সুকুমার সরকার, ঢাকা: মতুয়া মহাতীর্থে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। শনিবার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে মতুয়া মন্দিরে পুজো দিলেন তিনি। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজ সারবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
এদিন ঠাসা কর্মসূচির মধ্যে সকালে সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পুজো সেরে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় যান তিনি। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে ২০ কিলোমিটার দূরে কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন। ওড়াকান্দিতে উলু ও শঙ্খধ্বনি দিয়ে এবং ডঙ্কা ও কাঁসা বাজিয়ে মতুয়া ধর্মাবলম্বীরা মোদিকে বরণ করেন। তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিসতুতো দাদা সাংসদ শেখ সেলিম। জানা গিয়েছে, ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে জরুরি ভিত্তিতে চারটি হেলিপ্যাড, ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরে ৫০০ মিটার এইচবিবি সড়ক, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের তিলছড়া থেকে ওড়াকান্দি পর্যন্ত আট কিলোমিটার ও রাহুথড় সড়ক থেকে ওড়াকান্দিতে প্রবেশের জন্য ৬০০ মিটার পাকা সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত-সহ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “কয়েক বছর ধরে এই পবিত্র দিনের অপেক্ষা করছিলাম আমি। ২০১৫ সালে যখন আমি প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলাম তখন থেকেই এখানে আসার ইচ্ছা ছিল আমার। আজ সেই ইচ্ছা পুরণ হল। আজ আমি নিয়মিতভাবে হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের থেকে ভালবাসা পেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের বড়মার স্নেহ মাযের মতো। পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগর থেকে বাংলাদেশের ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত একই রকমের শ্রদ্ধা রয়েছে। একই রকমের অনুভূতি রয়েছে। আমি ১২০ কোটি ভারতবাসীর তরফে আপনাদের জন্য শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় আপনাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। গতকাল ঢাকায় আমি বাংলাদেশের শৌর্য, ক্ষমতা ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ দেখেছি। এখানে আসার আগে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। সংস্কৃতির দিক থেকে হরিচাঁদ ঠাকুরের বার্তা বহু দশক থেকে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে মজবুত করছে। এই জায়গা ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র। ভারত ও বাংলাদেশ নিজেদের বিকাশ ও প্রগতির চেয়ে সমগ্র বিশ্বের উন্নতি দেখতে চায়। সন্ত্রাস ও অস্থিরতার পরিবর্তে শান্তি চায় উভয় দেশ। এই শিক্ষাই আমাদের হরিচাঁদ ঠাকুর দিয়েছেন। এই মূল্যবোধ ও শিক্ষার জন্য নিজের জীবন সমর্পিত করেছিলেন তিনি।সংসদে শান্তনু ঠাকুর আমার সহযোগী। আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও তাঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি।” ওড়াকান্দিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করবে ভারত। এছাড়া একটি মিডিল স্কুলের উন্নয়নও করা হবে বলেও জানান মোদি।
এদিন দুপুরে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় ফিরবেন। ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এ বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে অনেকগুলো চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং পারস্পরিক সহযোগিতা অন্যতম। এছাড়া তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসবে বলেও জানা গিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আবহে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভিটেয় মোদির সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ৩০টি আসনে মতুয়া ভোট নির্ণায়ক। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পাশাপাশি সম্প্রদায়টির মন পেতে মতুয়া মহাতীর্থ ভ্রমণ মোদির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.