Advertisement
Advertisement

Breaking News

Netaji Subhas Chandra Bose

‘নীলকণ্ঠ নিবাসে’র আশ্রয়ে ছিলেন জ্বরে কাবু নেতাজি, সেই বাড়িতে পা রেখে আবেগাপ্লুত উত্তরসুরীরা

পুরুলিয়ায় নেতাজির ঘরটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ, সাহায্যের আশ্বাস সুগত বসু, সুমন্ত্র বসু।

Netaji Subhas Chandra Bose: Descendants meet the family in Purulia who gave shelter to sick patriot | Sangbad Pratidin

ছবি: সুনীতা সিং।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 25, 2023 3:45 pm
  • Updated:January 6, 2024 4:02 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাঝখানে ৮৪ টি বছর। দুই পরিবার, দুই প্রজন্মের পুনর্মিলন। আর তাতেই উসকে উঠল দেশনায়কের আবেগ, স্মৃতি। পুরুলিয়ার নামোপাড়ায় ‘নীলকণ্ঠ নিবাস’। এই বাড়িতেই একসময় নেতাজি আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরিবারের কর্তা নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সে অর্থে ‘আশ্রয়দাতা’। আজ অন্তর্হিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose)। নেই নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায়ও। রয়েছেন তাঁদের উত্তরসূরীরা। ৮৪ বছর পর পুনর্মিলন হল দুই পরিবারের। বৃহস্পতিবার এই বাড়িতে এলেন নেতাজির দুই পৌত্র সুগত বসু, সুমন্ত্র বসু।

তখন মানভূম কংগ্রেসের তৎকালীন সহ-সভাপতি নীলকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে রাত্রিযাপন করেছিলেন নেতাজি। আর আজ সেই বাড়িতেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দুই পৌত্র ড.সুগত বসু ও ড.সুমন্ত্র বসু পা রেখে পুরুলিয়ার (Purulia) তৎকালীন প্রথম পুরপ্রধান তথা আইনজীবী নীলকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় দেশনায়কের ওই স্মৃতি বিজড়িত ভবন যেন পূর্ণতা পেল। সেদিন যেমন নেতাজিকে পেয়ে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল এই পরিবার। বৃহস্পতিবার বিকালে নেতাজির পরিবারের দুই সদস্যকে পেয়েও আনন্দে ভাসলেন তাঁরা। অতীতের স্মৃতিকথায় দুই পরিবারই যেন নস্টালজিক হয়ে ওঠে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে নেমেই রেকর্ড, সোনা জয়ের আরও কাছে নীরজ]

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই পরিবারের যে ঘরে রাত কাটিয়েছিলেন সেই ঘর এখন ভাঙাচোরা, ধ্বংসাবশেষ। ওই ঘরকে যাতে সংরক্ষণ করে ‘হেরিটেজ’-এর (Heritage) তকমা দেওয়া যায় সেই বিষয়ে নেতাজির পরিবারের দুই সদস্য সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে এদিন আশ্বাস দেন। আর তাতেই খুশি উপচে পড়ল নীলকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়ের ওই পরিবারে। শুধু ওই পরিবারের অলিন্দে নয়। এমন আশ্বাসে সাবেক মানভূমও যেন উচ্ছ্বসিত। খুশি এই জেলায় কয়েক মাস আগে গঠিত হওয়া ‘সুভাষচন্দ্র বসু স্মৃতি রক্ষা সমিতি’-ও।

Advertisement
ছবি: সুনীতা সিং।

সাবেক মানভূমের এই পুরুলিয়ায় চার চারবার পা রেখেছিলেন নেতাজি। রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্যই তিনি বারবার এখানে আসেন। সেই সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে আশ্রয় দেওয়া মানে দেশদ্রোহীর তকমা পাওয়া! কারণ তখন ব্রিটিশ শাসন। ১৯৩৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। নবগঠিত ফরওয়ার্ড ব্লক দলের সাংগঠনিক শক্তির বিকাশ ও প্রসারের কাজে শহর পুরুলিয়ার নামোপাড়ায় এই নীলকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে রাত কাটিয়েছিলেন নেতাজি। জ্বরে (Fever) কাবু ছিলেন তিনি। পরের দিন সামান্য কিছু খাবার খেয়ে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। ওই জ্বর নিয়েই জেলা জুড়ে মোট ৩০ টি সভা করেছিলেন বলে তখনকার নানা পত্র-পত্রিকা থেকে জানা যায়। তাঁর গা পুড়ে গেলেও চা খেয়ে সেই সভাগুলি করেন। সেদিন কোনও গাড়ি পাওয়া যায়নি। যে গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ (British Police)তা দখল করে রাখে। পরে পঞ্চকোট রাজ পরিবারের সদস্য প্রকৃতিশ্বরলাল সিং দেও আগের দিনে কেনা নতুন গাড়িতে করে নেতাজিকে সাবেক মানভূম ঘুরিয়েছিলেন।

এইসব কথা-ই ওই চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় নেতাজির পরিবারের ওই দুই সদস্যকে জানান। সেদিন এই শহর-সহ সমগ্র পুরুলিয়ার মানুষ এই নামোপাড়ার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছিলেন। নেতাজির সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। সেই গ্রুপ ফটো আজও বাঁধানো রয়েছে। এদিন ওই ছবি নেতাজির দুই পৌত্রকে উপহার দেন। যা হাতে পেয়ে খুশিতে ভরে ওঠেন তাঁরা। লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স-এর অধ্যাপক ড. সুমন্ত্র বসু বলেন, “নীলকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়ের এই বাড়িতে স্বয়ং নেতাজি পা রেখেছিলেন। ওই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের উত্তরসূরিদের সঙ্গে আলাপ হল। খুবই ভাল লাগছে। তাঁরা সেই অতীতের স্মৃতি যত্ন করে রেখেছেন। এই পরিবারের যে ঘরে নেতাজি ছিলেন তা অবশ্য ভেঙে গিয়েছে। তাঁদের কথামতো এই ঘরটি যাতে সংরক্ষণ করে রাখা যায় সেজন্য আমরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করব।”

ছবি: সুনীতা সিং।

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সুগত বসুও পুরুলিয়ার মানুষের আবেগ দেখে আপ্লুত হয়ে যান। তাঁরা এদিন ওই বাড়িতে বসেই জল, চা পান করেন। তাঁদের পদার্পণে ধন্য হলেন এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের উত্তরসূরীরা। ওই পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আজ বোধহয় বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল। পূর্ণতা পেল। তাঁরা নেতাজির তৃতীয় প্রজন্ম। আমরা নীলকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়ের চতুর্থ প্রজন্ম। দুই পরিবারের এই মিলনে আমরা উচ্ছ্বসিত, অভিভূত।নেতাজি আমাদের বাড়িতে যে ঘরে ছিলেন তাঁকে সংরক্ষণ করার জন্য তাঁরা পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা যে কতটা খুশি বলে ঠিক বোঝাতে পারব না।”

[আরও পড়ুন: যান্ত্রিক ত্রুটিতে বাতিল ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’, বিকল্প ট্রেনে মালদহ গেলেন রাজ্যপাল]

ওই দিন নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা সুভাষচন্দ্র বসুর  ভাইপো শিশির বসুর পুত্রদ্বয়কে বরণ করে নেন। তাঁরা ওই বাড়িতে পা রেখেই দেশনায়কের গলায় মালা দেন। নেতাজির ওই ঘর সংরক্ষণ হবে এই আশ্বাস পেয়ে খুশি এই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তথা সাংস্কৃতিক কর্মী সুদিন অধিকারী। তিনি বলেন, “সেদিন আমার বাবা রামানন্দ অধিকারী নেতাজিকে কাছ থেকে দেখেছিলেন। যদিও বাবা তখন ১২ বছরের বালক। তবে নেতাজিকে নিয়ে পুরুলিয়ার একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের যে ঘরে নেতাজি ছিলেন এবার বোধহয় সত্যিই সেই ঘর সংরক্ষণ হবে।” এই আশায় সেই দিনের যেন অপেক্ষা শুরু সাবেক মানভূমের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ