রিন্টু ব্রহ্ম, বর্ধমান: রাজ্যের মহিলাদের স্বনির্ভর করতে বরাবরই উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক প্রকল্প রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মহিলাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে সেভাবেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন মহিলারা।নিজেরাই কাপড় কাটছেন, সেলাই করছেন, বোতাম বসাচ্ছেন, ইস্ত্রি করছেন, তৈরি পোশাক স্কুলে-স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছেন। একছাতার তলায় শুধুমাত্র মহিলাদের এই কর্মকাণ্ড আয়ের নতুন দিশা দেখাচ্ছে জেলাকে। অনুরপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। সরকারের আনন্দধারা প্রকল্প এবং ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি দফতরের প্রকল্পেও সংযুক্ত করা হয়েছে মহিলাদের এই কর্মকাণ্ডকে।
খণ্ডঘোষ ব্লকের মহিলাদের এই উদ্যোগকে আগামী দিনে জেলায় মডেল হতে পারে বলেও জানাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলা শাসক বিজয় ভারতী বলেন, “মহিলারা দৃষ্টান্ত গড়েছেন। খুবই ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন। মহিলারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে যে কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন তা অন্যদেরও প্রেরণা দেবে। প্রশাসন সবরকম সহযোগিতা করছে।” মূলত স্কুলের পোশাক তৈরি করছেন ও তা সরবরাহ করছেন। ইতিমধ্যে স্কুলের পোশাক তৈরি করতে প্রায় দেড় কোটি টাকার বরাতও পেয়েছেন স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর প্রায় ৭০ জন মহিলা।
[আরও পড়ুন : AIDS ছড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ]
জানা গিয়েছে, এই ব্লকের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সারা বছরই নানা সময় নানা কাজ করে থাকেন। শিখেছিলেন সেলাইয়ের কাজ। তাঁরা সকলে একত্রিত হয়েই এখন বরাত নিচ্ছেন ব্লকের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরে পোশাক তৈরির। সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের জন্য পোশাক দেয় রাজ্য সরকার। তাই খণ্ডঘোষ ব্লকের প্রায় ৩৫ জন মহিলা একত্রিত হয়ে ব্লকের ২১৬টি স্কুল থেকে প্রায় ৪৬ হাজার পোশাক তৈরির বরাত নিয়েছেন। যার আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। পরে আরও ৩৫ জন মহিলা যুক্ত হন তাঁদের সঙ্গে।
বরাত পেলেও পোশাক তৈরির কাঁচামাল কিনতে না পারায় সমস্যা হয়েছিল। তখন সরকারি সহায়তায় কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে কিনেছেন কাপড়, সেলাই মেশিন। ব্লকের কর্মতীর্থ ভবনে একটি তলা লিজ নিয়ে তৈরি করেছেন পরিকাঠামো। ইতিমধ্যেই ১২০টি স্কুলে তৈরি পোশাকও তুলে দিয়েছেন মহিলারা। আর তাতেই আয়ের পথ দেখেছেন তাঁরা। আর জেলার মধ্যে তাঁদের এই প্রথম উদ্যোগকেই মডেল করার ভাবনা রয়েছে ব্লক ও জেলা প্রশাসন। কর্মতীর্থে গিয়ে দেখা যায়, মহিলাদের কেউ সেলাই করছেন, কেউ বোতাম লাগাচ্ছেন জামায়, কেউ বা ইস্ত্রি করছেন তৈরি হওয়া জামায়। এই কাজ করেই মাসে এখন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে আয় করছেন মহিলারা। কাজের ফাঁকে পূর্ণিমা পাল, রিনা দে-রা বলেন, “আমরা ভাবতে পারিনি নিজদের উদ্যোগে এত টাকা আয় করা সম্ভব। এখন আমাদের উপর নির্ভর করছে পরিবার। এলাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে সম্মান।”