Advertisement
Advertisement

Breaking News

কণ্ঠ

দর্শক টানার মশলা থাকলেও শিবু-নন্দিতার ব্যতিক্রমী ছবি ‘কণ্ঠ’

পরিচালক শিবপ্রসাদকে ছাপিয়ে গেলেন অভিনেতা শিবপ্রসাদ।

Read the review of Shiboprosad-Nandita's film 'Konttho'
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:May 11, 2019 2:28 pm
  • Updated:May 11, 2019 2:28 pm

চারুবাক: কেরিয়ারের প্রায় প্রথম থেকেই শিবপ্রসাদ-নন্দিতা পরিচালকজুটি জনসাধারণের মনোরঞ্জনের কথা ভাবেন। তাই তাঁদের গল্পে তো বটেই চিত্রনাট্যেও সমসাময়িক কিছু নাগরিক সমস্যার সঙ্গে বিনোদনের উপাদান যোগ করে সংখ্যাগুরু দর্শকের আমোদে কোনও ফাঁক রাখতেন না। মধ্যবিত্ত পারিবারিক মূল্যবোধের সঙ্গে নাটক, গান, ঘটনা মিশিয়ে একের পর এক সুস্বাদু ছবি বানিয়ে চলেছেন তাঁরা। ব্যতিক্রম ঘটনা এবার এই ‘কণ্ঠ’ ছবিতে। এই ছবি তাঁদের চিন্তায় একটু বাঁক আনল।

একজন রেডিও জকির প্রধান উপাদান তাঁর গলার স্বর। অর্থাৎ কণ্ঠ। সেটাই তাঁর পেশা, নেশা, আবেগ, ভালবাসা- এক কথায় তাঁর জীবন। সেই কণ্ঠস্বর প্রায় আচমকাই কোনও দুরারোগ্য ব্যধির কারণে হারিয়ে গেলে কেমন পরিস্থিতি হয় ব্যক্তিগত মানসিকতায় এবং পারিবারিক জীবনে, সেটাই ‘কণ্ঠ’ ছবির মূল বিষয়। তবে শিবু-নন্দিতা দর্শক বিনোদনের কথা ভেবেই আরজে অর্জুনের (শিবপ্রসাদ) সেই সংকট থেকে মুক্তির উপায় দেখিয়ে চিত্রনাট্যে সমাপ্তি টেনেছেন। অর্জুনের হারানো স্বরকে ফিরিয়ে দিতে এসেছে স্পিচ থেরাপিস্ট রোমিলা চৌধুরি (জয়া)। তাঁরই আন্তরিক শুশ্রূষায় ল্যারিংটোমির রোগী অর্জুন ফিরে পায় স্বর। খাদ্যনালী দিয়ে ইউসোফিক্যাল ভয়েস নিয়ে ফিরে আসে রেডিও স্টেশনে নতুন অনুষ্ঠান করতে। অর্থাৎ দর্শককে ‘সন্তুষ্ট’ রাখার পথটি খোলা রেখেই নন্দিতার চিত্রনাট্য। চলতি জনপ্রিয়তার উপাদান এই ছবিতে অনেকটাই কম। আর এখানেই ‘কণ্ঠ’ নন্দিতা-শিবু জুটির খানিকটা ব্যতিক্রমী ভাবনার ছবি।

Advertisement

গল্পের প্রথমার্ধ স্ত্রী পৃথা, শিশু সন্তান টুকাই ও অর্জুনের ক্যানসার আক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বেশ তরতরিয়ে এগোয়। তাঁদের অতীত রোম্যান্স, বাচিকশিল্পী হিসেবেই পৃথা-অর্জুনের ‘জুটি’ হয়ে ওঠা বা স্বর হারানোর মানসিক বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো বেশ মনোগ্রাহী করেই পর্দায় তুলে আনেন শুভংকর ভড়ের সাহায্যে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ। বাবার গলায় অপারেশনের চিহ্ন দেখে সন্তানের ভয় পাওয়া, আবার সেই ভয় কাটানোর জন্য সন্তানকে কাছে টেনে নিয়ে আঘাতের জায়গাটিকে হাত বোলানো বা পৃথার কাছে অর্জুনের ভেঙে পড়ার দৃশ্যগুলো গভীর আবেগ দিয়েই তৈরি।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: অভিনয়ে ফুল মার্কস পেল কৌশিকের ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’, আলাদা করে নজর কাড়লেন সুদীপ্তা ]

ওপার বাংলার স্পিচ থেরাপিস্ট রোমিলা চিত্রনাট্যে প্রবেশের পর ছবির গতি একটু মন্থর। প্রায় ডেটিং-এ বেরোনোর স্টাইলে রোমিলা-অর্জুনের পুরো শহর ঘুরে বেড়ানো, তাঁকে নতুনভাবে স্বরবর্ণ শেখানোর দৃশ্যগুলো আরও একটু সম্পাদনা করা যেত। আর ওঁদের দু’জনের আপাত ঘনিষ্ঠতায় স্ত্রী পৃথার হিংসার ব্যাপারটা হয়তো অকারণ নয়। কিন্তু সেজন্য রোমিলার কাছে পৃথার প্রায় দরবারি ভঙ্গিতে আসাটাও যুক্তিপূর্ণ নয়। তবে ছবির শেষ পর্বে ‘গুগাবাবা’ ছবির ‘ভূতের রাজা’ গানটির ইউসোফিক্যাল ভয়েসে শিবপ্রসাদের গেয়ে ওঠা বা নজরুলের কবিতাকে দৃপ্ত কণ্ঠে পরিবেশন করার পরিকল্পনা অবশ্যই প্রশংসার। আবহসংগীত এবং গানগুলোও চরিত্র ঘটনার পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই ব্যবহৃত। অনিন্দ্য-প্রশ্মিতার ‘বর্ণপরিচয়’ গানটি সত্যিই বেশ ভাল। কিংবা ‘তোমার ফুলের টবে নানা রং’ গানটিও রোমিলা-অর্জুনের বন্ধুত্বের উপর এক অভিনব আলোকপাত।

এবার আসা যাক অভিনয়ের কথায়। অভিনেতা শিবপ্রসাদ এবার কিন্তু পরিচালক শিবপ্রসাদকে টেক্কা দিয়েছেন। তাঁর কণ্ঠের জোয়ার আর মিষ্টতার সঙ্গে স্বর হারানোর পর শিবুর অভিব্যক্তি সত্যিই অসাধারণ এবং পরবর্তী সময়ে খাদ্যনালী দিয়ে শব্দ উচ্চারণের কাজগুলো ডাবিংয়েও অসাধারণ। পৃথার চরিত্রে পাওলি দাম সংবেদনশীল, সমব্যথী এবং সহধর্মিনী হিসেবে যোগ্য সঙ্গই দিয়েছেন। রোমিলা চরিত্রে জয়া আহসানের উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল উপস্থিতি এবং অভিনয় দুটোই স্বাভাবিক। দুটি ছোট্ট চরিত্রে কনীনিকা এবং চিত্রা সেন একইসঙ্গে রিলিফ ও প্রয়োজনীয়।

আসলে আলোচনার শুরুতে ‘কণ্ঠ’কে ‘ব্যতিক্রমী’ আখ্যা দিলেও শেষপর্যন্ত এই ছবি কিন্তু দর্শককে হলে টেনে আনার বঙ্গীয় উপাদানে ভরপুরই বলব। ফারাক শুধু পরিবেশনার আধুনিকতায়। বিশেষ করে নন্দিতার চিত্রনাট্যে।

[ আরও পড়ুন: রহস্যে মোড়া ‘বসু পরিবার’-এর অন্দরমহল, জানতে একবার ঢুঁ মারতেই পারেন ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ