সৈকত মাইতি, তমলুক: জীবিতকে মৃত বলে ঘোষণা করে শোকপালন! শোকজ্ঞাপন করেই থামা নয়, মৃত ছাত্রর স্মরণে টানা দু’দিন স্কুল ছুটি দেওয়া হল। আজব ঘটনার সাক্ষী রইল পূর্ব মেদিনীপুরের কল্যাণচক গৌরমোহন ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়ারা। ভুল স্বীকার করে নিলেও বিদ্যালয়ের পরিচালকদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছাত্রর পরিবার।
[ভূত খুঁজতে কুখ্যাত বেগুনকোদরে রাত জাগা শুরু প্রশাসনের]
হতভাগ্য পড়ুয়ার নাম মনোজ মাইতি। দুর্ঘটনায় জখম মনোজ যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তখন তার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ঘটল এমন ঘটনা। মনোজের আত্মার শান্তির জন্য স্কুলে পালিত হল শোকসভা। নীরবতা পালন হল। পাশাপাশি মঞ্জুর করা হয় দুই দিনের ছুটি। নন্দকুমারের শীতলপুর পশ্চিম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্কুল কল্যাণচক গৌরমোহন ইনস্টিটিউশন। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক বৃত্তিমূলক বিভাগের পড়ুয়া মনোজ মাইতি (১৮)। গত ২৫ শে ডিসেম্বর বাইক দুর্ঘটনায় সে গুরুতর হত হয়। এরপর তাকে তমলুকের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ভরতি করা হয় কলকাতার এক বেসরকারি নাসিংহোমে। কোনওভাবে ওই স্কুলের কাছে খবর আসে মনোজ মারা গিয়েছে। সে যখন হাসপাতালে ভরতি, তখন তার স্কুলেই ২৬ শে ডিসেম্বর পালন করা করা হল শোক দিবস। তার আত্মার শান্তির জন্য এক মিনিট নীরবতা পালনও হয়। এই নিয়ে ২৬ ও ২৭ শে ডিসেম্বর স্কুল ছুটিও দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবব্রত হোতা কিছুই বলতে চাইনি। প্রাথমিকভাবে এড়িয়ে যান সংবাদ মাধ্যমকে। পরে অবশ্য তিনি ওই পড়ুয়ার বাড়ি যান। সমবেদনা জানাতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বড় গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে। গোটা ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করে নেন তিনি।
[বদলি হতেই চাকরিতে ইস্তফা দিলেন ভারতী ঘোষ]
এ ব্যাপারে শীতলপুর পশ্চিম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সেক হাসমত আলি জানিয়েছেন বিষয়টি তিনি শুনেছেন, খোঁজ নিয়ে দেখছেন। তবে ছাত্রের পরিবার এই শোকপালনের খবরে অত্যন্ত মর্মাহত। ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে তারা যখন ব্যস্ত তখন বিদ্যালয়ের এমন আচরণ তাদের কাছে নিষ্ঠুর পরিহাসের মতো। মনোজের আত্মীয় হিমাংশু শেখর মাইতি জানান, স্কুলের কোনও পড়ুয়া হয়তো মনোজের মৃত্যুসংবাদ দেয়। তা কোনওভাবে বিশ্বাসও করে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোনও কিছু যাচাই না করে প্রধান শিক্ষকের এমন সিদ্ধান্ত কি ক্ষমার যোগ্য? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জেলার শিক্ষামহলে।
ছবি: রঞ্জন মাইতি