সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই সরগরম আন্তর্জাতিক রাজনীতি। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার-সহ একাধিক দেশ জড়িয়ে গিয়েছে এই বিষয়ে। এমনকী উত্তাল হয়েছে রাষ্ট্রসংঘও। অবশেষে কি মিটতে চলেছে রোহিঙ্গা সমস্যা? ইঙ্গিত কিন্তু তেমনটাই। প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে সই করল মায়ানমার। আগামী দুই মাসের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে এই প্রক্রিয়া। বৃহস্পতিবার মায়ানমারের রাজধানী নেপিদো’তে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলির বৈঠক হয়। তারপরই সই হয় এই চুক্তিতে। সই করেন হাসান মাহমুদ আলি ও মায়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ের।
গত ২৫ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমার সশস্ত্র বাহিনী অভিযান চালায়। এরপর প্রাণভয়ে ৬ লক্ষ ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশের ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের নানা দেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এরপর রোহিঙ্গাদের প্রত্যার্পণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে গত বুধবার দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সমঝোতা চুক্তির যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি চূড়ান্ত না হয়নি সেগুলি নিয়েও আলোচনা হয়। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত আসা রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে, নাকি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লক্ষ রোহিঙ্গার সবাইকে ফেরত পাঠানো হবে? যদিও চুক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু এখনও প্রকাশিত হয়নি।
এই প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলি বলেন, ‘এটি রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রথম পদক্ষেপ। মায়ানমারের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তারা রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব ফেরত নিতে প্রস্তুত। নেপিদো’তে রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণ নিয়ে এটি তৃতীয় উদ্যোগ। এর আগে ১৯৭৮ সালে দুই দেশ চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির অধীনে দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গা ছয় মাসের মধ্যে ফেরত যায়। পরে ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা চুক্তি হয়, যার পর ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ছত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা মায়ানমারে ফেরত যায়।’ এদিন দুপুরে মায়ানমারের রাজধানী নেপিদো’তে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আশা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী ১০ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো যাবে। রোহিঙ্গাদের ফেরতের ইস্যু ছাড়াও নাফ নদীর সীমানা রেখা নিয়ে আরও একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা জানিয়েছেন মাহমুদ আলি। ঢাকায় বিদেশমন্ত্রকের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, দু’পক্ষের মধ্যেই খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন দু’দেশের আধিকারিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.