BREAKING NEWS

১৮ চৈত্র  ১৪২৯  শনিবার ১ এপ্রিল ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

জীবিত অবস্থাতেই মৃত ঘোষণা করা হয় আলেকজান্ডারকে? মৃত্যুর পরেও পচন ধরেনি দেহে!

Published by: Biswadip Dey |    Posted: November 4, 2022 5:09 pm|    Updated: November 4, 2022 5:15 pm

Alexander The Great and the mystery of his death। Sangbad Pratidin

বিশ্বদীপ দে: তাঁর মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছর। কিন্তু আজও ইতিহাস ও জনশ্রুতিতে তিনি বিশ্বজয়ী বীর। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটকে (Alexander The Great) নিয়ে চর্চা আজও শেষ হয়নি। তাঁর অসামান্য উত্থান, বিশ্বজয়ের স্বপ্ন, ভারত আক্রমণ- একের পর এক অধ্যায় নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। তবে আলেকজান্ডারের মৃত্যুরহস্য বোধহয় বাকি সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মাত্র ৩২ বছর বয়সে প্রয়াত সম্রাটের মৃত্যুতে হত্যার চক্রান্তও খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। আবার অনেকের মতে, সাধারণ অসুখেই ১২ দিন ভুগে চলে যেতে হয়েছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ যোদ্ধাকে। কিন্তু মৃত্যুর পর নাকি টানা ৬ দিন সেই দেহে কোনও পচন ধরেনি! এ এক আশ্চর্য রহস্য।

ঠিক কীভাবে মারা গিয়েছিলেন আলেকজান্ডার? সত্য়িই কি তাঁর মৃতদেহে পচন ধরেনি? ইতিহাসবিদ জাস্টিন ও কার্টিয়াসের মতে হেলিবার ও স্ট্রিকনাইন বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল তাঁকে। খোদ গ্রিসের (Greece) ভাইসরয়ের ছেলে নাকি ছিলেন এই চক্রান্তের পিছনে। সেই বিষ খচ্চরের খুরে করে লুকিয়ে আনা হয়েছিল এমনও জানা যায়। পরে পানীয়র মধ্যে তা মিশিয়ে দেওয়া হয়। আবার এমন মতামতও রয়েছে, ম্যালেরিয়া কিংবা টাইফয়েডে ভুগেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।

Alexander

[আরও পড়ুন: সার্বভৌমত্বে আঘাত! চিন-পাকিস্তান করিডর নিয়ে তোপ ভারতের]

আসলে এত আকস্মিক ভাবে আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়েছিল, তাই নানা রকম সংশয় ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এহেন নানা থিয়োরির মধ্যে একেবারে নতুন একটি দাবি উঠে আসে ২০১৮ সাল নাগাদ। নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিন স্কুল অফ মেডিসিনের প্রবীণ অধ্যাপক ড. ক্যাথরিন হলের দাবি, এক আশ্চর্য অসুখে আক্রান্ত হয়েছিলেন আলেকজান্ডার। যার নাম গুলিয়ানি বার সিনড্রোম।

ঠিক কী হয় এই অসুখে? সারা শরীরে পক্ষাঘাত হয়ে যায়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসও চলে খুব ক্ষীণগতিতে। সেই যুগের যে চিকিৎসা পদ্ধতি, তাতে সেই শ্বাসকে চিহ্নিত করাই মুশকিল। কেননা নাড়ি দেখার যে পদ্ধতি তা তখনও অধরা। ফলে একেবারে স্থবির হয়ে যাওয়া দোর্দণ্ডপ্রতাপ সম্রাটকে দেখে ‘মৃত’ বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক। আর সেই যুক্তিতেই ৬ দিন ধরে তাঁর দেহ অবিকৃত থাকার যুক্তিটিও পরিষ্কার হয়। সম্ভবত ওই ক’দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরই আলেকজান্ডারের ‘প্রকৃত’ মৃত্যু হয়। হল এবিষয়ে বলতে গিয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছেন, ”আলেকজান্ডারের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী সেই বিষয়ে আমি নতুন করে আলোকপাত করতে চাই। ইতিহাস বইয়ে যা লেখা রয়েছে তা এবার বদলে ফেলার সময় এসেছে।”

Alexander

[আরও পড়ুন: এসটিএফের বড়সড় সাফল্য, কলকাতায় গুলি ও বন্দুক-সহ গ্রেপ্তার কুখ্যাত দুষ্কৃতী]

ঠিক কী হয়েছিল? খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে ৩২ বছরের আলেকজান্ডার এসে পৌঁছন ব্যাবিলনে (আজকের দিনে যা ইরাকের অংশ)। সেখানে রাতভর মদ্যপান করেন তিনি। পরের দিনও ‘পার্টি’ চলে। এরপরই আচমকা জ্বরে পড়ে যান সম্রাট। সেই সঙ্গে পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা। যেন কেউ ছুরি মেরেছে। তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে। অথচ মদ গলায় ঢাললেও তৃষ্ণার নিবৃত্তি হচ্ছে না। এভাবে চলতে চলতেই কথা বলা, নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। ঠিক ১২ দিন পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করলেও দেখা যায় আলেকজান্ডারের দেহে কোনও পচন ধরেনি। দেহ রয়েছে একেবারে অবিকৃত। এমন দৃশ্য দেখে সকলেই অবাক হয়ে যান। গ্রিক দার্শনিক প্লুটার্কের লেখা রয়েছে, মৃত্যুর পর ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও দেখা যায় দেহ অবিকৃত। সেই সময় সম্রাটের অনুরাগীদের বদ্ধমূল ধারণা হয়, আলেকজান্ডার মানুষ নন, তিনি আসলে ঈশ্বরের অবতার। তার অনুরাগীর সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। বহু মানুষ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজার প্রতাপের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাঁকে ঘিরে এমনিতেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ একটা ইমেজ। মৃত্যুর পরের অবিকৃতি তাই অনেকের কাছেই বিস্ময়কর বলে মনে হয়নি। বরং রীতিমতো সাড়া পড়ে যায়।

Alexander

তবে ৬ দিনের পর থেকে দেহটি পচতে শুরু করে। তখন সেই দেহটি রাখা হয় মানুষের আকৃতির সোনার তৈরি কফিনে। সেটাকে আবার ঢোকানো হয় আরেকটি স্বর্ণখচিত বাক্সে। এমনকী কফিনবাহী গাড়িটিতেও বহু নকশা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সব বৈভবের মধ্যে জেগেছিল এই প্রশ্ন। কেন অবিকৃত ছিল আলেকজান্ডারের দেহটি?

ইতিহাস আসলে এত দূরের কাহিনি যে সমস্ত চিহ্নকে জড়ো করেই আমরা সম্ভাবনাগুলি ঝালিয়ে নিতে পারি। তারপর এর মধ্যে সবচেয়ে মজবুত যুক্তিটিকেই বেছে নেওয়া হয়। সেই হিসেবে আলেকজান্ডারের প্রকৃতই ওই অসুখ হয়েছিল কিনা তা বলা দুষ্কর। কিন্তু গুলিয়ানি বার সিনড্রোমের লক্ষণগুলি দিয়েই বোধহয় প্রায় সপ্তাহখানেক একটি মৃতদেহের অবিকৃত থাকার রহস্যকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তাই এই যুক্তিকেই সবচেয়ে জোরাল বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিহাসে এমন মৃত্যুরহস্য অবশ্য আরও রয়েছে। সে তুতেনখামেন হোক বা ক্লিওপেট্রা কিংবা মারাঠা যোদ্ধা বাজিরাও, বহু ক্ষেত্রেই এমন রহস্য রয়ে গিয়েছে। যে রহস্যভেদ সম্ভব নয়। কেবল কার্যকারণ বিচার করে, সূত্র ধরে ধরে সত্যের কাছে পৌঁছনোর প্রয়াস করা যায় মাত্র।

Alexander

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে