ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: দুগ্গা সহায়। সবার ক্ষেত্রে হোক না হোক কারও কারও ক্ষেত্রে তো বটেই। যেমন হাবড়ার রাজ, মিঠুন, বাপির (পরিবর্তিত নাম) মতো ১৪ জন অনাথ শিশুর ভরণপোষণ করছেন ‘মা দুগ্গা’ নিজে। কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে সঙ্গে নিয়ে দেশ-বিদেশ পাড়ি দিয়ে এই পিতৃমাতৃহীন শিশুদের মাথার উপর ছাদ ও মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন ‘মা’।
কেউ বুলি ফোটার আগেই বাবা-মাকে হারিয়েছে। কেউ জন্ম থেকেই অনাথ। এমনও শিশু আছে যাদের জন্মের পরই ব্যাগে ভরে রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল পরিবার। কারও আবার বাবা-মা আছে, কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব নিতে নারাজ। এমনই ১৪ জন কচিকাঁচার ঠিকানা এখন হাবড়ার ‘স্বপ্ন বয়েজ হোম’। বাণীপুর ষষ্ঠমুখী সংস্থা নামে একটি সমাজসেবী সংগঠন এই হোমটি দেখাশোনা করে। এই শিশুদের যাবতীয় খরচ চালান সংগঠনের ২৫ জন সদস্য। তার মধ্যে সিংহভাগই জোগান সিংহবাহিনী ‘মা দুগ্গা’।
২০০০ সালে বনগাঁয় ভয়াবহ বন্যার পর হাবড়ার বাণীপুরের ছ’জন যুবক মিলে সংগঠনটি গড়ে তোলে। বর্তমানে ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার, সুরজিৎ দাস, গোলোক ভট্টাচার্য, সোমনাথ সিকদার ও জগন্নাথ সাহা নামে পাঁচ যুবকের কাঁধে তার দায়িত্ব। ওঁদের চারজন ব্যবসায়ী। ইন্দ্রজিতের পথ একটু আলাদা। তিনি শিল্পী। তাঁর তুলির টানেই জেগে ওঠেন মা দুর্গা। প্রতিবছরই নতুন নতুন ভাবনায় দেবীকে অভিনব রূপ দেন তিনি। তাই রাজ্যে তো বটেই, বাইরেও তাঁর শিল্পের ব্যাপক কদর। প্রায় ফি বছরই আগরতলায় পাড়ি দেয় ইন্দ্রজিতের তৈরি দেবীপ্রতিমা। এছাড়া কলকাতা-সহ শহরতলির বেশ কয়েকটি নামকরা পুজোর প্রতিমাও তৈরি করেন তিনি। আর সেই টাকা দিয়েই স্বপ্ন বয়েজ হোমের শিশুদের দিনযাপন।
তবে ইন্দ্রজিৎ একা নন, সুরজিৎ, গোলোক, সোমনাথ ও জগন্নাথও নিজেদের আয়ের একটা বড় অংশ দেন হোমে। ইন্দ্রজিৎ বলেন, “আমরা এই ক’জন ক্লাস নাইন থেকে টিফিনের পয়সা জমিয়ে সমাজসেবার কাজ করতাম। বড় হয়ে নিজেদের উপার্জনের টাকা দিয়ে বাণীপুর ষষ্ঠমুখী সংস্থা গড়ে তুলি। বনগাঁর বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। স্বপ্ন বয়েজ হোম ছাড়াও সমাজের সমস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। এবার পুজোয় হাবড়ার সমস্ত মানসিক ভারসাম্যহীনকে কম্বল দেওয়া হবে।” ইন্দ্রজিতের বাকি বন্ধুরা জানান, এই স্বপ্ন বয়েজ হোম এখন তাঁদের সংসারের একটি অংশ।
২০১৫ সালে সোনা ও হিরের দুর্গা বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ। চার কোটি টাকার মূর্তিটি বায়না করেছিল আগরতলার ছাত্রবন্ধু ক্লাব। বিমানে চেপে সপরিবার ত্রিপুরায় উড়ে গিয়েছিলেন উমা। তার আগের বছর মুক্তো দিয়ে প্রতিমা বানিয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ। এবছর শ্বেতপাথরের প্রতিমা বানাচ্ছেন। তবে শ্বেতপাথরের প্রতিমাটি এরাজ্যের কোনও মণ্ডপে দেখা যাবে না। বুদ্ধমূর্তির আদলে তৈরি দেবীপ্রতিমাটি চলে যাবে আগরতলার ছাত্রবন্ধু ক্লাবের পুজো মণ্ডপে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.