সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নকল ঘি তৈরির রমরমা কারবারের পর্দাফাঁস করল বর্ধমান জেলা পুলিশ। মিষ্টির রস বিভিন্ন দোকান থেকে সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ক্ষতিকারক রাসায়নিক, গন্ধ ও রং ব্যবহার করে নকল ঘি তৈরি করা হত। তারপর বড় বড় টিনে ভরতি করে বাজারজাত করা হত। সোমবার বিকেলে বর্ধমানের দুবরাজদিঘির মালিরবাগান এলাকায় নকল ঘি তৈরির কারখানায় হানা দেয় পুলিশ ও জেলা দুর্নীতিদমন শাখা। হাতেনাতে ধরা হয় দুই কারবারিকে।
লোকালয় থেকে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় বেশ কয়েকমাস ধরে এই নকল ঘি তৈরির কারবার শুরু হয়। দিনরাত দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন এলাকার বাসিন্দারা। অনেক দূর পর্যন্ত দুর্গন্ধ যেত। কেউ জানতেন গবাদি পশুর খাবার তৈরি হত, কেউ জানতেন চকোলেট তৈরি হত। কিন্তু নকল ঘি তৈরি হত তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁরা। কারখানায় চারটি বড় বড় চুল্লি রয়েছে। তার আগুন না কি দিনে কোনও সময়ই নিভত না। বহু মানুষ কাজ করতেন। তারপর বড় বড় প্লাস্টিকের ড্রাম ও টিনের ড্রামে ভরতি করে তা গাড়ি করে বাজারে পাঠানো হত। প্রতিদিন প্রচুর পণ্যবাহী গাড়ির যাতায়াত ছিল কারখানায়। লোকালয়ের একটু বাইরে হওয়ায় সেভাবে স্থানীয়রা সন্দেহ করতেন না। গোপন সূত্রে পুলিশ ও দুর্নীতিদমন শাখা নকল ঘি তৈরির করাখানার কথা জানতে পারে। এদিন বিকেলে আচমকা হানা দেন সেখানে। কারখানায় গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশকর্তাদের।
[আরও পড়ুন: বাড়িতে বল খুঁজতে যাওয়ায় কিশোরকে বেধড়ক মার, শূন্যে গুলি প্রাক্তন সেনাকর্মীর]
বর্ধমানের ডিএসপি (সদর) শৌভিক পাত্র বলেন, “গোপনসূত্রে নকল ঘি তৈরির কারখানা রয়েছে খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। ২২৫ কেজি নকল ঘি ও সাড়ে ৪ হাজার ৮০০ কেজি নকল ঘি তৈরির উপকরণ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পচা মিষ্টি, মিষ্টির গাদকে নকল ঘি তৈরিতে মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হত।” এ প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “নকল ঘি তৈরির কারখানার হদিশ মিলেছে। সোমবার হানা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ভেজাল ঘি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।” এখান থেকে নকল ঘি কোথায় যেত, এই চক্রের পিছনে আর কারা কারা রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, শুধু পূর্ব বা পশ্চিম বর্ধমানে জেলা নয় আরও অনেক জেলাতেই এখান থেকে নকল ঘি সরবরাহ করা হত। কারখানার পাশেই একটি বাড়িতে নকল ঘি মজুত করা হত। পুলিশ সেই বাড়িটিও সিল করে দিয়েছে।
যদিও পুলিশকে আসতে দেখে মূল কারবারিরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ২ জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো চক্রটিকে ধরা যাবে বলেই আশা।