Advertisement
Advertisement

Breaking News

মা-বাবাকে হারিয়ে অসহায় তেহট্টর চার নাবালিকা

তেহট্টর দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার সবমিলিয়ে ৯ জন মারা গিয়েছেন।

4 Children orphaned in Nadia road mishap
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 10, 2017 3:20 am
  • Updated:August 10, 2017 6:57 am

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: তেহট্টর পথ দুর্ঘটনা রাতারাতি অনাথ করে দিয়েছে ওদের। ওরা স্নেহা, রিয়া, প্রিয়া প্রামাণিক ও অনিশা হালদার। কেউ শিশুকন্যা, কেউ কিশোরী- এই চার কন্যাই যখন বড় হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ, তখনই মা হারানোর যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে গেল ওরা। স্নেহা, রিয়া, প্রিয়া প্রামাণিকরা তিন বোন। বড় স্নেহার বয়স চোদ্দ, রিয়ার আট ও প্রিয়ার পাঁচ। মঙ্গলবারের পথ দুর্ঘটনায় বাবা রাজেশ প্রামাণিক (৩৭), মা রীতা প্রামাণিককে (৩০) হারিয়ে ওরা সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছে।

বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তেহট্টর রঘুনাথপুরে ওদের বাড়িতে পড়শিদের ভিড়। আলোচনা একটাই, ওই একরত্তি মেয়েদের এখন কী হবে? মঙ্গলবার সাত সকালে রীতাদেবী বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। উদ্দেশ্য পুনে থেকে অসুস্থ স্বামী রাজেশ প্রামাণিককে বাড়িতে আনার আগে কৃষ্ণনগরে ভাল চিকিৎসক দেখানো। রাজেশবাবু পুনেতে টাইলসের কাজ করে। বাড়িতে একমাস ছুটি কাটিয়ে গত কুড়ি-পঁচিশ দিন আগে তিনি কর্মস্থল পুনেতে ফিরে যান। সেখানে প্রবল জ্বর, গায়ে ব্যাথা। শরীর নিয়ে ফোনে কথা হতেই রীতাদেবী স্বামীকে বলেছিলেন, ‘অনেক কাজ করেছ। ওখানে আর থাকতে হবে না। এখানে এসে ভাল করে চিকিৎসা কর। ঠিক চলে যাবে।’ গতকাল সকাল থেকে রীতাদেবী মোবাইলে রাজেশবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। পুনে থেকে হাওড়ায়। তারপর সকালে কৃষ্ণনগরে পৌঁছান রাজেশবাবু। আটটায় বড় মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী স্নেহা বাবাকে ফোন করে। স্নেহা বলছে, ‘বাবা জানায়, আমি কৃষ্ণনগরে পৌঁছে গিয়েছে। মা-ও সঙ্গে আছে। আমাদের যেতে দেরি হবে। তুই বোন স্কুলে চলে যাস। দশটার সময় মাকে ফোন করি। মা জানায় বাবাকে ডাক্তার দেখাচ্ছি। বারবার ফোন করিস না। আসলে বাবার টাইফয়েড হয়েছে। তাই মা চিন্তায় ছিল। পড়তে যাওয়ার আগে সাড়ে সাতটায় রিয়া দুষ্টমি করছিল বলে মাকে ফোন করি। মা তখন বোনের সঙ্গে কথা বলে।’ চোখে জল নিয়ে স্নেহা বলছে, ‘আমাদের এখন কী হবে?

Advertisement

স্বামীর চিকিৎসার ব্যাঘাত যাতে না ঘটে তার জন্য রীতাদেবী দিন চারেক আগে বছর পাঁচেকের ছোট মেয়ে প্রিয়াকে বোনের বাড়ি রেখে আসেন। গ্রামে ফসল সংক্রান্ত কাজ করে কিছুটা রোজগার করতেন রীতাদেবী। কৃষ্ণনগরে আসার দিন বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দুই নাবালিকাকে দেখার জন্য বিধবা বড়জা মীরাদেবীকে বলে যান। ধরা গলায় বলছিলেন বছর পাঁচেক আগে স্বামীকে হারানো মীরা প্রামাণিক। বাবা মায়ের মৃত্যু খবর পেয়ে মাসির সঙ্গে বাড়ি এসেছে পাঁচ বছরের প্রিয়া। মাঝে মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে বলছে, ‘দিদি, মা-বাবা কই?’ বাবা মায়ের চোখে তুলসীপাতা দেখে বলে ওঠে, ‘ওদের চোখে তুলসীপাতা কেন রে দিদি।’

Advertisement

তেহট্টর দুর্ঘটনায় মা টুকটুকি হালদার (২৭), বোন অনুষ্কাকে হারিয়েছে চাঁদেরঘাটের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অনিশা। মঙ্গলবার অভিশপ্ত ঘটনার সাক্ষী থেকেছে সে-ও। পিসির ছেলে একাদশ শ্রেণির পাপন হালদারকে গত রবিবার গভীর রাতে নিশ্চিন্তপুরের বাড়িতে সাপে কামড়ায়। সোমবার বিকেলে কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে সে মারা যায়। মঙ্গলবার শক্তিনগরের মর্গ থেকে পাপনের দেহ বের করার সময় ময়নাতদন্তের জন্য আড়াই বছরের অনুষ্কার দেহ ঢোকান হয়। এর কয়েক ঘন্টা পরই রাতে, গতকালের ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অনুষ্কার মা টুকটুকি হালদার কলকাতায় চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পথে মারা যান। তেহট্টর ঘটনায় সবমিলিয়ে ৯ জন মারা গিয়েছেন। মৃতার স্বামী অনুপ হালদার রাতে মেয়ের দেহ গ্রামে নিয়ে যাননি। একসঙ্গে মা-মেয়ের দেহের সৎকার হবে বুধবার। অনুপবাবু বলছিলেন, ‘বাড়িতে একটা সাপে কাটার মৃত্যুর সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আমার পরিবারটা ভেসে গেল।’ ছোট্র অনিশাও বাড়িতে মানুষজন দেখে ঘুম থেকে উঠে পড়ছে। বারবার এদিক ওদিক তাকিয়ে বলছে, ‘মা কই….’। অনাথদের সম্পর্কে নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, প্রশাসন থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন হলে প্রশাসন অবশ্যই পাশে থাকবে। এদিনও অভিযুক্ত চালককে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে মেকানিক্যাল টেস্ট করানো হয়েছে অভিশপ্ত বাসটির।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ