Advertisement
Advertisement

Breaking News

Afghanistan

Afghanistan নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত, Taliban-এর আগ্রাসনের মুখে দর্শক আমেরিকা

দু'দশকের গণতন্ত্রে 'মুক্ত হাওয়া'র আস্বাদ পাওয়া আফগানরা আবার সেই তিমিরে।

Reason America withdraw forces from Afghanistan amidst Taliban onslaught | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:August 16, 2021 4:52 pm
  • Updated:August 23, 2021 9:31 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিবর্তনের পথে ফের পিছিয়ে গেল আফগানিস্তান (Afghanistan)। দু’দশকের গণতন্ত্রে ‘মুক্ত হাওয়া’র আস্বাদ পাওয়া আফগানরা আবার সেই তিমিরে। সোভিয়েত পুতুল নাজিবুল্লার নিয়তি এড়িয়ে তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন আশরফ ঘানি। কাবুলের পথে এখন খবরদারি করছে কালশনিকভ হাতে তালিবান জঙ্গিরা। আর কার্যত হাত গুটিয়ে কুটনীতিকদের ‘নিরাপদ’ পলায়নের প্রস্তুতি করছে আমেরিকা। এহেন পরিস্থিতিতে প্রধানত দু’টি প্রশ্নই উঠে আসছে। এক, আফগানিস্তান থেকে কেনই বা হাত তুলে নিল আমেরিকা? এই পরিস্থিতিতে ভারতের উপর কী প্রভাব পড়তে চলেছে?

[আরও পড়ুন: Taliban Capture Afghnaistan: কত টাকার মালিক এই জঙ্গিগোষ্ঠী? কোথা থেকে আসছে অর্থ?]

প্রথম প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়। বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক কারণে আফগানিস্তান থেকে ফৌজ ফিরিয়েছে আমেরিকা। আফগানিস্তানে কোনওকালেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যায়নি সে দেশ। টুইন টাওয়ার হামলার পর অল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে ওয়াশিংটনের হাতে তুলে দিতে চায়নি কাবুলের তালিবান শাসকরা। তাই বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের নামে পাহাড়ি দেশটিতে হামলা চালিয়ে তালিবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে আমেরিকা। তারপর প্রায় দু’দশক ধরে চলা লড়াইয়ে লাদেন খতম হয়। আল কায়দার কোমরও অনেকটাই ভেঙে যায়। দীর্ঘ আলোচনার পর তালিবানও আল কায়দাকে সামনের সারিতে না আনার শর্তে রাজি হয়েছে। এর পর তো নতুন করে আমেরিকার কিছু পাওয়ার নেই। এদিকে, কাবুলে হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে আমেরিকা। যার উত্তরসূরী আশরফ ঘানি। ফলে কৌশলগত দিক থেকে আমেরিকার উদ্দেশ্যপূরণ হয়ে গিয়েছে। তবে দুর্নীতিগ্রস্থ এই সরকার আসলে নামেই ছিল গণতান্ত্রিক। আমেরিকা বাইরে থেকে শক্তি প্রয়োগ করে ঘানিকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়েছিল। এ নিয়ে আমেরিকার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল আফগানবাসীর। প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের মানুষেরা তালিবানকে চাইতেন না ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি আমেরিকাকেও পছন্দ করতেন না। তার কারণ, আফগানিস্তান জুড়ে আমেরিকার ক্রমাগত অত্যাচার। অনেক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে আমেরিকার যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে। পাশাপাশি, মিলিশিয়াদের অত্যাচারেও বিরক্ত হচ্ছিলেন আফগানরা। এটা সত্যি যে এই মিলিশিয়া প্রধানরা বা সামন্তরাজারা তালিবানের বিরোধী। কিন্তু তাদের জনসমর্থনে ভাটা এসেছে। ফলে কার্যত বিনা প্রতিরোধে হেরাত, কান্দাহার, মাজার-ই-শরিফের মতো শহরগুলি দখল করতে সক্ষম হয়েছে জঙ্গিরা।

Advertisement

এদিকে, আমেরিকার জন্য পরিস্থিতি জটিল করে পাকিস্তান (Pakistan) সরাসরি মদত দিতে শুরু করেছিল তালিবানকে। শুধু পাকিস্তান নয়, মদত ছিল চিনেরও। কয়েকদিন আগেই চিনের সঙ্গে তালিবান বৈঠক করেছে। চিন প্রায় সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছে, বেজিংয়ের যে ‘বিনিয়োগ’ আফগানিস্তানে আছে, তা সুরক্ষিত রাখলে তারা তালিবান সরকারের পাশে দাঁড়াবে। এবার তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে বেজিং বলেও খবর। অন্যদিকে, আফগান যুদ্ধে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে আমেরিকা। প্রাণ হারিয়েছেন হাজারেরও বেশি মার্কিন সৈনিক। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। যুদ্ধের বিপুল খরচ তাদের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। আর চালিয়েই বা কী হবে? আমেরিকা ভেবেছিল, আফিম চাষের বিপুল টাকা তাদের হাতে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। কিছুটা টাকা পেলেও আশানুরূপ আফিমের লাভ আমেরিকার ঝুলিতে আসেনি। ফলে আপাতত ক্লান্ত হয়ে ফিরে গিয়েছে ‘আঙ্কেল স্যাম’।

Advertisement

এবার আসা যাক ভারতের প্রসঙ্গে। আফগানভূমে পট পরিবর্তনে কী প্রভাব পড়বে ভারতের উপর?

আফগানিস্তানে আচম্বিত পট পরিবর্তনে সন্ত্রাসবাদ রপ্তানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। আফগানভূমে এবার লস্কর, জইশ, হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির রমরমা হবে। তালিবানের ছায়ায় ফুলেফেঁপে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে কাশ্মীর। ফলে ভারতের ল্যাজেগোবরে হাল এখন এমনই যে, তালিবানদের বাবা-বাছা করতেও আর কুণ্ঠাবোধ নেই। দোহায় তালিবানের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বলে খবর। কে জানে, অবস্থা সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে বসতে হয় কি না! আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার তৈরি ‘কোয়াড’-এর পালটা আরও এক ‘কোয়াড’ আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। চিন, পাকিস্তান, রাশিয়া ও ইরান। এই চতুর্ভুজের প্রথম দু’জন বহু বছর ভারতের মিত্র নয়। শেষ দু’জন আমেরিকার জন্য ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছে। রাশিয়ার প্রস্তাব, অন্তত দু’-তিন বছর তালিবানরা আফগান সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার চালাক। পাশাপাশি স্থায়ী মীমাংসার জন্য কথা বলুক। তালিবানরা তা মানবে কি না, বলা কঠিন। না মানলে ভারতের কপালের ভাঁজ আরও গাঢ় ও গভীর হবে। চিন্তা ক্রমশ পরিণত হবে দুশ্চিন্তায়। দুশ্চিন্তার প্রথমটা আফগানিস্তানে ভারতীয় স্বার্থরক্ষা নিয়ে, দ্বিতীয়টা অবশ্যই পাকিস্তান ও কাশ্মীর। গত কুড়ি বছরে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশে ভারত চারশোরও বেশি প্রকল্প তৈরি করেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার। ভারতীয় প্রকল্পের হানি তালিবানরা করবে না বলে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ভারত নিশ্চিত নয়। চিন তার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে আফগানিস্তানকে শামিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুরোদমে। পূর্ব লাদাখে তারা ভারতকে যে নতুন করে বিব্রত করবে না, সেই নিশ্চয়তা নেই। মোটকথা, আফগানিস্তানে ভারতের ভাল-মন্দ এবার থেকে নির্ভর করবে অন্যদের মর্জির উপর। ভারতের ভূমিকা স্রেফ দর্শকের।

[আরও পড়ুন: Afghan crisis: কাবুল ছাড়ার হিড়িক, উড়ন্ত বিমান থেকে পড়ে মৃত্যু ২ জনের! ভাইরাল ভিডিও]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ