সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানে ফের কলেজে অধ্যাপক নিগ্রহ। মেমারির পর এবার রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজ। আর এই ক্ষেত্রেও নাম জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র। ক্লাসরুমের মধ্যেই পড়ুয়াদের হাতে মারধর খেয়ে কলেজ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন ওই কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক মিলনচন্দ্র রায়। বর্তমানে তিনি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাড়িতে রয়েছে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। তার আগে কলেজের অধ্যক্ষর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন মিলনবাবু। তার ভিত্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্যর তদন্ত কমিটিও গড়েছে।
অধ্যক্ষ গৌরীশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বলা যাবে কী ঘটেছিল। এদিকে, কলেজে বারবার অধ্যাপক আক্রান্তের ঘটনায় টিএমসিপি-র নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলও। দল কড়া ব্যবস্থা নিতে চাইছে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি কলেজে প্রবেশের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। বহিরাগত ও প্রাক্তন পড়ুয়াদের কলেজে প্রবেশ করতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলে মঙ্গলবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার মিলনবাবুর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। মারধর এতটাই করা হয়েছিল যে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি। পুরো ঘটনা অধ্যক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।” তিনি কবে ফের কলেজে যোগ দেবেন বা আদৌ যোগ দিতে পারবেন কিনা তা নিয়েও চিন্তিত ওই অধ্যাপক। মাসখানেক আগে একইভাবে মেমারি কলেজে আক্রান্ত হয়েছিলেন বাংলা বিভাগের এক অধ্যাপক। তাঁকে মারধরের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি নেতা তথা কলেজের শিক্ষাকর্মী মুকেশ শর্মার। তার রেশ কাটতে না কাটতেই শ্যামসুন্দর কলেজে অধ্যাপক নিগ্রহের ঘটনা প্রকাশ্যে এল।
মিলনবাবু গত ৩০ আগস্ট অধ্যক্ষকে অভিযোগ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “বৃহস্পতিবার ইতিহাস বিভাগে বসে থাকার সময় কলেজের ছাত্র সংসদের ছেলেরা এসে আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। আমি জ্ঞান হারাই। সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে। ঘটনায় আমি খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি।” তারপর কলেজ ছেড়ে রায়গঞ্জের বাড়ি চলে যান মিলনবাবু। সেখানে হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে হয়েছে তাঁকে। এখনও বাড়িতেই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে তাঁর। মিলনবাবু এই কলেজে ২০১০ সাল থেকে অধ্যাপনা করছেন। কলেজের আবাসনেই থাকতেন। আর সেখানে থাকা আর এক অধ্যাপকের সঙ্গে গত ২৬ আগস্ট বিবাদ হয়। দুইজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে সেই বিবাদ মেটানোর নাম করে ছাত্র সংসদের একাংশ মিলনবাবুর কাছে যায় ওইদিন। তারপরই তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
যদিও ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ মাইতি তেমন কোনও ঘটনার কথা জানেন না বলে জানিয়েছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও পাওয়া যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.