সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার বাংলা টিম’ এবং ‘আল কায়দা’-র পাকাপোক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কলকাতার বেশ কিছু নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের ‘টার্গেট’ করেছিল ধৃত সামশাদ মিয়া এবং রিয়াজ। সেই কারণে তারা প্রায় দেড় মাস ঘুরেছিল ওই স্কুলগুলিতে। জেহাদি মন্ত্রে দীক্ষিত করতে তারা কথাও বলেছিল বেশ কয়েকজন মেধাবী ছাত্রের সঙ্গে। এমনকী পার্ক সার্কাসে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ওই ছাত্রদের মগজ ধোলাইয়েরও ছক ছিল তাদের। কলকাতা স্টেশন থেকে ধৃত দুই জঙ্গিকে জেরায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
[আক্রান্ত স্নেহাশিস, সৌরভের বাড়িতে ডেঙ্গুর আবহ]
জানা গিয়েছে, সামশাদরা ওই স্কুলগুলির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে তা পাঠিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশে ‘আনসার বাংলাদেশ টিম’-এর শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের কাছেও। সেই কারণে সামশাদদের ল্যাপটপ, মোবাইল, ডায়েরি এবং চিরকুটেও কলকাতার বেশ কিছু নামী স্কুলের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা। এই তথ্য পাওয়ার পর ওই স্কুলগুলির সিসি টিভির ফুটেজ মিলিয়ে গোয়েন্দারা দেখতে চান, স্কুলের সামনে সামশাদ ও রিয়াজদের সঙ্গে আর কারা ছিল। এই ছবি হাতে পেলেই সামশাদদের পলাতক বাকি জঙ্গি-সঙ্গীদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করবে এসটিএফ। ইসলামিক স্টেট থেকে শুরু করে যে কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের মাথায় থাকে মেধাবীরা। মূলত তারাই সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়। তারাই ঠিক করে অপারেশনের মূল ব্লু-প্রিন্ট। মেধাবী নেতৃত্বের নির্দেশ মতোই কাজ করে ‘অ্যাকশন স্কোয়াড’-এর সদস্যরা। সেই কারণে যেকোনও জঙ্গি সংগঠনের সফট টার্গেট হয় মেধাবী ছাত্ররাই। যে কারণে বাংলাদেশের সিলেটের কৃতী ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র সামশাদ ছিল ‘আনসার বাংলাদেশ টিম’-এর টার্গেট। সেই জন্যই সামশাদকে কট্টর ধার্মিক করে জেহাদি মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে এই জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা মেজর জিয়া। ২০১৪ সালে ‘আনসার বাংলাদেশ টিম’ গঠিত হয়। জঙ্গি প্রশিক্ষণের পর এই টিমের সংগঠন বাড়াতে সদস্যদের পরের বছর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা ভারতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
[ঠাসা ক্রীড়াসূচি, বোর্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব ক্যাপ্টেন বিরাট]
লালবাজারে গোয়েন্দাদের জেরায় ধৃত সামশাদ ও রিয়াজ জানিয়েছে, ইদানীং দেখা যাচ্ছিল এই জঙ্গি সংগঠনের অ্যাকশন স্কোয়াডের সদস্যদের পাওয়া যাচ্ছিল খুব সহজেই। কিন্তু মেধাবী নেতৃত্বের বড় অভাব দেখা গিয়েছিল। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন বৃদ্ধির দায়িত্ব পড়েছিল সামশাদ ও রিয়াজদের উপর। বাংলাদেশ থেকে এই নির্দেশ পাওয়ার পরেই তারা দু’জনে দশমীর দিন এই শহরে ঢোকে। শহরে আসার পর তারা স্থায়ীভাবে কোনও জায়গাতেই থাকেনি। ঘুরে বেড়িয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেই কারণে তাদের কাছ থেকে মিলেছে ধর্মতলা, ইডেন গার্ডেন্স, হাওড়া ব্রিজ, হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ম্যাপ। মিলেছে সীমান্তের পালানোর রাস্তার নকশাও। পাশাপাশি মিলেছে শহরের বিভিন্ন নামী স্কুলের বিস্তারিত তথ্য। কিন্তু প্রশ্ন হল, সামশাদদের কাছে শহরের নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির তথ্য এল কেন? তবে কি সংগঠন বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্য কোনও ছক ছিল তাদের? তা-ও খতিয়ে দেখতে ধৃতদের ম্যারাথন জেরা করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ওই সমস্ত নামী স্কুলে মূলত শহরের উচ্চবিত্তদের ছেলেরাই পড়ে। তাদেরই জিহাদি মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠন বাড়াতে চেয়েছিল সামশাদরা। এরই মধ্যে সংগঠন বৃদ্ধিতে তারা কথা বলেছিল পার্কসার্কাস এলাকার এক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গেও। সামশাদদের জেরা করে সেই শিক্ষকের সন্ধান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।