Advertisement
Advertisement

Breaking News

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধের পরিবর্তে রোগীদের ‘জল পড়া’র দাওয়াই, সিঙ্গুরে কুসংস্কারের ছায়া

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ?

Prejudice in Health Center at Hooghly
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 16, 2018 8:14 pm
  • Updated:June 16, 2018 8:14 pm

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: সুপার স্পেশ্যালিট হাসপাতাল থেকে শুরু করে কলকাতার নামীদামি বেসরকারি হাসপাতালকে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে সিঙ্গুরের বিঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র৷ সরকারি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও ওষুধের পরিবর্তে রোগীদের দেওয়া হল ‘জল পড়া’৷ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধের পরিবর্তে ‘জল পড়া’ খেয়েই নাকি রোগ সারছে৷

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল হাজারের বেশি মানুষ জলের বোতল হাতে নিয়ে বসে আছেন তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য। সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মাছি তাড়ায়। অথচ শনিবার হলেই সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রকৃত চিত্রটি বদলে যায়। এই দিনটিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে তিলধারণের জায়গা থাকে না। কারণটা হল, এই দিনটিতে চিকিৎসকের বদলে যিশুর বাণী নিয়ে জনসমক্ষে হাজির ফাদার ও সিস্টাররা৷

Advertisement

Advertisement

সকাল দশটার মধ্যে যিশুর এই প্রার্থনা-সভায় সকলকে হাজির থাকতে হবে তবেই তারা রোগ উপশমের ওষুধ পাবেন। সাধারণ মানুষের অসুখ বিসুখ থেকে শুরু করে পারিবারিক সমস্যা, বিবাহিত জীবনের সমস্যা সবকিছু দূর করে দেন এক ভেলকিতেই৷ তবে শর্ত একটাই, এর জন্য বোতলে করে তেল ও জল মিশিয়ে নিয়ে আসতে হবে৷ হাসপাতালেরই সীমানার মধ্যে ফাঁকা মাঠে শামিয়ানা খাটানো। আর তারই নিচে প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে বসে আছে আট থেকে আশি। প্রত্যেকের হাতে বোতল ভর্তি তেল ও জলের মিশ্রণ। সেই বোতল আকাশপানে মুখ করে ধরে থাকতে হবে। সামনে বসে থাকা ফাদার যিশুর বাণী ও মন্ত্রোচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে বোতলের তেল-জল মিশ খেয়ে ওষুধে পরিণত হবে। শরীরের কোনও অংশে ব্যথা থাকলে ওই তেল-জল মালিশ করলে নিমেষে ব্যথা বেদনা উধাও। আপনাকে কোনও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে না, নামী কোম্পানির দামি ওষুধও খেতে হবে না। বিনা পয়সায় রোগের উপশম। কারওর পারিবারে অশান্তি বাড়ির সর্বত্র ওই জল ছিটিয়ে দিন অশান্তি বাড়ি ছেড়ে পালানোর পথ পাবে না। কারওর দাম্পত্য জীবনে যৌনসুখ নেই তারও দাওয়াই এই তেলজল। যিশুরই এক অনুগামী শঙ্কর ধারা জানান, যিশু খ্রিস্টের এই প্রার্থনা তারা শুধু এখানেই নয় বিভিন্ন জায়গায় করে থাকেন। তবে ওষুধ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনও কথা না বললেও সাধারণ মানুষের কাছে ওই তেল-জলের অলৌকিক শক্তি ও গুণাগুণ সম্পর্কে তাঁকে বলতে দেখা গিয়েছে৷

সিঙ্গুরের ধিতারা গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর ভট্টাচার্য জানান, তার ছেলে চার বছর ধরে নার্ভের সমস্যায় ভুগছিলেন৷ ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যেত। কিন্তু এখানে আসার পর প্রভুর দয়ায় নাকি তার ছেলে আর অজ্ঞান হয়ে যায় না। প্রশ্ন উঠেছে, কী করে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গায় এইভাবে দিনের পর দিন এই বুজরুকি চলে আসছে। তবে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। এলাকার শিক্ষিত মানুষের ধারণা, এর পিছনে নিশ্চয় অন্য কোনও কারণ আছে যা আগামিদিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে যার কুপ্রভাব সমাজের উপর পড়বে৷ তাদের দাবি, অবিলম্বে প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ