Advertisement
Advertisement

Breaking News

তাপমাত্রা মাইনাস ৬৫ ডিগ্রি, আমেরিকায় ফিরল তুষার যুগ!

‘ড্রাস্টিক টেম্পারেচার ড্রপ’-এর জেরে ইতিমধ্যেই অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন।

Polar vortex pushes America back to Ice Age
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:January 31, 2019 8:32 am
  • Updated:January 31, 2019 8:32 am

সংঘমিত্রা চৌধুরি, নিউ ইয়র্ক: এত বছর ধরে রয়েছি স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দেশে। কিন্তু এই পরিস্থিতির সাক্ষী আগে কখনও হইনি। লং আইল্যান্ডে আমার পাড়া-পড়শিদের মধ্যে কেউ বলছেন ‘ঐতিহাসিক’, কেউ বলছেন ‘অভূতপূর্ব’। কিন্তু আমার একটাই কথা মনে হচ্ছে। ‘আইস এজ’! মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে আস্ত তুষার যুগ দেখছি। থুড়ি! তুষার যুগে বাস করছি।

তা ছাড়া আর কী-ই বা বলব, বলুন? বাড়ি থেকে বাইরে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য পা রাখলেই যেন মনে হচ্ছে, একশোটা বরফ-ছুরি ধেয়ে এসে ফালা ফালা করে দিচ্ছে গোটা শরীর। চারটে…কখনও কখনও পাঁচটা করে পোশাক পরতে হচ্ছে। লেয়ারের উপর চড়ছে লেয়ার। মুখ-মাথা ঢাকছি ‘বালাকলাভা’ মাস্ক-এ। সেই মুখোশ, যেগুলো ব্যাংক লুঠতে গেলে ডাকাতরা পরে। মুখমণ্ডলের পুরোটা ঢাকা, শুধু চোখদু’টো অনাবৃত। ঠান্ডার কামড় তবু বাগ মানছে না।

Advertisement

[ভারতে দাঙ্গার ছক পাক জঙ্গিদের, মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বাড়ছে উদ্বেগ]

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মুখে শুনছি, এই যা হচ্ছে, তার মূলে রয়েছে ‘পোলার ভর্টেক্স’। যার ভৌগোলিক ব্যাখ্যা অনেকটা এইরকম যে-পৃথিবীর উভয় প্রান্তে দুই মেরু এলাকায় যে দু’টি নিম্নচাপ বলয় রয়েছে, সেখান থেকে হিমশীতল বাতাসের গোলা নেমে এসেছে নাক-বরাবর দক্ষিণে। উত্তর আমেরিকার একটা বিস্তীর্ণ এলাকাকে এই বাতাসের গোলাই একেবারে কম্বলের মতো জাপটে ধরে রয়েছে। বরফ পড়ছে না কিন্তু ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসে রয়েছে। এই ‘কোল্ড স্পেল’ দু’তিনদিন ধরে হলে তা-ও বরদাস্ত করা যায়। কিন্তু যদি টানা দু’সপ্তাহ ধরে চলে? পারা যায়, আপনিই বলুন! নিউ ইয়র্কের তাপমাত্রা বুধবার সকালেও ছিল মাইনাস ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শিকাগো আর মিনেসোটায় মাইনাস ৩২ ডিগ্রি। গ্রেট লেকস এলাকায় তো আরও মারাত্মক অবস্থা। মাইনাস ৬৫ ডিগ্রি। বাড়ির ভিতরে সব সময় হিটার জ্বলছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় জলের পাইপ ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু আসল মুশকিলটা কখন হচ্ছে, জানেন? যখন বাইরে বের হচ্ছি বা বাইরে থেকে বাড়িতে ঢুকছি। এক ধাক্কায় তাপমাত্রার যে প্রচণ্ড তারতম্য হচ্ছে, শরীর তার সঙ্গে ছন্দ মেলাতে পারছে না। কিছুতেই না। এই ‘ড্রাস্টিক টেম্পারেচার ড্রপ’-এর জেরে ইতিমধ্যেই অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা প্রাণপণে চাইছি, বরফ পড়ুক। স্নো-ফল হোক! কারণ তা হলেই আবহাওয়া একটু ‘বেটার’ হবে।

তার উপর সমস্যা বাড়ছে এই ঠান্ডায় গাড়ি চালাতে গিয়ে। ব্যাটারি ডাউন হয়ে যাচ্ছে বার বার। এর উপর আবার যদি বৃষ্টিও পড়ে, তাহলে তো আর কথাই নেই। তখন যুঝতে হচ্ছে ‘ব্ল্যাক আইস’-এর সঙ্গে। আসলে বৃষ্টির জল মাটিতে পড়ে কাদা তৈরি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সাবজিরো টেম্পারেচারে সেটা পড়ে আবার বরফে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। ফলে সফেদ নয়। বরফের গায়ে চড়ছে কালো রং। সেটাই ‘ব্ল্যাক আইস’। পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে ‘স্কিড’ করছে গাড়ি। ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার কখনও রাস্তায় পড়ে থাকা ‘ব্ল্যাক আইস’ ঠাহর করতে না পেরে তার উপর দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়েও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সড়কের পাশাপাশি করুণ দশা উড়ানেরও। প্রচুর ফ্লাইট ক্যানসেল হয়ে গিয়েছে, শুনেছি।

[চোরাশিকারিদের কবলে বিরল প্রজাতির পেঙ্গুইন, নীড় থেকে চুরি ৩ শাবক]

প্রচন্ড ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে অনেকের। ফ্রস্ট বাইট, হাইপোথার্মিয়াও ভোগাচ্ছে। বাড়ির ভিতরে থাকলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে হচ্ছে নিয়মিত। না হলে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। গা গরম রাখতে অনেকেই রেড মিট খেয়ে বাইরে বেরোচ্ছে। কেউ আশ্রয় নিচ্ছে সুরার। কিন্তু গোটা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি কারা কষ্ট পাচ্ছে, জানেন? বাচ্চারা। কারণ, স্কুল-কলেজ-অফিস তো সব খোলা! বরফ না পড়লে তো ছুটি ঘোষণা হবে না! তাই, ওদের একদফা শীতপোশাক পরিয়ে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। তার পর আবার সে সব খুলে স্কুলে ঢুকতে হচ্ছে। আবার স্কুল থেকে বেরিয়ে বাড়ি আসার আগে সে সব পরতে হচ্ছে…উফফ! ভয়ানক বললেও কম বলা হয়। সাধারণত আবহাওয়ার এমন চরম দশার কবলে পড়ার আগে সতর্কতা জারি করা হয়। আমরা আগে থেকে খাবার-দাবার, জরুরি জিনিস কিনে বাড়িতে ‘স্টক’ করে রাখি। এবারও তাই করেছি। কাজেই খাওয়া-দাওয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।

ঘোষণা শুনছি, সপ্তাহান্তে আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হবে। ঠান্ডার কামড় একটু হলেও শিথিল হবে। আপাতত তারই অপেক্ষায় হত্যে দিয়ে বসে আছি। কিন্তু এই চরম অবস্থার মধ্যেও একটা জিনিস দেখে সত্যিই খুব ভাল লাগছে। আর সেটা হল মানবিকতা। গায়ের রং, পদবি বা মাতৃভূমির নাম না বিচার করে একে অন্যকে প্রকৃতির এই রোষের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে সাহায্য করছে। আমাদের এলাকার সমস্ত পরিবারের বাচ্চাদের জন্য কারপুলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কে ভারতীয়, আর কে শ্বেতাঙ্গ–সেই তুলনা এখানে একেবারেই অপাংক্তেয়। রাস্তায় থাকেন যাঁরা, সেই সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলোর জন্য থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গির্জা আর অফিসগুলোতে। এত কষ্টের মধ্যেও এই মানবিক ছবিটা দেখে সত্যিই মনটা ভরে যাচ্ছে। সত্যিই ঠান্ডায় হাড় ‘হিম’ হোক! মন যেন না হয়!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ