সুব্রত বিশ্বাস: করোনা আবহে বাতিল হয়েছে বহু ট্রেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই কমেছে যাত্রীদের সংখ্যা। ফল বিপাকে পড়েছে স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া ভবঘুরের দল। কারণ, যাত্রীদের কাছে হাত পেতেই দিন গুজরান হয় তাঁদের। মহামারীর জেরে স্টেশনে মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় খবর জুটছে না ভবঘুরেদের। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর গত সপ্তাহে সাধারণের জন্য লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার ট্রেন যা চালু হয়েছিল, তার মধ্যে পনেরো জোড়া বাতিল হয়েছে ইতিমধ্যে। এরপরেও অনিয়মিত ভাবে বাতিল হচ্ছে কিছু ট্রেন। বুধবার উত্তর পূর্ব সীমান্তগামী বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল করেছে রেল। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্টেশনে যাত্রী কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন ভবঘুরের দল। গত বছর লকডাউনে রেলের তরফে ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি এদের খাবার ব্যবস্থা করেছিল। যা এবার হয়নি। ফলে হাওড়া, শিয়ালদহ ও অন্য স্টেশনগুলিতে থাকা ভবঘুরেদের খাবার জুটছে না। এই অবস্থায় বহু ভবঘুরে অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বুধবার তাঁদের হাওড়া স্টেশনের বাইরে ট্রলিতে চাপিয়ে নিয়ে যায় আরপিএফ। চিকিৎসা করার কথা বললেও তা কতদূর সত্যি এ নিয়ে সন্দিহান যাত্রীরা। তাদের সন্দেহ, ফাঁকা জায়গায় এদের সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। দেশজুড়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ায় অন্য জায়গা থেকেও ভবঘুরের দল চলে আসছে অন্তিম স্টেশনগুলিতে। ফলে সমস্যার মুখে পড়েছে রেল প্রশাসন।
গত বছর যাত্রী পরিবহণ না হওয়ায় রেলের ক্ষতি পঞ্চাশ হাজার কোটি বলে দাবি উঠেছিল। এবার একই পদ্ধতিতে ক্ষতি বাড়ছে বলে রেলের মত। রেল আধিকারিকদের মতে, স্টাফ স্পেশ্যালে স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া কেউ উঠতে পারবেন না। এই নির্দেশের পর রেলকর্মী ছাড়াও অন্য যাত্রীরা সওয়ার হচ্ছেন ট্রেনগুলিতে। এই যাত্রীরা টিকিট কাটছেন না। এই অবস্থায় রেলের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে আধিকারিকদের দাবি। প্রসঙ্গত, রেলকর্মীদের মধ্যে বহু কর্মী আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন। শিয়ালদহের ডিআরএম এসপি সিং জানান, ডিভিশনে আক্রান্ত এগারোশরও বেশি কর্মী। তবে দৈনিক সংক্রমণ কমেছে। আগে ডিভিশনে দৈনিক পঞ্চাশ-ষাট জন আক্রান্ত হলেও, এখন তা তিরিশ-পয়ত্রিশের মতো হচ্ছে। এদিকে, রেলের স্বাস্থ্যবিভাগের পরিষেবার অসন্তুষ্ট কর্মীরা। রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা হচ্ছে না। পাশাপাশি হাসপাতালে ভরতি রোগীর প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ উঠতেই পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের তরফে বুধবার থেকে রেলের হাসপাতালগুলিতে হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ জানান, বিআর সিং, হাওড়া অর্থোপেডিক, লিলুয়া, আসানসোল হাসপাতালে হেল্প ডেস্ক চালু হয়েছে। যেখানে ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। কোভিডি আক্রান্ত রেলকর্মীদের যাবতীয় তথ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও যোগাযোগ রক্ষা করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.