সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা সংক্রমণের দৌলতে সারা বিশ্ব গত কয়েক মাসে নানা বিচিত্র ছবি দেখেছে। তার মধ্যে রয়েছে ফ্যাশনেবল মাস্কও। কিন্তু এবার দেখা মিলল বেশ অদ্ভুতদর্শন কফিনের। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া, ইকুয়ডরে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের কফিন। কোথাও হাসপাতালের শয্যাকে কফিনের রূপ দেওয়া হচ্ছে, কোথাও বা কার্ডবোর্ড দিয়ে কফিন তৈরির উদ্যোগ চলছে।
গত মাস পাঁচেকের বিশ্বজোড়া করোনা মানচিত্রে সবচেয়ে বড় জায়গাটি আমেরিকা দখল করলেও বিশেষ আলোচনা হচ্ছে না দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশটাকে নিয়ে। প্রধানত তৃতীয় বিশ্বের দেশের আধিক্য থাকা দক্ষিণ আমেরিকাতেও কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু তা-ই নয়, যে ছবি প্রকাশ্যে আসছে তা চমকে দেওয়ার মতো। কলম্বিয়ার নানা অঞ্চলে করোনা আক্রান্ত রোগীতে এখন ছেয়ে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে রোগীদের কবর দিতে পর্যাপ্ত কফিন অমিল দেশজুড়ে।
[আরও পড়ুন: সম্প্রীতির নিদর্শন, ইদের নমাজের জন্য চার্চের দরজা খুলল জার্মানি]
গত দু’ মাস গোটা কলম্বিয়াই কোয়ারান্টাইন পালন করে এবার তার শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা তেমন না বাড়লেও এখন অবস্থা এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জায়গা মিলছে না অন্ত্যেষ্টি স্থলগুলোতেও। কফিনের জোগান বজায় রাখতে যেমন হাসপাতালের শয্যাকে কফিন বানানোর উদ্যোগ চলছে তেমন আরেক ব্যবসায়ী কার্ডবোর্ডের কফিন বানানোর ভাবনাও ভেবে ফেলেছেন। এবিসি ডিসপ্লে নামের এক স্থানীয় বিজ্ঞাপন সংস্থার প্রধান রোডোলফো গোমেজ জানিয়েছেন, “ইকুয়েডরে কী হচ্ছে সে তো আমরা দেখতে পাচ্ছি। লোকে পরিবারের সদস্যদের দেহ রাস্তায় বের করে দিচ্ছে। মহামারীর কারণে অন্ত্যেষ্টি পর্যন্ত ঠিক করে করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা এমন বিছানা তৈরি করার পরিকল্পনা করেছি যা কফিনে রূপান্তরিত করা যাবে।”
[আরও পড়ুন: আশঙ্কাই সত্যি, রাশিয়াকে ছাপিয়ে বিশ্বে করোনা সংক্রমণের নতুন কেন্দ্রস্থল ব্রাজিল]
এই বিছানাগুলিতে ধাতব রেলিং দেওয়া থাকছে, থাকছে চাকা এবং ব্রেক। প্রয়োজনে ওঠানো নামানো করা যায়। এক-একটি শয্যা ১৫০ কিলো পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারবে। এটি বায়ো ডিগ্রেডেবল অর্থাৎ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারে এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি এই শয্যাগুলোর দাম ৯২ থেকে ১৩২ মার্কিন ডলার। এমনকী, এই ধরনের শয্যা যা কফিনে বদলে ফেলা যাবে তাতে রোগী বহন করলে মৃতের আত্মীয়-পরিজনদের সংক্রমণের আশঙ্কাও কম হবে বলে জানিয়েছেন গোমেজ।
রোগীর মৃত্যু হলে সহজেই এই বিছানার মধ্যে দেহকে মুড়ে ফেলে কফিনবন্দি করে ফেলা যাবে। গোমেজের বোগোটার কারখানায় ইতিমধ্যে মাসে তিন হাজার কফিন-বেড তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়ে গিয়েছে। এমনকী, এই বেড যাঁরা তৈরি করছেন তাঁরাও কোনও রকম সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে দূরে থেকেই কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন গোমেজ। উৎপাদিত প্রথম বেড-কফিনটি দান করা হবে লেতিসিয়া শহরের হাসপাতালে। পেরু, চিলি, মেক্সিকো, এমনকী আমেরিকার সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করার কাজ সেরে ফেলছেন এই উদ্ভাবনাকারী। তবে রোগশয্যায় শুয়ে রোগী ভবিষ্যতের কফিনের কথা ভেবে কতটা স্বচ্ছন্দবোধ করবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।