তরুণকান্তি দাস: বিয়ে বাতিল! আইন মেনে সইসাবুদ সেরে দুই হাত এক করে হানিমুনও সারা। অথবা দীর্ঘদিনের সুখী গৃহকোণ। তার পর হঠাৎ একদিন দেখা গেল বিয়েটাই অবৈধ। জাল ডাক্তারের মতো জাল বা বাতিল ম্যারেজ অফিসারের হাতে পড়ে এই দশা অনেকের। এই অবস্থায় রাজ্যের আইন দপ্তর উঠেপড়ে লেগেছে সেই সব রেজিস্ট্রার খুঁজে বের করতে। ইতিমধ্যে কয়েকজনের নামে এফআইআর পর্যন্ত করা হয়েছে সরকারের তরফে। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে জেলাগুলির কোথায় কারা স্বঘোষিত বিবাহ নিবন্ধক হয়ে করেকম্মে খাচ্ছেন তা দেখতে দপ্তরের কর্তাদের জেলায় যাওয়ার কথা ভাবতে হচ্ছে।
[অর্থাভাবে বিয়ে বন্ধ, চার হাত এক হল বনদপ্তরের উদ্যোগে]
রাজ্য আইন দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যে প্রায় হাজার দেড়েক নথিভুক্ত ম্যারেজ অফিসার আছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে বিয়েপর্বে আইনি সিলমোহর দেওয়ার কাজ করছেন তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ। তাঁদের কারও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। কারও আবার বয়স পার হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত। তাঁদের নিয়ে নাস্তানাবুদ দশা অনেকের। শুধু সাধারণ মানুষ কেন, ভিআইপিরাও পার পাচ্ছেন না। বেশ কিছুদিন আগেই একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন শ্রীরামপুরের এক মহকুমাশাসক, যাঁর স্ত্রীও আমলা। বিয়ের পর দেখা যায়, তাঁরা যে অফিসারের মাধ্যমে বিয়ে নিবন্ধীকরণ করিয়েছিলেন, তাঁর সেই আইনি স্বীকৃতি নেই। বাধ্য হয়ে ফের বিয়ে রেজিস্ট্রি করান তাঁরা। যা নিয়ে হইচই হয় আইন বিভাগে। দপ্তরের তৎকালীন সচিব চমকে যান এই খবরে। তারপর তৎপরতা বাড়ে। এই চক্র নিয়ে সরব অল বেঙ্গল ম্যারেজ অফিসার্স অর্গানাইজেশন। ভুয়া অফিসারদের তালিকা রাজ্য ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক জয়ন্ত মিত্র বলেন, “বিয়ে কিন্তু বিয়ে নয়, এই জটিল পরিস্থিতির শিকার অনেকেই। ভুয়া অফিসারদের পাল্লায় অনেকেই পড়ছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন আদালতে অসাধু কিছু মুহুরি এই কাজে যুক্ত। আমরা ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
[নবদম্পতিদের জন্য মোটা অঙ্কের বিমা, গণবিবাহের আসরে অন্য উপহার]
জেলাগুলির কিছু আদালত চত্বরে জাল ম্যারেজ অফিসারদের চক্র রয়েছে বলে অভিযোগ করে জয়ন্তবাবু জানান, “আইন দপ্তর বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ব্যবস্থা নিচ্ছে, এটাই স্বস্তির।” কত বিয়ে বাতিলের পথে? সংখ্যা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ আইন দফতরের কর্তারা। তবে তা যে অনেকের সাংসারিক জীবনকে নয়া ঝটকা দেবে, সেটা স্পষ্ট। কিন্তু ব্যবস্থাটা কী? আইন দফতর সূত্রে খবর, ৬৮ বছর হল ম্যারেজ অফিসারদের কাজের বয়সসীমা। এখন দেখা যাচ্ছে অনেকেই সেই বয়স পার করেও কাজ করছেন। অথবা তাঁর বকলমে কাজ করছে একটি দালাল চক্র। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ মিলেছে বেশ কিছু। যার ভিত্তিতে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর সাম্প্রতিকতম নজির দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার এক অফিসারের নামে এফআইআর। আবার কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে বেশ কিছু ভুয়া অফিসার কাজ করছেন বলে খবর এসেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওইসব অফিসারের মাধ্যমে যাঁদের বিয়ে হয়েছে? রাজ্যের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জেনারেল মৃদুল হালদার বলেন, “বাতিল হবে। কেন না সেই বিয়ের তো কোনও বৈধতা নেই। অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কাজ করছেন বলে খবর আছে।” তবে মৃদুলবাবু বলেন, “এটি আইন দফতরের বিষয়, এর বেশি কিছু বলার নেই।” বিয়ে আইনি বাতিল মানেই কিন্তু অনেক সমস্যা। বিশেষ করে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি প্রাপ্তি, ভিসা পাওয়া ঘিরে জটিলতা বাড়বেই। যা কাটাতে গেলে ফের সাত পাকে না ঘুরুন, বিয়ের আইনি পিঁড়িতে বসতেই হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.