Advertisement
Advertisement
করোনা

কলকাতার করোনা পরিস্থিতি কি সত্যিই জটিল? বাস্তব পরিসংখ্যান সেই ইঙ্গিত করছে না

বেশ কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য জানলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

How is the actual situation of coronavirus in Kolkata
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:July 19, 2020 2:06 pm
  • Updated:July 19, 2020 2:19 pm

করোনায় কেমন আছে কলকাতা? বিশ্লেষণে হীরালাল মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজ ফর উইমেনের অধ্যাপক ঋত্বিক আচার্য

গোটা বিশ্ব কলকাতাকে ‘সিটি অফ জয়’ (City of Joy) হিসেবেই চেনে। কিন্তু বর্তমানে কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছে সেই আনন্দ নগরীর চেনা রূপ। লকডাউনের পর ক্রমশ শহরের গতি কিছুটা ফিরলেও এখনও অমিল নাগরিক জীবনের সেই সাধারণ স্বতস্ফূর্ততা। রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের শনিবারের পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতায় (Kolkata) ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৬৪৮। পাল্লা দিয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং হাওড়ার। তিলোত্তমাকে গ্রাস করছে করোনাতঙ্ক। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব, শহরের পরিস্থিতি ঠিক কতটা জটিল, এটা বোধহয় শুধুমাত্র দৈনিক ক্রমবর্ধমান সংখ্যার উপর নির্ভর করে বলে ফেলা সম্ভব নয়। এর জন্য বেশ কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য সামনে আনা প্রয়োজন।

Advertisement

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে জনসংখ্যা এবং জনঘনত্ব দুটোই অত্যন্ত বেশি। ফলত যে কোনও সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেই ভারতে তার ব্যাপক বিস্তারের একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে কিছু প্রাথমিক বিষয়ে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায় যে এই রোগের মুখ্য বিস্তার কিন্তু শহরাঞ্চলগুলিতে। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৩৫% কিন্তু শহরাঞ্চলে বসবাস করে। লক্ষণীয় এই যে ভারতে শহরাঞ্চলের পরিমাণ সারা ভারতের মাত্র ৭.৫% কাছাকাছি। ফলত এটা খুব পরিষ্কার যে ভারতের শহরগুলিতে জনঘনত্বের চাপ ঠিক কতটা।

Advertisement

corona

এবার সরাসরি চলে আসা যাক কলকাতার প্রসঙ্গে। পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল শহর কলকাতা। সামগ্রিকভাবে সারা বিশ্বে এর স্থান ১৫তম। কিন্তু জনঘনত্বের বিচারে এ শহর অনেকটাই এগিয়ে। ভারতের আরও দুটি শহর দিল্লি এবং মুম্বইও রয়েছে এই তালিকায়। জনসংখ্যার নিরিখে দিল্লি দ্বিতীয় এবং মুম্বই অষ্টম। ভারতে করোনা সংক্রমণও প্রধানত হয়েছে জনবহুল শহরগুলিতে। প্রথম সারিতে থাকা ভারতের জনবহুল শহরগুলির একটা তুলনামূলক পরিসংখ্যান কলকাতার বাস্তবিক করোনা চিত্রকে অনেকটাই পরিষ্কার করবে। মুম্বইয়ের জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৩৫,০০০। দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর ক্ষেত্রে এই জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে যথাক্রমে প্রায় ১৩,০০০, ২৬,৫৫৯, ১৭,০০০। সেখানে কলকাতার জনঘনত্ব প্রায় ২৪,০০০। রাজ্যের ভিত্তিতে বিচার করলে মুম্বইয়ে বাস করেন গোটা মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় ১৬.১১% মানুষ। তামিলনাড়ুর প্রায় ১৩% মানুষ থাকেন চেন্নাইয়ে। বেঙ্গালুরুতে বাস গোটা কর্ণাটকের প্রায় ১১ শতাংশের। সেই বিচারে কলকাতাতে বসবাস করেন গোটা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ১৬ শতাংশ।

[আরও পড়ুন: গালওয়ান থেকে পাওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার মোদির নেতৃত্বের পরবর্তী পরীক্ষা]

এবার আসা যাক মোট জনসংখ্যার বিচারে করোনা (Coronavirus) আক্রান্তের সংখ্যার তুলনামূলক আলোচনায়। মুম্বইয়ে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫.৪% কোভিড পজিটিভ। দিল্লিতে ৬.৫%, চেন্নাইয়ে ১% ও বেঙ্গালুরুতে ৪.৪%। সেখানে আমাদের শহরে মাত্র ০.০৮৫%। প্রতিটি রাজ্যের নিরিখে শহরকেন্দ্রিক মানুষের বসবাসের শতাংশ, এবং আক্রান্তের সংখ্যার শতাংশের তুলনামূলক বিচার করলে কিন্তু কলকাতার করোনা পরিস্থিতি আদপে জটিল বলে মনে হয় না। এখানে করোনায় মৃত্যুর হার ৪ শতাংশর কিছু বেশি। যা দিল্লি অথবা বেঙ্গালুরুর তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও আহমেদাবাদ অথবা মুম্বইয়ের তুলনায় বেশ কম।

corona

এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের প্রায় ৯৫ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব এবং প্রতি ১০ জন মৃতের প্রায় ৮ জনের কো-মর্বিডিটি থাকছে। WHO-এর এই বিবৃতির সঙ্গে কলকাতার করোনা পরিস্থিতির সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়। কয়েক বছর আগে করা একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, কলকাতায় মুম্বই, দিল্লি বেঙ্গালুরু অথবা চেন্নাইয়ের তুলনায় প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা শতাংশের হিসাবে অনেকটাই বেশি; প্রায় ১২%। বেশি সংখ্যক প্রবীণ নাগরিক এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের কো-মর্বিডিটি সংক্রমণে তাঁদের শারীরিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলছে।

আরও একটা বিষয় তুলে ধরা প্রয়োজন। গতকাল যে সংখ্যক মানুষ করোনামুক্ত হয়েছেন অথবা আজ যাঁরা কোভিডকে জয় করবেন, ধরে নিতে হবে যে আজ থেকে অন্তত ৭ থেকে ১৪ দিন আগে তাঁরা রোগাক্রান্ত হয়েছিলেন। অতএব সেই সময়ের নিরিখে পরিসংখ্যান দেখলে কলকাতার মানুষের সুস্থতার হার অন্তত ৫-৭% বাড়বে।

লেখার শেষে আরও কিছু তথ্য উল্লেখ করা জরুরি বলে মনে হয়। সংক্রমিতের মাত্র ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল আকার নিচ্ছে। ৭০% মানুষ থাকছেন একেবারে উপসর্গহীন। বাকি ক্ষেত্রে ব্যক্তির শরীরে সামান্য বা তার থেকে কিছুটা বেশি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে দৈনিক টেস্টের পরিমাণে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে ঠিকই, তাও মনে হয় না টেস্টের সংখ্যা বাড়লেও কলকাতার সামগ্রিক পরিস্থিতি হঠাৎ করে নিদারুণ খারাপ হবে। মনে রাখতে হবে যে টেস্টিং, ট্রেসিং, কোয়ারেন্টাইন এবং কনটেনমেন্টই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার মূল অস্ত্র।

[আরও পড়ুন: আমদানির বিকল্প প্রস্তুতিকে হাতিয়ার করে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ই বাঁচার পথ]

কলকাতার সুবিশাল জনসংখ্যা, জনঘনত্ব, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাস, তাঁদের বিবিধ আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে মাথায় রেখে করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার যে প্রয়াস চালাচ্ছে, তা নিশ্চিতভাবে কৃতিত্বের দাবি রাখে। বিদেশের শহরগুলির সঙ্গে কলকাতার পরিস্থিতির কিছু অসম্পূর্ণ তুলনামূলক পরিসংখ্যান অথবা অন্য কোনও অস্বচ্ছ্ব যুক্তির আড়ালে পরিস্থিতিকে অযথা ভীতিকর ভাবা অর্থহীন। আমাদের নিজেদের আরও অনেকটা স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। তবেই দ্রুত চেনা ছন্দে ফিরবে আমাদের মহানগরী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ