সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: করোনা আতঙ্কে কাঁপছে বঙ্গ। আশঙ্কা সত্যি করে এবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী বসন্তোৎসব বাতিল হয়ে গেল। মারণ জীবাণু সংক্রমণের ভয়ে এবছর আর ফাগের রঙে রং মেলাতে পারবেন না শান্তিনিকেতন তথা বঙ্গবাসী।আজ সন্ধেবেলা এই খবর জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তা ছড়িয়ে পড়তেই মনখারাপ অনেকের।
আশঙ্কা ছিলই। শান্তিনিকেতনের ঘরে ঘরে এনিয়ে ফিসফাস চলছিল। তবে কি এবার দোল খেলা যাবে না? রঙে রঙিন হয়ে চেনা-অচেনা জনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে না? শুক্রবার বসন্তোৎসবের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর অবশেষে ঠিক হয়, এবার আর বসন্তোৎসব হবে না। বৈঠক শেষে বেরিয়ে উপাচার্য জানান, ইউজিসি’র তরফে চূড়ান্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে যে এক জায়গায় বেশি জনসমাগম করেই দোল খেলা নিরাপদ নয়। তাই ঐতিহ্যের দোল এবার আর বিশ্বভারতীতে হবে না।
[আরও পড়ুন: অশালীন ভাষায় ‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’ গাইল ছাত্রীরা, রবীন্দ্রভারতীর পর বিতর্কে মালদহের স্কুল]
আসলে, বিশ্বভারতীর দোল তো শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমবদ্ধ থাকে না। কবিগুরুর হাতে তৈরি প্রতিষ্ঠানটির দ্বার ওইদিনের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় সকলের জন্য। সবার রঙে রং মেলানোর ডাক পাঠায় মেলার মাঠ। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে যা অন্যতম আকর্ষণের বিষয়। অনেকেই শুধুমাত্র এই উৎসবে শামিল হবেন বলেই একবেলার জন্য হলেও, ছুটে যান শান্তিনিকেতনে। কিন্তু এছর পরিস্থিতি ভিন্ন। নোভেল করোনা ভাইরাস যেভাবে পৃথিবী জুড়ে থাবা বসাচ্ছে, তাতে নিরাপদ নয় কোনও জায়গাই। বিশেষত সংস্পর্শেই যেখানে এই জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা, সেখানে মানুষে-মানুষের স্পর্শেও ঝুঁকি থেকে যায়। সেই কারণেই ইউজিসি’র এমন নির্দেশিকা বলে জানাচ্ছেন উপাচার্য। দোল খেলতে গিয়ে যাতে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হন, সেটাই মূল লক্ষ্য প্রশাসনের। তাই এমন বিধিনিষেধ।
এদিকে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে আরও সতর্ক রাজ্যের বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়ে গেল পশ্চিম মেদিনীপুরে। এদিন বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত জেলাশাসক, সিএমওএইচদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে গুরুত্বপূ্র্ণ বৈঠক করেছেন। চালু করেছেন হেল্পলাইন নম্বর। পাশাপাশি জেলায় অতিরিক্ত আরও দুটি সহায়তা নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল ১০৭৭ এবং ০৩২২২–২৭৫৮৪। করোনা সংক্রান্ত যে কোনও প্রয়োজনে এখানে ফোন করা যেতে পারে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেছেন যে চীন, ইরান, তেহরান প্রভৃতি দেশ থেকে ১৭ জন এই জেলায় ফিরেছেন। তাঁদেরকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ১৪ দিন নিজেদের বাড়িতেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনটি সংক্রামক বিভাগ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। চারজন কর্মীকে সবসময় প্রস্তুত রাখা হচ্ছে, যাঁরা সন্দেহজনক কোনও খবর এলেই বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করবেন।
[আরও পড়ুন: নারী দিবসের উপহার, উত্তরবঙ্গের প্রথম মহিলা পরিচালিত ডাকঘর চালু রায়গঞ্জে]
ওদিকে, বিদেশ থেকে ফেরা বাসিন্দাদের উপর বাড়তি নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। করোনা নিয়ে যাতে কেউ গুজবে কান না দেন তারও প্রচার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া নিয়ম সকলেই যাতে মেনে চলেন তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুমও। বাইরে থেকে আসা মানুষজনের জন্য স্টেশনেও নজরদারি ও চেকআপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলায় এখনও পর্যন্ত ২৭ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে, যাঁরা সম্প্রতি বিদেশ থেকে এসেছেন।
শুক্রবার বিকেলে জেলাশাসক বিজয় ভারতী সরকারি আধিকারিকদের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানেই তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা দেন সকলকে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ভাইরাস রুখতে মাস্ক ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর। কিন্তু জেলায় পর্যাপ্ত মাস্কের সরবরাহ নেই বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে। যদিও জেলা শাসক জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত মাস্ক মজুত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক নিয়ে কালোবাজারি রুখতেও সতর্ক স্বাস্থ্য দপ্তর।