টিটুন মল্লিক,বাঁকুড়া: কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গ্রেপ্তার এক। বুধবার রাতে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ব্লক কো-অপারেটিভের সম্পাদক নেপাল ঘোড়ুইকে। দুর্নীতির অভিযোগে কোষাধ্যক্ষকেও দায়ী করে তাঁর বাড়িতে চড়াও হন গ্রামবাসীরা। ভাঙচুরের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।

এই ব্লক কো-অপারেটিভে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন ধরে। সেই অভিযোগের তদন্তে গিয়ে অফিসে তালা ঝুলতে দেখে ফিরতে হয়েছিল ব্লকের কো–অপারেটিভ ইন্সপেক্টরকে। বড়জোড়ার ওই সমবায় সমিতিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ওই চেয়ারমান ও সম্পাদক-সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে বড়জোড়া থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন জেলার সমবায় আধিকারিক। অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠেছে চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ রাজ, সম্পাদক নেপাল ঘোড়ুই-সহ কুমারকান্তি ঘোষ, দীনবন্ধু মণ্ডল, সৌরভ কেশ, বুদ্ধদেব রায় এবং তন্ময় গোস্বামী। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরেই বড়জোড়ার ওই ভৈরবপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির চারজন সদস্যের নামে এফআইআর করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা সমবায় আধিকারিক পিয়ালি সাহা।
তিনি বলছেন, ‘ওই ঘটনার অভিযোগ জানানো হয়েছে বড়জোড়া থানায়। পুলিশের পাশাপাশি আমরাও তদন্ত করব।’ ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন বড়জোড়ার কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর অলোক কর্মকার।
[ আরও পড়ুন: কিশোরীর সঙ্গে প্রেম করায় মারধর, বিষ খেয়ে আত্মঘাতী যুবক]
সিপিএমের এরিয়া কমিটির তরফে বড়জোড়ার ওই কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একমাসের মধ্যে ওই সমবায় সমিতিতে নির্বাচনের দাবি তুলে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল বড়জোড়ার কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টরকে। স্মারকলিপি হাতে পাওয়ার পরেই তদন্তে নামেন ব্লকের ওই কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর। ঘটনাটি প্রকাশে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে বড়জোড়া জুড়ে। সমবায় বাঁচাও কমিটির জেলা নেতা তরুণ রাজ বলছেন, ‘২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এই সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটি ভেঙে নমিনেটেড পরিচালন কমিটি করে।তারপর থেকেই এই কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিটিতে ঘুঘুর বাসায় পরিণত হয়েছে।’ ১৯৫২ সালে তৈরি বড়জোড়ার এই কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে গত কয়েক বছর ধরে কোনও সাধারণ সভার বৈঠকও হয়নি বলে তার অভিযোগ। এই সমবায় সমিতি মূলত ভৈরবপুর, কমলপুর, কোটগ্রাম, জমাদার গ্রাম, বড়জোড়া, ব্রাহ্মণডিহা-সহ একাধিক গ্রামে কৃষি উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা
ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত।
[ আরও পড়ুন: তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে তুফানগঞ্জে বোমাবাজি, জখম ৫ পুলিশকর্মী]
এহেন আর্থিক বেনিয়ম সামনে আসায় আগামী একমাসের মধ্যে ওই কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে নির্বাচনের দাবি তুলেছেন বড়জোড়ার সিপিএম নেতা সুজয় চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে এই কৃষি উন্নয়ন সমবায়টিতে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দেওয়ার নামে গরিবগুর্বো মহিলাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে সেই টাকাও খাতায় জমা পড়েনি।
এছাড়া অভিযোগ এই সমবায় সমিতিতে পরিচালন কমিটির সদস্যদের মধ্যে জনৈক এক ব্যক্তি এই সমবায় সমিতিরই আরএলআই প্রকল্পে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এহেন ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায় বলছেন, চাষিদের কোনও ক্ষতি মেনে নেওয়া হবে না। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।