Advertisement
Advertisement
শিক্ষক দিবসে উদ্ধার ছাত্র

দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে বাবা-মা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করলেন শিক্ষকরা

শিক্ষক দিবসে মুক্তির স্বাদ পেল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শামিন।

Nadia: teachers rescue class seven special child in teachers day
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:September 6, 2019 9:39 am
  • Updated:September 6, 2019 9:39 am

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রটি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসে না। অভিভাবকদের মিটিংয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন একজন শিক্ষিকা। আর তখনই জানা যায়, শামিন শেখ নামে ওই ছাত্রটির স্কুলে আসার মত শারীরিক বা মানসিক অবস্থা নেই । সে নিজে হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে পারে না। স্কুলে আসার মতো শারীরিক সক্ষমতা তার না থাকার কারণেই এই দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি। তা জানার পরেই বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসে ওই ছাত্রের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

[আরও পড়ুন: ‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে দিল্লি যাত্রা দেবশ্রীর’, নয়া দাবি দিলীপের]

কৃষ্ণগঞ্জ থানার পাবাখালি গ্রামের ইদ্রিস শেখ ও মর্জিনা বিবির একমাত্র ছেলে শামিনের বয়স এখন প্রায় ষোল বছর। সামান্য মাঠে কাজ করে সংসার চালাতে হয় ইদ্রিস শেখকে। সাংসারিক বেশ কিছু কাজে ছেলেকে বাড়িতে রেখে বাইরে বেরোতে হয় শামিনের মা মর্জিনা বিবি কে । ঘরে পায়ে দড়ি বেঁধে রাখা হয় শামিনকে। তার নিজের পায়ে হাঁটা চলার ক্ষমতা একেবারেই নেই। হামাগুড়ি দিয়ে কোনওরকমে এগিয়ে যেতে হয়। এই অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে তো আর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ছেলেকে ঘরে বেঁধে রেখে যান তার মা। কিছুদিন আগে পর্যন্ত শামিনকে কোলে করে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছেন মা। কিন্তু ইদানিং তা আর সম্ভব হচ্ছে না ছেলের কিছুটা ওজন বৃদ্ধি ঘটায় । মর্জিনা বিবি জানিয়েছেন,’ জানি, ছেলেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখাটা ঠিক নয়। কিন্তু কী করব? আমার স্বামী মাঠে কাজ করতে যান। আমাকে দোকান বাজারে যেতে হয়। ও যদি হামাগুড়ি দিয়ে কোথাও চলে যায়, ওকে যদি কুকুর কামড়ে দেয়, তখন কী হবে? সেই ভেবেই ওকে ঘরে বেঁধে রেখে যাই । তবে শিক্ষকরা আমাকে এসে বুঝিয়েছেন । আমি বুঝতে পেরেছি, ছেলেকে এইভাবে ঘরে আর বেঁধে রাখব না ।’ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হলেও শামিন শিবনিবাস শ্রী শ্রী মোহনানন্দ হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির নথিভুক্ত ছাত্র । অথচ সে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসে না। শিক্ষক দিবসের আগের দিন অভিভাবকদের বৈঠকে যাননি শামিনের বাবা-মা কেউ। তখনই প্রশ্ন জেগেছিল শিক্ষিকা সবিতা হাজরার মনে। তবে শামিনের অবস্থার কথা জানতে পেরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সিদ্ধান্ত নেন, শিক্ষক দিবসে তারা শামিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে বাঁধন মুক্ত করে আবার শিক্ষার জগতে শামিল করবেন ।

Advertisement

teacher

Advertisement

বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে ওই ছাত্রটিকে। দীর্ঘদিন ধরে তাকে এভাবেই বেঁধে রাখা হয় । অমানবিকতার ওই ছবি দেখে কিছুটা শিঁউরে উঠেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা । তারা নিজেরাই ওই ছাত্রের শরীরের বাঁধন খুলে দেন। তার হাতে তুলে দেন ফল ,মিষ্টি এবং কিছু উপহার । সাধারণত শিক্ষক দিবসে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মান জানাতে ছাত্র-ছাত্রীরাই সাধ্যমত উপহার দিয়ে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অবশ্য এক্ষেত্রে ঘটল ঠিক তার উলটো ঘটনা । বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ছাত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করেই শিক্ষক দিবস পালন করলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের শিবনিবাস শ্রী শ্রী মোহনানন্দ হাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ।

[আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষার পাঠ, শিক্ষক দিবসে পথচলা শুরু ‘রাধাকৃষ্ণণ স্যাপলিং ব্যাংক’]

ওই স্কুলের টিচার ইনচার্জ সমীর কুমার ঘোষ জানিয়েছেন,”সত্যিই ,এবার আমরা একটু অন্যরকম ভাবে শিক্ষক দিবস পালন করলাম। শামিনের নিজের পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। ছাত্রটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আমরা শিক্ষক দিবসে ওই ছাত্রের বাঁধন খুলে দিয়েছি। ছাত্রটি খুঁজে পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ। তার হাতে সামান্য কিছু উপহার তুলে দিতে পেরেছি। বাবা মাকে বলেছি, শামিনের পড়াশোনার জন্য যা সাহায্যের প্রয়োজন, তা আমরা করব। কৃষ্ণনগর থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রটির জন্য হুইল চেয়ার আনানোর ব্যবস্থা করা হবে। প্রতি সপ্তাহে কোন একজন শিক্ষক ওই ছাত্রটিকে বাড়িতে গিয়ে পড়িয়ে আসবেন। এই কাজটি করতে পেরে শিক্ষক দিবসের যেন একটা সার্থকতা খুঁজে পেলাম।” 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ