নির্মল ধর: সন্ত্রাসবাদী ও তাদের কার্যকলাপ নিয়ে বাংলায় এযাবৎ বড় মাপের কোনও ছবি হয়নি। নায়ক দেব করলেন। সেজন্য অবশ্যই তিনি বাহবা পাবেন। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের ভাবনা ও পরিকল্পনায় সাজিয়েছেন চিত্রনাট্য। এই শহর কলকাতাই প্রেক্ষাপট। তবে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন উলটোদিক থেকে। মুম্বইয়ের ইয়াসমিন (রুক্মিণী) ও আবির (দেব) পৌঁছায় ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস স্টেশনে হাওড়াগামী ‘দুরন্ত’ ট্রেন ধরতে। মাঝখানে অবশ্য ট্যাক্সিওয়ালা দাঙ্গার ঝামেলার জন্য ইয়াসমিনকে পথের মাঝে ছেড়ে দিলে আবিরই তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। কাকতালীয়ভাবে দু’জনেই একটি টু-টিয়ার কম্পার্টমেন্টের একই ক্যুপের লোয়ার বার্থে জায়গা পায়। ছবির শেষ পর্বে এসে দর্শক যখন বুঝতে পারে আবির আসলে ‘কবীর’ অর্থাৎ স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের ডিএসপি। আর সে জেহাদি ইয়াসমিনকে ধরার জন্যই ফাঁদ পেতেছিল। তখন কিন্তু কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠতেই পারে দর্শকের মনে। প্রথম প্রশ্ন, ডিএসপির কামরায় একেবারে পাশাপাশি জায়গায় ইয়াসমিন আসন পেল কেমন করে? দুই নম্বর প্রশ্ন, যে ইমতিয়াজের জন্য এত প্রশ্ন, সে যে মৃত এ খবর কবীরের কাছে নেই কেন?
[জাতীয় মঞ্চে ‘ময়ূরাক্ষী’র ঢেউ, সেরা অভিনেতা ঋদ্ধি]
এই দু’টো প্রশ্ন সরিয়ে রাখলে অনিকেত-দেব জুটির ছবি ‘কবীর’ নাটক এবং থ্রিলার মেটেরিয়ালে জমজমাট। কলকাতার নানা জায়গায় বিস্ফোরণের পরিকল্পনা নিয়েছিল পারভেজ-ইমতিয়াজ-ইয়াসমিন-আশরফের দল। ইয়াসমিনের বোমাটি ফাটে বড়বাজারে। এসপ্ল্যানেডে ইমতিয়াজের অভিযান ব্যর্থ। পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় তার। অথচ এই খবরটি স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স জানে না কেন? আর এই মৃত ইমতিয়াজের হদিশ জানতে ইয়াসমিনকে ধরার ফাঁদ পাতা হয়, ভাবলেই দর্শকদের মনে হবে একটা দুর্বল কাঠামোর উপর সাজানো চিত্রনাট্য। তবে প্রোডাকশন ভ্যালুর দিক থেকে ‘কবীর’ চোখে পড়ার মতো। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনার কাজ নিপাট, থ্রিলারের ধর্ম ও গুণ উপস্থিত। তাঁর নির্মাণশৈলিতে নান্দনিকতার ছোঁয়াও রয়েছে। বিশেষ করে শেষ পর্বের টাইটেল সং হিসেবে ‘কবীর ও কবীর’ গানটির ব্যবহারে। তবে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো আরও বিস্তৃত হতে পারত। ট্রেনের মধ্যের নাটকের সঙ্গে বারবার ইন্টারকাট করে অতীতের ঘটনায় যাওয়া-আসার ব্যাপারটা ছবিকে গতিময় করেছে এবং মজাদার করেছে চিত্রনাট্য। জনপ্রিয় হয়ে ওঠার মসলাহীন ছবি ‘কবীর’। পরিচালক-প্রযোজক জুটি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই যে ‘কবীর’ বানিয়েছেন তার প্রমাণ মুম্বইয়ে বিস্ফোরণের পর কলকাতার বাংলা চ্যানেলে শুভাপ্রসন্ন-সৃজিত-অনিকেতের এক প্যানেল ডিসকাশনই বুঝিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস আজকের নয়, অনেক পুরনো। এল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মৃত্যু প্রসঙ্গও। অনিকেত তো বললেনই সারা পৃথিবী জুড়ে আমেরিকা সন্ত্রাস ও চোরা গোপ্তা খুন যত প্রাণ নিয়েছে তার তুলনায় ইসলামিক সন্ত্রাসে মৃতের সংখ্যা খুবই কম। এবং কবীরের মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, “ দাঙ্গা হিন্দুরা করে না, মুসলমানও করে না, করে দাঙ্গাবাজরা”। এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করার জন্য কবীর।
[শিউলি ফুলের গন্ধ থমকে দেয়? তাহলে ‘অক্টোবর’-এর স্নিগ্ধতা মন কাড়বে]
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর আবহ ছবির গতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মেলানো। গানের অতিরিক্ত কোনও জায়গা নেই। অভিনেতা দেব শুরুতেই আবির হয়ে বলেই দিয়েছেন “আমার বাংলা উচ্চারণ এখনও ঠিক নয়”। সুতরাং তাঁর অভিনয় সম্পর্কে একটাই বলা, আন্তরিকতায় তিনি কবীর চরিত্রে সমর্পিত। উচ্চারণ মোটেও খারাপ নয়। ব্যক্তিত্বেও দেব উজ্জ্বল। রুকসানার চরিত্রে রুক্মিণী বেশ সপ্রতিভ, স্বচ্ছন্দ। রোমান্টিক কোনও অ্যাঙ্গেল না থাকায় বেশ অন্যরকম একটা ইমেজ রয়েছে। অন্যান্য চরিত্রে প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, শতাফ ফিগার, অর্ণ মুখোপাধ্যায় সহযোগী হিসেবে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। আলাদা তেমন গুরুত্ব নেই। এ ছবি দেবকে একজন সিরিয়াস প্রযোজক হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
[নাচে প্রভু দেবাকেও টক্কর দিলেন শাহিদের ভাই ইশান খট্টর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.