সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মারণ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়ির বাইরে বেরলেই মুখে মাস্ক, রুমাল বা পরিচ্ছন্ন কাপড়ে ঢাকা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু তারপরেও ঝাড়খণ্ড লাগোয়া প্রান্তিক পুরুলিয়ার মানুষজন এই নির্দেশিকা সেভাবে মানছেন না। আর সেই কারণে এবার পথে নেমে আমজনতাকে রীতিমত ‘শাসন’ করলেন স্বয়ং জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। ধমক দিয়ে পথচলতি মানুষকে মুখে মাস্ক, রুমাল, গামছা যেমন বাঁধতে বাধ্য করলেন। তেমনই বিভিন্ন দোকানে সটান ঢুকে খুলে রেখে দেওয়া মাস্ক পরতে বাধ্য করেন কর্মীদের। শুক্রবার বেলার দিকে জেলাশাসকের এভাবে পথে বেরিয়ে নজরদারিতে সবক শিখলেন জনতাও।
শুক্রবার তখন সকাল দশটা হবে। অন্যান্য দিনের মতই শহর পুরুলিয়ার রাঁচি রোডের বাংলো থেকে গাড়ি করে জেলা প্রশাসনিক ভবনে যাচ্ছিলেন জেলাশাসক। গাড়ি থেকেই তাঁর চোখে পড়ে, পথচলতি মানুষজনের মধ্যে অনেকের মুখই মাস্ক বা অন্য কোনও কাপড়ে ঢাকা নেই। ওই অবস্থায় তাঁরা দিব্যি হেঁটে অথবা সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করছেন। সঙ্গে সঙ্গে চালককে গাড়ি থামাতে বলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। দরজা খুলে রাস্তায় নেমে পড়েন তিনি। প্রাথমিকভাবে হকচকিয়ে যান তাঁর সঙ্গে থাকা দুই রক্ষী। তবে তাঁদের চমকের আরও বাকি ছিল।
[আরও পড়ুন: সুরাহা র্যাপিড টেস্টেই, কেরলের পথে হেঁটে করোনাকে জব্দ করা শুরু রাজ্যে]
এরপর একেবারে রাস্তায় নেমে একের পর এক পথ চলতি মানুষকে জেলাশাসক জিজ্ঞেস করেন, “মুখে কেন মাস্ক বা কাপড় বাঁধেননি? জানেন না, পথে বার হলেই মাস্ক বা কোনও কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক হয়েছে?” রাস্তা থেকেই তাঁর নজরে পড়ে, একাধিক বিপণির মালিকও একেবারে খোশমেজাজে তাঁর মাস্ক খুলে ব্যবসার কাজ করছেন। তাঁদেরও ধমক লাগান জেলাশাসক। ধমক খেয়ে তড়িঘড়ি দোকান মালিক, কর্মচারী সকলে মুখে মাস্ক বাঁধতে থাকেন। জেলাশাসকের কথায়, “মুখে মাস্ক, রুমাল, গামছা, কাপড় বাঁধাতে যেমন ধারাবাহিক অভিযান চলবে, তেমনই জেলা জুড়ে এই বিষয়ে মাইকিং হবে।”
[আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে বাধা পরিযায়ী শ্রমিকদের]
এই জেলায় মাস্ক যাতে অমিল না হয়, তাই জেলা প্রশাসন একাধিক ব্লকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের দিয়ে মাস্ক তৈরি করাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ফেস শিল্ডও। সেসব তৈরির পর তা বাজারজাত করা হচ্ছে। এছাড়া একাধিক বেসরকারি সংস্থাকেও এই মাস্ক বানানোর নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। তাছাড়া এই জেলায় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ও এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চকে পথে নামিয়ে নজরদারি চালাতে বলেন, যাতে মাস্কের দাম কোনওভাবেই লাগামছাড়া না হয়। এরপরেও পুরুলিয়া রয়েছে পুরুলিয়াতেই। কোনও সচেতনতাই গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ। এবার স্বয়ং জেলাশাসক পথে নামায় পরিস্থিতি বদল হবে বলে আশা।
দেখুন ভিডিও:
ছবি ও ভিডিও: সুনীতা সিং।