Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lodha Sabar

নেট-সেটে উত্তীর্ণ লোধা শবর সম্প্রদায়ের যুবক, অধ্যাপক নয়, ছেলে প্রাথমিক শিক্ষক হোক, চান বাবা

লোধা শবর সম্প্রদায়ের কাছে বেনজির সাফল্য।

Youth From Lodha Sabar community cracks NET and SET | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতিম মৈত্র।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:July 29, 2023 6:56 pm
  • Updated:July 30, 2023 2:21 pm

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: রাজ্য এবং জাতীয়স্তরে অধ্যাপক হওয়ার পরীক্ষায় সফল হয়েছেন তিনি। আদিম জনজাতি লোধা শবর সম্প্রদায়ের কাছে যা এককথায় বেনজির। জাতীয়স্তরের অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও ছেলেকে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবেই দেখতে চান বাবা। প্রাথমিক স্তর থেকে লোধা শবর জনজাতির মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে ছেলে, সেটাই আশা ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি লোধা শবর পরিবারটি।

কার্তিক শবর অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বেলপাহাড়ি থানার এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের শবর সম্প্রদায় অধ্যুষিত আশাকাঁথি গ্রামের কার্তিক ছেলেবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভাল। লেখাপড়া শুরু আশাকাঁথি নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ২০১৪ সালে জয়পুর হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৭২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে গড় রাইপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৮৬. ০৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। কাফগাড়ি সেবা ভারতী থেকে স্নাতক এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন। চলতি বছর রাজ্যস্তরের সেট পরীক্ষায় পাশ করেন এবং তারপর এবার নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের যে কোনও কলেজে অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর আগে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষাতেও সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেবায়তন শিক্ষক শিক্ষন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিএডের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

Advertisement

দেখুন ভিডিও:

Advertisement

[আরও পড়ুন: নাবালিকাকে গণধর্ষণ! দুই অভিযুক্তর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বুলডোজারে]

ছেলের এহেন সাফল্যের পরেও কার্তিকের বাবা নির্মল শবর চান, তাঁর ছেলে যেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। গ্রামের ছাত্র গড়ার কারিগর হন। ছেলের সাফল্য যখন আকাশছোঁয়া, তখন বাবা চাইছেন, পিছিয়ে থাকা শবর সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে যাক ছেলের হাত ধরে।
ছেলের সাফল্যে আবেগঘন নির্মলবাবু চোখের জল মুছে বলেন, “ও যা করেছে এর জন্য অবশ্যই গর্বিত। আমার পরিবারে এর আগে কেউ লেখাপড়া করেনি। শিক্ষা কী, আমরা জানি না। বাবা নেশা করে রাস্তায় পড়ে থাকত। সেই দেখে আমার চোখে জল আসত। তখন থেকেই ঠিক করেছিলাম আমার পরিবারে কেউ নেশা করবে না। কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি। আর তাই আমি চাই, ছেলে প্রাথমিক শিক্ষক হয়ে গ্রামের ছোটদের একেবারে শুরু থেকে শিক্ষা দিক।” কার্তিকের মা পুষ্পও চান, “ছেলের হাত ধরে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছক।” নির্মলবাবু তাঁর তিন সন্তানকে পড়াশোনা করিয়েছেন। বড় মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। ছোট মেয়ে বাংলা নিয়ে ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করছেন। আদিম জনজাতি ভুক্ত এই শবর পরিবারটি যেন শিক্ষার আলোকবর্তিকা।

কার্তিক তাঁর সাফল্যের জন্য বাবা, মার অনুপ্রেরণা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি শিক্ষিকা মিতালী পাণ্ডার অবদানকে সমানভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মিতালীদেবী তাঁকে য়ে শুধু পড়িয়েছেন তা নয়। বইপত্র ও আর্থিক দিক থেকেও প্রচুর সাহায্য করেছেন। রাইপুরে উচ্চ মধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভরতি করানো থেকে শুরু করে থাকারও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কার্তিক শবরের কথায়, “বাবা, মা তো সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু ওই শিক্ষিকা না থাকলে হয়তো আমি এত দূর আসতে পারতাম না। আমি চাই বিশেষ করে আমার সমাজের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করুক।”

[আরও পড়ুন: নাবালিকাকে গণধর্ষণ! দুই অভিযুক্তর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বুলডোজারে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ