শুভদীপ রায়নন্দী, শিলিগুড়ি: জঙ্গলমহলের পর এবার উত্তরবঙ্গে CAA-NRC বিরোধী আন্দোলনের আঁচ ছডিয়ে দিতে পদযাত্রায় শামিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার শিলিগুড়ির মৈনাক টুরিস্ট লজের বাইরে থেকে বাঘাযতীন পার্ক ময়দান পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা জনতাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটলেন তিনি। পদযাত্রা শুরুর আগে মঞ্চ থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার সময় এদিন কার্যত নজিরবিহীন ভাষায় মোদিকে আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, ”কথায় কথায় পাকিস্তানের উল্লেখ করেন কেন? উনি কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত? হিন্দুস্তানের কথা ভুলে গিয়েছেন? আমরা কেউ পাকিস্তানের কথা শুনতে চাই না।”
শুক্রবার পদযাত্রার নির্ধারিত সময় দুপুর ১২টা থাকলেও, তা প্রায় ঘণ্টাখানেক দেরিতে শুরু হয়। মৈনাক টুরিস্ট লজের বাইরে অর্থাৎ পদযাত্রা স্থলের মঞ্চে উঠে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই সকলকে ইংরাজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। এরপর সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, ”এই মুহূর্তে আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ভবিষ্যতে সকলের ঠিকানা থাকবে কি না। CAA, NRC, NPR-এর নামে ঠিকানা কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। কাউকে যাতে ঠিকানা হারাতে না হয়, তার জন্য জোট বাঁধুন। স্বাধীনতার পরও কেন নাগরিকের পরিচয় পত্র দিতে হবে?”
[আরও পড়ুন: বাংলার ট্যাবলো বাদ দিয়ে ঠিক করেছে কেন্দ্র, বিতর্কিত মন্তব্য সায়ন্তনের]
তিনি আরও অভিযোগ তোলেন, এসবের নামে মানবিকতা হরণের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা মানবতার বড় লজ্জা। এরপরই প্রায় নজিরবিহীন ভাষায় মোদির উদ্দেশে মমতা বলে ওঠেন, ”খাবার চাইলে, চাকরি চাইলে, অধিকারের কথা বললে পাকিস্তান যাও। যে কোনও প্রতিবাদ করলেই বলছে, পাকিস্তানে চলে যাও। এত পাকিস্তানের কথা কেন? কীভাবে তুলনা করেন? লজ্জা করে না? পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের মতো কথা বলছেন উনি। হিন্দুস্তানের কথা কি ভুলে গিয়েছেন?কিন্তু আমরা পাকিস্তানের কথা শুনতে চাই না। আমরা হিন্দুস্তানের মানুষ।” এ প্রসঙ্গে তিনি দু’দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির তুলনাও করেছেন।
কেন্দ্রবিরোধী যে কোনও কথা বললেই বিজেপি নেতাদের গলায় এই অভিযোগে শোনা গিয়েছে যে তাঁরা পাকিস্তানের মতো কথা বলা হচ্ছে অথবা প্রতিবাদের সুরে পাকিস্তানের ছোঁয়া। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নিজেও বৃহস্পতিবার কটাক্ষের সুরেই বলেছেন যে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর প্রতিবাদেও যেন সুর চড়ানো হয়। আজ তার পালটা হিসেবেই মমতা তাঁকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত’ বলে আক্রমণ করেন, তা স্পষ্ট। এদিনও মিছিল শুরুর আগে তিনি সমবেত জনতাকে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করান।
[আরও পড়ুন: ‘সিস্টেম অনুযায়ী হয়নি, তাই বাদ গিয়েছে’, বাংলার ট্যাবলো নিয়ে সাফাই গাইলেন দিলীপ]
মমতা এও জানান, ৯ তারিখ বারাসত থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত মিছিল করবেন তিনি। ২২ জানুয়ারি রয়েছে পাহাড়ে কর্মসূচি। মমতা বলেন, “স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। চক্রান্তের হাত থেকে, ধর্মান্ধতার হাত থেকে, ভাগাভাগির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এই লড়াই।” যানজটপ্রবণ শিলিগুড়ি শহরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। রাস্তার দু’ধারে সমবেত জনতা তাঁর সঙ্গে পদযাত্রায় শামিল হন। এভাবেই লোকসভায় ভরাডুবির পর পুরভোট ও বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের ঘাসফুল শিবিরকে চাঙা করতে ময়দানে নেমে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেখুন ভিডিও: