্বও থেমে গেল।
পরের দিন খেলতে নামল ছেলেটা। আউট হয়ে গেল। কোচ বলছিলেন, ”আমি তো তোর বাবা রে। আমি তো রইলাম তোর সঙ্গে।” ছেলেটা কেঁদেই চলেছে। কোচ ভাবলেন বাবাকে হারানোর শোকে বুঝি কাঁদছে ছাত্র। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটা বলল, ”স্যর আমি আউট ছিলাম না। আম্পায়ার আমাকে ভুল আউট দিয়েছেন। বল আগে আমার ব্যাটে লেগেছিল। পরে প্যাডে।” কোচ তো সব শুনে অবাক। যার পিতৃশোকে কাঁদা উচিত সে কিনা কাঁদছে ভুল আউট দেওয়ায়। 

Virat

বিরাট কোহলিকে কেউ কি কাঁদতে দেখেছেন? এই তো গত বছরের কথা। সেদিন গোটা বিশ্ব দেখল একার হাতে পাকিস্তানকে হারানোর পরে কাঁদছেন কোহলি। মেলবোর্নে সাররিয়ালিস্ট ছবি। আকাশের দিকে তর্জনী তুলে চোখ বন্ধ করে কী যেন বলছেন কোহলি। হয়তো দূর আকাশে বাবাকে খুঁজছেন। বাবার সঙ্গে কথা বলছেন। কোহলি এখনও মনে করেন, বাবা রয়ে গিয়েছেন তাঁর সঙ্গেই।

যারা ব্যর্থ হয়েও বারবার ফিরে আসে, তারাই তো চ্যাম্পিয়ন। অনভ্যস্ত জায়গা, ঊষর জমিতেও যাঁরা ফুল ফোটান, তাঁরাই সত্যিকারের তারকা। অথচ সেই তারকা, সেই চ্যাম্পিয়নই কত একা। তিনিও আমার-আপনার মতোই রক্ত মাংসের মানুষ। রান না পেলে তিনিও গুমড়ে মরেন।

শতরান করলে যে জাতি, যে দেশ তাঁর নামে জয়ধ্বনি দেয়, যে সমাজ মনে করে, ‘কিং ক্যান ডু নো রং’, রান না পেলে, সেঞ্চুরি না এলে দেখা যায় বিপরীত ছবি। নখদাঁত বের করে সেই দেশ-সেই জাতি রক্তাক্ত করে কোহলিকে। দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করে ছেলেটা। 

Hong Kong cricketers gift special jersey to Virat Kohli, he reacts

বিজ্ঞাপনের ভাষায়, জীবনের ওঠাপড়া যেন গায়ে না লাগে। কোহলি শরীরে মেখেছিলেন সেই ওঠাপড়া। মালয়েশিয়ায় ভারত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতল। দিল্লির ছেলেটা ক্যাপ্টেন। আকাশে ওড়ার পালা। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ২০ লাখ টাকায় কিনে নিল তাঁকে। আইপিএলের প্রথম সংস্করণ। সেই সময়ে ২০ লাখ টাকা অনেক। ছেলেটা অন্য পৃথিবীতে পৌঁছে গেল। সে তখন উড়ছে। হাতে টাকা, বিশ্বজয়ী দলের অধিনায়ক, সামনে স্বপ্নের সব তারকারা। খেলার শেষে পার্টি হত। যৌবনের তেজ তখন। পার্টি, পার্টি আর পার্টিতে মেতে উঠল বাবা হারানো ছেলেটা। ওর কোচ বলতেন, ”বড্ড বেশি পার্টি করছ তুমি।” ছেলেটা গুরুকে এড়িয়ে যেত। 

[আরও পড়ুন: কতটা ম্যাচ ফিট? রোহিত-দ্রাবিড়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন? বড় মন্তব্য করলেন বুমরাহ]

পর পর আইপিএলে ব্যর্থ হচ্ছিল সে। সবাই বলছিল বখে যাওয়া, উচ্ছৃঙ্খল ছেলে। একদিন বাড়িতে স্নান করার সময়ে আয়নায় চোখ পড়ল। অন্তরাত্মা বলে উঠল, ”এরকম বেঢপ চেহারা নিয়ে তুমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে।” চোখ খুলে গেল ওর। ভিতরে ঝড় উঠল। নিজেকে নিজেই বলে উঠল, ”আর এভাবে নয়।”

পরের দিন থেকে শুরু হল কঠিন সাধনা। ছেলেটার ফিটনেস এখন মনে করিয়ে দেয় সেই পুরনো বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন–পড়শির ঈর্ষা, গৃহস্থের গর্ব। ওই কঠিন অনুশীলনের ফলে ৬-৮ কেজি ওজন ঝরেছিল। বিরাট কোহলি বলতেন, ”মাঠে মনে হত আমি উড়ছি। নিজেকে অনেক হাল্কা লাগত।”
২০১১ সালে ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। শচীনকে কাঁধে তুলে নিল ছেলেটা। অকপটে বললেন, ”শচীন তেণ্ডুলকর হ্যাজ ক্যারিড দ্য বার্ডেন অফ দ্য নেশন ফর ২১ ইয়ার্স। ইট ইজ টাইম উই ক্যারিড হিম অন আওয়ার শোল্ডার্স।”
চার বছর পরে এই ছেলেটার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে ছিল দেশ। জেতালে এই ছেলেটাই পারবে। এমন বিশ্বাস জন্মেছিল দেশবাসীর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল ভারত। ছেলেটার ব্যাট বোবা থেকে গেল। গ্যালারিতে সেদিন ছিল ওর প্রেমিকা অনুষ্কা শর্মা। দেশ হেরে যাওয়ায় সমর্থকদের রাগ গিয়ে পড়ল ডাকসাইটে সুন্দরী অভিনেত্রীর উপরে। সবাই বলে উঠল, ”তুমি অপয়া। তোমার জন্যই বিরাট রান পায়নি। দেশ হেরেছে তুমি ছিলে বলে।” ছেলেটা ভাবল এ কেমন বিচার! যাঁর সঙ্গে খেলার কোনও সম্পর্কই নেই, তাঁকে কিনা আগুনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে! কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরণ ঘটাল ছেলেটা। 

২০১৯ বিশ্বকাপও ঘরে এল না ছেলেটার নেতৃত্বে। ভারত ছিটকে গেল সেমিফাইনালেই। গোটা দেশ ফের গর্জে উঠল, ”দ্বিপাক্ষিক সিরিজে রাজা, বিশ্বকাপে ফকির।” দিন এগোল। ছেলেটার ব্যাটে সেঞ্চুরি নেই। সেঞ্চুরির রাস্তা ভুলে গিয়েছে সে। দেশের আকাশবাতাসে অনুরণন, ”ব্যর্থ, তুমি ব্যর্থ। তোমার ব্যাটে রান নেই..সেঞ্চুরি নেই..তুমি বিরাট কোহলি, তোমার কাছ থেকে পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর চাই না। একশো, পারলে দুশো কর..তারও বেশি হলে আরও ভাল।”

সমালোচনা, নিন্দার ধার না ধরে এগিয়ে চলেছেন কোহলি। রবিঠাকুরের কথায়, ”যেখান দিয়ে হেসে গেছে, হাসি তার রেখে গেছে।” বিরাট কোহলি সব অর্থেই ব্যতিক্রমী। কেরিয়ারের গোড়াতেই বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছিলেন। আবির্ভাবেই চ্যাম্পিয়ন। দীর্ঘ ক্রিকেট জার্নিতে কোহলি নিশ্চয় বুঝতে পেরে গিয়েছেন, তারকা হওয়ার যন্ত্রণা। ক্রিকেট তাঁকে দিয়েছে সব কিছু। তিনিও ফিরে দিচ্ছেন। দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পনেরো বছর পার করে কোহলি এখন ভারতীয় ক্রিকেটের বনস্পতি। ফুল দিচ্ছেন, ফল দিচ্ছেন। তাঁর স্নিগ্ধ ছায়ায় ভারতীয় ক্রিকেট। 

এগিয়ে আসছে এবারের বিশ্বকাপ। মহানায়করা ফুরিয়ে যাওয়ার আগে, নিবে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো জ্বলে ওঠেন। দেশের আশা, আমার আশা, আমাদের প্রত্যাশা, আরও একটা বিরাট পর্ব দেখা যাবে দেশের মাঠে হতে চলা বিশ্বকাপে। বিরাট কোহলির জন্য দেশের হৃদয় এখন থেকেই গাইছে, ”রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে।” 

[আরও পড়ুন: ‘ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা খুব কঠিন’, সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক অশ্বিন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ