Advertisement
Advertisement
Howrah Hospital

রবি-কবিতায় কমল ব্যথা, হাওড়ার হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার খুদের

আট বছরের বাচ্চাটির দুই চোখেই ছানি ছিল। যা এই বয়সে বিরল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

Howrah Hospital uses RN Tagore's poem to ease pain
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:April 8, 2024 1:18 pm
  • Updated:April 8, 2024 1:18 pm

অভিরূপ দাস: সম্পূর্ণ অজ্ঞান করতে হবে। দশ বছরের নিচে চোখের অস্ত্রোপচারে নিয়ম এমনটাই। এদিকে জেলা হাসপাতালে স্বল্প পরিকাঠামোয় সে ব‌্যবস্থা নেই। মুশকিল আসান হলেন কবিগুরু। মৃত‌্যুর তিরাশি বছর পরে অ‌্যানাস্থেটিস্টের কাজ করল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। অস্ত্রোপচার চলাকালীন রবীন্দ্রনাথের কবিতা ব‌্যথা কমাল আট বছরের অর্ঘ‌্য দলুইয়ের। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সমরেশ পণ্ডিতের কথায়, বাচ্চাটির মনের জোরকে স‌্যালুট। ধন‌্যবাদ সিস্টারকেও। উনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমরা চাষ করি’ কবিতা বলছিলেন। তখন অস্ত্রোপচার করা হয়। একটুও ঘাবড়ায়নি অর্ঘ‌্য।  

হুগলি জেলার খানাকুলের বাসিন্দা অর্ঘ‌্য দলুইয়ের (৮) স্কুলে লেখাপড়া করতে সমস‌্যা হচ্ছিল। স্কুলের শিক্ষকরাই প্রথমে তা ঠাওর করেন। ব্ল‌্যাকবোর্ডের লেখা সে ঠিকমতো খাতায় টুকতে পারছে না। অর্ঘ‌্যর অভিভাবককে ডেকে তাঁরা জানান বিষয়টি। শিশুটিকে নিয়ে আসা হয় গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। ডা. সমরেশ পণ্ডিত পরীক্ষা করেন শিশুটির চোখ। চিকিৎসকের কথায়, বাচ্চাটির দুই চোখেই ছানি ছিল। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় ডেভলপমেন্টাল ক‌্যাটারাক্ট। সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে ছানির সমস‌্যা দেখা যায়। এত অল্প বয়সে চোখে ছানি বিরল।

Advertisement

দ্রুত অস্ত্রোপচার না হলে বিপদ। স্কুলে লেখাপড়াতেও পিছিয়ে পড়ছে অর্ঘ‌্য। নিয়ম অনুযায়ী দশ বছরের নিচে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করতে হলে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে তা করতে হয়। আট বছরের অর্ঘ‌্যর চোখে লেন্স বসাতে গেলেও সম্পূর্ণ অজ্ঞান করতে হত। কিন্তু জেলা হাসপাতালে শিশুকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার পরিকাঠামোর অভাব। শিশুটিকে দ্রুত আরআইও-তে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসকরা।

Advertisement

কলকাতার রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ‌্যালমোলজিতে বিশ্বমানের চিকিৎসা মেলে। কিন্তু কলকাতায় নিয়ে যাবে কে? অর্ঘ‌্যর বাবা মাঠে চাষের কাজ করেন। কাজের চাপ বিপুল। কলকাতায় নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করানোর সময় পাচ্ছিলেন না। অর্ঘ‌্যকে নিয়ে তাঁর মা ফের আসেন উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের আউটডোরে। ‘‘ডাক্তারবাবু, প্লিজ, তাড়াতাড়ি এখানেই আমার অস্ত্রোপচার করে দিন।’’বাচ্চাটির জেদের কাছে হার মানেন চিকিৎসকরা।

[আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের জোড়া চাপ, এবার কাঁথির ৩০ তৃণমূল নেতাকে CBI তলব!]

ডা. সমরেশ পণ্ডিতের কথায়, বাচ্চাটা তো বলল। আমাদের মাথায় ঘুরছিল অন‌্য চিন্তা। শিশুকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করতে গেলে যে পরিকাঠামো দরকার তা তো নেই হাসপাতালে। অ‌্যানাস্থেটিস্ট বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, বড়জোর কিছুক্ষণের জন‌্য শিশুটিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায়। কিন্তু তাতে শরীরের অন‌্যান‌্য প‌্যারামিটারগুলো ঠিক থাকবে তো? ঘাবড়ে গিয়ে বাচ্চাটির নার্ভ ফেল করে যদি! দায়িত্ব নেন সিস্টার লিপিকা ভট্টাচার্য‌। অস্ত্রোপচারের আগে বাচ্চাটির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ গল্প করেন সিস্টার। সাহস দেন। ‘‘ভয় পাবি না একদম। আমরা পাশেই আছি।’’

এর পর ছোট্ট একটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় চোখের পাশে। বাকি কাজটা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। ‘‘অস্ত্রোপচার চলাকালীন ওকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা শোনাচ্ছিলেন সিস্টার। কথা বলছিলেন অনর্গল। বাচ্চাটির মন ঘুরিয়ে রাখার জন‌্য ধন‌্যবাদ সিস্টারকে। অসংখ‌্য ধন‌্যবাদ কবিগুরুকেও।’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

  • হুগলি জেলার খানাকুলের বাসিন্দা অর্ঘ‌্য দলুইয়ের (৮) স্কুলে লেখাপড়া করতে সমস‌্যা হচ্ছিল। স্কুলের শিক্ষকরাই প্রথমে তা ঠাওর করেন। ব্ল‌্যাকবোর্ডের লেখা সে ঠিকমতো খাতায় টুকতে পারছে না। অর্ঘ‌্যর অভিভাবককে ডেকে তাঁরা জানান বিষয়টি।
  • শিশুটিকে নিয়ে আসা হয় গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। ডা. সমরেশ পণ্ডিত পরীক্ষা করেন শিশুটির চোখ। চিকিৎসকের কথায়, বাচ্চাটির দুই চোখেই ছানি ছিল।
  • চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সমরেশ পণ্ডিতের কথায়, বাচ্চাটির মনের জোরকে স‌্যালুট। ধন‌্যবাদ সিস্টারকেও। উনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আমরা চাষ করি' কবিতা বলছিলেন। তখন অস্ত্রোপচার করা হয়। একটুও ঘাবড়ায়নি অর্ঘ‌্য।