ধীমান রায়, কাটোয়া: সাতসকালেই সন্দেহজনক ঘটনা৷ গামছায় মুখ বেঁধে, হাতে ভারী ব্যাগ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ল একদল অজ্ঞাতপরিচয়৷ পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে এরুয়ার গ্রামে বোমাবাজি ও তার জেরে দুই দুষ্কৃতীকে গণপিটুনির পর শনিবার সকাল থেকে এই ভিডিওটিই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷ যা ঘিরে ছড়িয়েছে আতঙ্ক, উঠেছে হাজারও প্রশ্ন৷
ওরা কারা? শনিবার সকাল হতে না হতে একটি দৃশ্য দেখে এরুয়ার গ্রামবাসীদের মনে দানা বাঁধল এই প্রশ্ন৷ দেখা গেল, জনা পঁচিশ যুবকের একটি দল হন্তদন্ত হয়ে গ্রামে ঢুকছে। কয়েকজনের মুখ গামছায় বাঁধা। অন্যদের হাতে ঝোলানো ব্যাগ। ব্যাগটিতে গোলাকার ভারী কিছু রয়েছে বলে অনুমান করা যায় অনায়াসেই। হেঁটে যেতে যেতে কেউ বলছেন, ‘পাড়ার মস্তানটাকে বের করে দাও।’ পাশের একজন তাকে শুধরে দিয়ে বলছে, ‘এরা আমাদের লোক।’ লাঠি হাতে একজনকে বিড়ি টানতে টানতে নির্দেশ দিতে শোনা যাচ্ছে, ‘সামনে যে থাকবে, তাকে মারবি। কারও ঘরে মারবি না।’ বোঝাই যাচ্ছে, এরা কার্যত সেজেগুজে অ্যাকশন নেমেছে৷ এরুয়ার নরাশপুর পাড়ার কোনও কোনও বাসিন্দা এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন৷ মনে করা হচ্ছে, ওইদিনই এই ছবি ধরা পড়েছিল সেখানে৷ তবে ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে শনিবার৷
পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের এরুয়ার গ্রামে ব্যাপক বোমাবাজি ও তার জেরে দুই দুষ্কৃতীকে গণপ্রহারের ঘটনার পর শনিবারও এলাকা থমথমে৷ আর ওই ভিডিওটিকেই কার্যত হাতিয়ার করেছে জেলা তৃণমূল৷ ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারী অভিযোগ করেন, ‘ শুক্রবার বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা প্রচুর বোমা নিয়ে গ্রামে বোমাবাজি করে। বাইরের কিছু দুষ্কৃতীকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল। প্রথমে ধোপগড়িয়াপাড়া হয়ে কলাপুকুরপাড়ার দিকে ঢোকে বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে। তারপর বেনিয়াচত্বর পাড়া হয়ে নরাশপুর পাড়ায় বোমাবাজি করে। শেষে যাত্রাদিঘি পাড়ায় যখন ওরা যাচ্ছিল, তখন গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে তাদের তাড়া করে দু’জনকে ধরে ফেলে।’
দিন দশেক আগে এরুয়ার গ্রামে শ্যামল অধিকারী নামে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি হয়৷ অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকরাই এই কাজ করেছিল৷ সেই থেকে শ্যামল অধিকারী-সহ কয়েকজন বিজেপি কর্মী গ্রামছাড়া ছিলেন। জানা যায়, শুক্রবার ভোরে তাঁরা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করতেই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ব্যাপক বোমাবাজি চলে। শেখ রবু ও হায়দার শেখ নামে দু’জন বিজেপি কর্মীকে ধরে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলের কর্মীরা। তাদের দু’জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আহত রবু শেখ বর্ধমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হায়দার শেখকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ভিডিওতে যে ২৫ জনকে দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে শেখ রবু রয়েছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের৷ তবে বোমাবাজি প্রসঙ্গে রবু শেখের দাবি, ‘আমরা গ্রামছাড়া ছিলাম। গ্রামে ঢোকার সময় তৃণমূলের লোকজন বোমাবাজি করছিল। ওদের ছোঁড়া একটি বোমা ফাটেনি। সেটি কুড়িয়ে আমাদের কেউ হয়তো ছুঁড়েছিল। তার বেশি কিছু হয়নি।’ পুলিশ সূত্রে খবর, ভাইরাল ভিডিওটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ সেখান থেকেই প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে বলে মনে করছে পুলিশ৷ তবে ভিডিওটি এরুয়ার গ্রামে বেশ ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.