শুভদীপ রায় নন্দী, শিলিগুড়ি: লোকসভা ভোটে পাহাড়ে বিজেপি ভাল ফল করার পরে সুর চড়ালেন বিমল গুরুংরা। অজ্ঞাতবাস থেকে বিবৃতি দিয়ে জিটিএ-র বোর্ড ভেঙে দেওয়ার দাবি তুললেন রোশন গিরি। তাঁর বক্তব্য, ‘জিটিএ আইনে মনোনীত সদস্যদের কোনও জায়গা নেই। রাজ্য সরকার অনৈতিকভাবে মনোনীত সদস্যদের নিয়ে জিটিএ-র বোর্ড গঠন করেছে। লোকসভা ভোটে পাহাড়ের রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে বিপক্ষে গিয়েছে। তাই অবিলম্বে জিটিএ-র বোর্ড ভেঙে দিতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে বিনয় তামাং-কে।’
[আরও পড়ুন: ঘরের মেয়ে মিমির জয়, মিষ্টি বিতরণ-পুজোপাঠে ব্যস্ত জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়া]
লোকসভা ভোটে ফের দেশজুড়ে মোদি-ঝড়। এ রাজ্যে যেমন বেশ কয়েকটি জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের, তেমনি পাহাড়ের দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে জিতেছে বিজেপি। গতবার যখন লোকসভা ভোট হয়, তখন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি ছিলেন বিমল গুরুং। মোর্চার সমর্থনেই দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী এসএস আলুওয়ালিয়া। মাঝের পাঁচ বছরে পাহাড়ের পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে।
২০১৭ সালে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মোর্চার ডাকে অনির্দিষ্টকালের বনধ চলাকালীন হিংসা ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ে। জুন মাসে দার্জিলিংয়ে ভানুভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময়ে গুরুংয়ের গুন্ডাবাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয় পুলিশ। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভানুভবন লাগোয়া এলাকায়। পাহাড়ের হিংসাত্মক আন্দোলনের ঘটনায় মোর্চা তৎকালীন সভাপতি বিমল গুরুং ও সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। গ্রেপ্তারি এড়াতে গা-ঢাকা দেন দু’জনেই। এদিকে গুরুং অনুপস্থিতিতে জিটিএ-তে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসক হন মোর্চার নেতা বিনয় তামাং। বিমল গুরুং ও রোশন গিরি গা-ঢাকা দেওয়ার পর আর নির্বাচন হয়নি। জিটিএ চালাচ্ছেন প্রশাসক ও মনোনীত সদস্যরা।
লোকসভা ভোটের মুখে দার্জিলিংয়ে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচার করতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হন বিমল ও রোশন। কিন্তু, তাঁদের কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট বলে, হাই কোর্টে মামলার শুনানি চলাকালীন বিমল গুরুং ও রোশন গিরিকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। শোনা গিয়েছিল, আইনি রক্ষাকবচ পেয়ে পাহাড়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রাক্তন দুই মোর্চা নেতা। কিন্তু, শেষপর্যন্ত তাঁরা অবশ্য আর পাহাড়ে ফেরেননি।