Advertisement
Advertisement

Breaking News

করোনামুক্ত স্পেনের শহর

মৃত্যুপুরীর মাঝে স্বর্গরাজ্য, জানেন কোন জাদুবলে স্পেনের এই শহরকে ছুঁতে পারেনি করোনা?

সঠিক সময়ে উচিত সিদ্ধান্ত নিয়েই এই অসাধ্যসাধন, বলছেন বাসিন্দারা।

Corona virus could not even touch this hilltop town of Southern Spain
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 4, 2020 11:30 am
  • Updated:April 4, 2020 11:30 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৃত্যুপুরীর মাঝে এ যেন একটুকরো স্বর্গরাজ্য। কোনও আতঙ্ক নেই, দুশ্চিন্তা নেই। সবাই এখানে সুরক্ষিত। জীবন যে পথে চলছিল, সে পথেই চলছে আজও। মহামারি
নোভেল করোনা ভাইরাস গোটা দেশকে ছারখার করে দিলেও স্পেনের এই শহরকে ছুঁতে পর্যন্ত পারেনি। পাহাড়ঘেরা ছবির মতো সুন্দর স্পেনের সেই জাহারা দে লা সিয়েরা নামের শহরটি দুর্যোগের
মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যেন বলতে চাইছে – আমি অমর…। সেই স্বর্গরাজ্যের গল্প শোনা যাক আজ।

Zahara-town
শহরের নাম জাহারা দে লা সিয়েরা

স্পেনের দক্ষিণাংশের জাহারা দে লা সিয়েরা শহরটি প্রায় দুর্গের মতো। এর ভৌগলিক অবস্থান নিজেকের বিচ্ছিন্ন করে রাখার পক্ষে প্রাকৃতিকভাবেই সুবিধাজনক। পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট বাড়ির
মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব। নিচে নামলেই নীলচে হ্রদ। বাসিন্দার সংখ্যা মেরেকেটে ১৪০০। এই শহর নিজেই যেন একটা পৃথিবী। বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ৫ টি প্রবেশদ্বার রয়েছে জাহারা শহরে।
গত ১৪ মার্চ, স্পেনে নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সতর্কবার্তা পেয়েই এখানকার মেয়র সান্তিয়োগো গ্যালভান ৫টি প্রবেশদ্বারের চারটিতেই কার্যত তালা লাগিয়ে দেন। প্রায় বিচ্ছিন্ন করে
দেন নিজের শহর জাহারা দে লা সিয়েরাকে। আর শহরবাসীকে নামিয়ে দেন সাফাইকাজে। প্রত্যেকটি গাড়ি, গাড়ির টায়ার থেকে শুরু করে রাস্তা, বাড়ি সব প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। একটি
প্রবেশদ্বারের চেকপয়েন্টে মাত্র একজন নিরাপত্তারক্ষীয়। তাঁর পরনে সুরক্ষা পোশাক। কোনও সংক্রমণ ধারেকাছে ঘেঁষার উপায় নেই। মেয়রের কথায়, “চেকপয়েন্ট দিয়ে এমন কোনও গাড়ি শহরের
ভিতরে আসছে না, যা ঠিকমতো ডিসইনফেক্ট করা নেই। আমরা নিজেদের এবং প্রতিবেশী শহরগুলিকে নিরাপদে রাখতে এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় চার মাসের বৃষ্টি, করোনা আতঙ্কের মাঝেই বানভাসি পূর্ব স্পেন]

আর যে বাসিন্দারা দায়িত্ব নিয়ে নিজেরাই নিজেদের নিরাপদে রাখার কাজে নেমেছেন, তাঁদের সকলের কাছেই রয়েছে সুরক্ষার সরঞ্জাম। নিজেদের কাজ থেকে সময় বের করেই তাঁরা বাড়ি আর রাস্তা সাফ করছেন। তারও আবার রুটিন বেঁধে দিয়েছেন মেয়র। প্রতি সোম আর বৃহস্পতিবার ১০জন করে বাসিন্দা শহরের সমস্ত মল, বিল্ডিং, রাস্তা পরিষ্কার করবেন। পেশায় কৃষক, আন্তোনিও আতিয়েঞ্জা নিজের ট্রাক্টর নিয়ে স্প্রে করেন শহরের রাস্তায়। দুই মহিলাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, শহরের প্রবীণদের বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় খাবার আর ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার। দিনের মধ্যে ১১ ঘণ্টা তাঁরা সেই কাজই করছেন। বয়স্কদের যাতে বাড়ি থেকে না বেরতে হয়, তার জন্যই এই পদক্ষেপ। অক্সি রাসকন নামে এক বাসিন্দা বলছেন, “আমরা খুব খুশি, চিন্তা নেই। জানি, এখানে সবাই মিলে নিরাপদে থাকব। আসলে আমাদের মেয়র ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: নমাজ পড়তে ভিড় করাচির রাস্তায়, হঠাতে গিয়ে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ]

ছোট্ট পদক্ষেপ, শুধু বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের সিংহভাগ পথ বন্ধ করে দেওয়া। আর তার প্রভূত সাফল্য পেল জাহারা দে লা সিয়েরা। গোটা দেশে করোনা ভাইরাসের ছোবলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি, আক্রান্ত আরও কত বেশি। চিকিৎসকরা পর্যন্ত সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, সবাইকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে জাহারায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা স্রেফ শূন্য। সময়মতো উচিত সিদ্ধান্ত নিয়েই এই ছোট্ট শহর বড়দের শিখিয়ে দিল। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সঠিক সময়ে কাজ করলে শত্রু যতই শক্তিশালী হোক, রুখে দেওয়া সম্ভব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ