Advertisement
Advertisement

Breaking News

Dinosaur fossils

বাংলার বুকে ডাইনোসরের জীবাশ্ম! কোন ইতিহাস সামনে আসবে?

অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের পর এই বাংলাতেও খুলতে পারে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা।

Dinosaur fossils discovered in Purulia! । Sangbad Pratidin

ছবি: অমিতলাল সিং দেও

Published by: Sayani Sen
  • Posted:February 25, 2024 9:25 am
  • Updated:February 25, 2024 4:07 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাংলার মাটিতে প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী ডাইনোসরের জীবাশ্ম? একেবারে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা ছোটনাগপুর মালভূমির পুরুলিয়ায় অস্থি পাহাড়ে আনন্দমার্গীদের এই দাবিকে ঘিরে হইচই শুরু হয়েছে। তাহলে কি নতুন ইতিহাসের জন্ম? এমন প্রশ্নও উঠে গিয়েছে এই বিস্তীর্ণ মালভূমিতে। ঝালদা ২ নম্বর ব্লকের চিতমু গ্রাম পঞ্চায়েতের তাহেরবেড়াগ্রাম সংলগ্ন মাড়ামু মৌজায় প্রায় ২০০ ফুট উঁচুতে আনন্দমার্গীদের অস্থি পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওই জীবাশ্ম রয়েছে। যা বৃহদাকার সরীসৃপ জাতীয় মেরুদণ্ডী অবলুপ্ত ওই ডাইনোসরের পশ্চাৎ বা লেজের অংশের। আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের এমন দাবিকে কোনওভাবেই উড়িয়ে দেয়নি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। বরং এক্সপ্লোরেশন বা অন্বেষণের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ‌্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড প্রাথমিকভাবে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের পেলেইনটোলজি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে। পাঠানো হয়েছে ছবি। আর তার ভিত্তিতেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে এই বিষয়ে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।

পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ করছি। যথাস্থানে বিষয়টি জানানো হবে।’’ সালটা ১৯৮০। ২৭ ডিসেম্বর। আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের সদর দপ্তর আনন্দনগর যা ঝালদা দুনম্বর ব্লকের পাশেই জয়পুর ব্লকে রয়েছে। আনন্দনগরের পশ্চিম অংশে একাধিক বৃহৎ পাহাড়ের পাশে একটা ছোট্ট পাহাড়। যার নাম অস্থি পাহাড়। গুগলে সার্চ করলেই বিশদ বিবরণ মিলবে। সেখানেই ওই সংঘের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাতরঞ্জন সরকার ওরফে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্তি পাহাড় চূড়ায় গিয়ে পাথর নিরীক্ষণ করে বলেছিলেন, ডাইনোসরের ফসিল! তারপরেই সেখানে এই জীবাশ্ম বিষয়ে বড় বোর্ড বসান আনন্দমার্গীরা। ওই জায়গা চিহ্নিত করে রাখা হয়। তাঁরা কার্বন ডেটিংয়ের কথা বলেন। কিন্তু সেই জায়গা চিহ্নিত করা থাকলেও ওই বোর্ড আজ আর নেই। হয়নি ওই বস্তুর বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিংয়ের প্রয়োগ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩-এর মাঝামাঝিতে রাজস্থানের জয়সলমেরে থর মরুভূমিতে ডাইনোসরের জীবাশ্ম মেলে।

Advertisement

Fossil

Advertisement

[আরও পড়ুন: হাতুড়ে ডাক্তার থেকে জমি ‘লুটেরা’ শাহজাহানের ভাই সিরাজ, ‘তৃণমূলের কেউ নন’, দাবি পার্থ-সুজিতের]

যার অনুসন্ধান কার্যক্রম ২০১৮ সালে শুরু করেছিল জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। আর এরপরেই আনন্দমার্গীরা নতুন করে এই অস্থি পাহাড়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অন্বেষণ, গবেষণার জন্য জোরালো দাবি জানাতে থাকেন। ১৯৮০ থেকে ২০২৪ দীর্ঘ চার দশকে ওই ২০০ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়া ঘুরে এসেছেন প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। কিন্তু রাজস্থানের জীবাশ্ম মেলার পরেই আনন্দমার্গীদের জোরালো দাবির ভিত্তিতে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন পদক্ষেপের পথে হাঁটল। আসলে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের এই ফসিল নিয়ে বনমহলের এই জেলায় গবেষণা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। দামোদর নদীর চরে সাঁতুড়ির মধুকুণ্ডা থেকে পাওয়া ফসিলকে নিয়ে কাজ করছেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের জীবাশ্ম বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তাই উভচর থেকে সরীসৃপে রুপান্তরের ফসিল। যা ডাইনোসরের সমসাময়িক। তা এখানে যে পাওয়া যাবে না এমন নয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ‌্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (জিওলজি) সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যেমন নির্দেশ আসবে সেই মোতাবেক আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এই জেলায় সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের ফসিল নিয়ে বহুদিন ধরেই কাজ চলছে। তবে তা জেলার অন্য অংশে।’’

Fossil

ডাইনোসরের এই জীবাশ্ম নিয়ে আনন্দমার্গীরা ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলা, হিন্দি, ইংরাজিতে বই প্রকাশ করে। পাহাড়ের ওই জীবাশ্ম কেন ডাইনোসরের তা ব্যাখ্যা সহকারে তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। আনন্দমার্গের সদর দপ্তরের রেক্টর মাস্টার আচার্য নারায়ণানন্দ বলেন, ‘‘এটি তুষার যুগের পরবর্তীকালের ফসিল। অস্থি পাহাড় থেকে উদ্ধার হওয়া ডাইনোসরের লেজের জীবাশ্মের অংশ কলকাতার লেক গার্ডেন্স-এ গুরুদেব আনন্দমূর্তিজির বাসভবন মধুমালঞ্চর সংগ্রহালয়ে রাখা রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন আগেকার শাল জাতীয় বৃক্ষ, বড় জন্তু-জানোয়ারের কোমর, বাঘের মুখ, সিংহ জাতীয় জীবের পায়ের নিচের অংশ। এছাড়া অতি প্রাচীন কঠিন শিলা। সেই সঙ্গে রুপো, অভ্র মিশ্রিত শিলাও। তখন থেকেই এই পাহাড়ের নাম দেওয়া হয় অস্থি পাহাড়।

তাই এই পাহাড়ে যা জীবাশ্ম এখনও রয়েছে আমরা চাই তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কার্বন রেটিং, অন্বেষণ, গবেষণা। রাজস্থানে যদি এই কাজ হয়ে থাকে তাহলে ছোটনাগপুর মালভূমির এই এলাকায় হবে না কেন?’’ ওই এলাকা তন্ত্রপীঠও। ভূতত্ত্ববিদরা বলেন, হাড়গোড় মাটি, পাথরের সঙ্গে মিশে যায়। মিশে যায় সে হাড়ে থাকা ক্যালসিয়ামও। পড়ে থাকে অবয়ব। তাতে দেখা মেলে আস্তরণ। সাধারণভাবে যা পাললিক শিলার মধ্যে পাওয়া যায়। জঙ্গল ঘেরা দুর্গম অস্থি পাহাড়ে থাকা ওই বস্তুতে একাধিক আস্তরণ রয়েছে। ফলে অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের পর এই বাংলাতেও এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে যেতে চলেছে।

দেখুন ভিডিও:

[আরও পড়ুন: ‘জমি নিয়ে থাকলে ফেরত দিন’, সন্দেশখালি গিয়ে অভিষেকের বার্তা শোনালেন সেচমন্ত্রী]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ