Advertisement
Advertisement

Breaking News

g20 meeting

হাতে কী থাকল তবে?

মোদি পুতিনের সঙ্গে আগাম ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন।

Jinping and Putin will not be in the upcoming 'G20' conference then what will India have? | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:September 2, 2023 2:16 pm
  • Updated:September 2, 2023 9:55 pm

আসন্ন জি২০ সম্মেলনে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা-সহ বিশ্বের বিবিধ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের জমায়েতে অনুপস্থিত থাকবেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে যুদ্ধ-বিরোধী এবং জোট-নিরপেক্ষ বৈশ্বিক নীতির একটি নতুন রূপ, যা নরেন্দ্র মোদির বিদেশনীতিতে ফুটে উঠতে পারত, ধাক্কা খেল। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

‘জি২০’ বিশ্ব (G20) সম্মেলন আসন্ন। রাজধানী দিল্লি কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র দিল্লিকেই যেন অধিগ্রহণ করেছে! চারদিকে ব্যারিকেড, আধা-সামরিক বাহিনী। অবশ্য হবে নাই-বা কেন! বিপুলা এ পৃথিবীর ২০ জন রাষ্ট্রনায়ক আসছেন রাজধানী দিল্লিতে। আর, এই বৈশ্বিক সম্মেলনের কান্ডারি এই বছর ভারত। দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এই সম্মেলনের মূল ‘হোস্ট’।

Advertisement

কিন্তু শেষ মুহূর্তে জানা গেল– চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) আসবেন না সম্মেলনে যোগ দিতে। প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) আগেই জানিয়েছিলেন আসতে পারবেন না। এবং আসবেন না বলে মোদি (PM Narendra Modi) তাঁর সঙ্গে আগাম ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রচারও হয়েছে। এই ধরনের কর্মযজ্ঞে অতিথিদেরকে এক জায়গায় হাজির করানোও কিন্তু হোস্ট তথা অধিনায়কের বড় দায়। কেননা, না-আসার দায় অনেক সময় ঘাড়ে চাপে যে আমন্ত্রণ জানায় তার উপর। প্রশ্ন ওঠে, কোথাও কি শিষ্টাচারের অভাব হয়েছে? রয়ে গিয়েছে ‘কমিউনিকেশন এরর’?

Advertisement

[আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য, ‘ছেলে বাড়িতেই ছিল না’, সাফাই মন্ত্রীর]

চিনের সঙ্গে ভারতের এমনিতেই যুদ্ধ পরিস্থিতি। চিন ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। অতীতে যে সেনা অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, তা-ও তুলে নেয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ব্রিক্‌স’ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন মোদি। চিনের বিদেশমন্ত্রক থেকে জানানো হয়, ভারতই নাকি এই বৈঠক চেয়েছিল। অর্থাৎ, চিন যে চায়নি, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জ্ঞাপন করা। ভারত চেয়েছিল, কারণ, আমার মনে হয় জি২০ সম্মেলনে চিনকে আমন্ত্রণ জানানো। প্রধানমন্ত্রী সেটা উচিত কাজই করেছিলেন। চিনের সঙ্গে বিরোধ যা-ই থাকুক না কেন তারা তো আর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে কখনও সরে আসেনি। সরেনি ভারতও। ফলে কূটনৈতিক আলাপের দরজা খোলা রাখা উচিত। যদিও তলায় তলায় চোরাস্রোতে বইতে থাকে যুদ্ধের সম্ভাবনা।

আমদানি-রপ্তানি নিয়ে জি২০-র অন্তর্ভুক্ত যে ব‌্যবসায়িক সম্মেলন ‘বি২০’ (বিজনেস২০), সেখানেও চিন আছে। আর, চিন এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্য নিয়েও সংঘাত আছে। চিনের বিরুদ্ধে ‘প্রোটেকশনইজম’ এবং ‘ডাম্পিং’-এর যে অভিযোগ তো সাবেক। পুরনো। তবু আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া চলতে থাকে, ব্যবসা-বাণিজ্যও চলতে থাকে। চিনা পণ্য ছাড়া এই মুহূর্তে আমেরিকা-সহ সমগ্র বিশ্ব অচল। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যায়, মার্কিন বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা ‘অ‌্যাপেল’-এর কথা। অ্যাপেলের যন্ত্রাংশ অনেকটাই উৎপাদন করা হয় চিনে। উৎপাদন ব্যবসায় চিন যে বিশ্বে একটা সাংঘাতিক জায়গায দখল করে রেখেছে, অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং সবদিক মিলিয়ে দেখতে গেলে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার চেষ্টাই ভারতের পক্ষে উচিত কাজ। বল‌া বাহুল‌্য, সেদিক থেকে চিনকে আমন্ত্রণ জানানোও ছিল উচিত কাজ।

বদলে চিন কী করেছে? ক’দিন আগেই তাদের নয়া মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে দেখিয়েছে। চিনের নয়া মানচিত্রে আকসাই চিন ও অরুণাচল প্রদেশ রয়েছে। দিল্লিতে আসন্ন জি২০ সম্মেলনের আগে এই মানচিত্র ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারত এর কড়া নিন্দে করে বলেছে– এই ধরনের মানচিত্র প্রকাশ করে অন্যের ভূখণ্ডকে নিজের বলে দাবি করা চিনের ঐতিহাসিক বদভ্যাস। ভারতের উত্তর সীমান্ত নিয়ে চিনের ক্রমাগত এই আগ্রাসী অবস্থানের মূল উদ্দেশ্য: ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের সঙ্গে আমেরিকা ও তার বন্ধু দেশগুলোর হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা থেকে ভারতকে বিরত করা। এই বিকৃত মানচিত্রের সমালোচনায় যখন নয়াদিল্লি মুখর, তখনই চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানিয়ে দিলেন– জি২০ সম্মেলনে আসবেন না। ফলে কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলি প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করে বলছে– শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য মোদি তঁার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে গিয়েছিলেন। বাস্তবে কী হল সেই আলোচনার ফল?

[আরও পড়ুন: ‘প্রত্যেক মরশুমে সঙ্গী বদলে ফেললে…’, লিভ ইন সম্পর্ককে তোপ এলাহাবাদ হাই কোর্টের]

ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি হত– যদি আমাদের দেশ এই সম্মেলনে কোনও একটা ইতিবাচক শান্তির প্রস্তাব গ্রহণ করাতে পারত অন‌্যান‌্য দেশকে দিয়ে। আমেরিকার গোসা হবে বলে ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’-এর (এসসিও) বৈঠককে ভারত কৌশলগতভাবে কম গুরুত্ব দিয়েছে। পুরো বৈঠক-ই কার্যত ভার্চুয়ালি হয়েছে। তার কারণ, সেই এসসিও-তে আমেরিকা ছিল না, ছিল রাশিয়া আর চিন। আশঙ্কা ছিল, রাশিয়া এবং চিন এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতে এসে জি২০-র বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করে বসতে পারে। ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি২০ সম্পূর্ণ কালিমালিপ্ত হতে পারে, বিশ বঁাও জলেও চলে যেতে পারে। হয়তো ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে জি২০-র দর্শন।

ভ্লাদিমির পুতিন ও শি জিনপিং আসবেন না বলে তা হচ্ছে না এটা যেমন ঠিক, তেমনই এত চেষ্টা করেও ভারতের বৃহত্তর উদ্দেশ্য ধাক্কা খেল– মেনে নেওয়া দুঃখজনক। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, জি২০ সম্মেলনে পরিবেশ বা অর্থনীতি নিয়ে যা-ই আলোচনা হোক না কেন– যুদ্ধবিরোধী সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করা বেশ কঠিন। আর গৃহীত হলেও সেখানে কতটা ভারতের সার্বভৌম উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে তা-ও অস্পষ্ট। পৃথিবী শান্তি চায়। পৃথিবীর এই ঐকান্তিক চাহিদা পূরণে আমেরিকা ও চিনের প্রেসিডেন্টের বৈঠক হওয়া কাম্য ছিল। কিন্তু শি জিনপিং না-আসায় জো বাইডেনের সঙ্গেও তাঁর মুখোমুখি বসার সম্ভাবনাও কার্যত সম্পূর্ণ খারিজ হয়ে গেল।

এখানে বলে রাখা দরকার, ভারত কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদার হয়নি, দীর্ঘদিন ধরে অত‌্যন্ত সুচারুভাবে সেই পথে পা বাড়ায়নি, আত্মনিয়ন্ত্রণ করেছে। আবার, রাশিয়ার আগ্রাসী আক্রমণের বিরোধিতা করতেও পিছপা হয়নি। ফলে জোট-নিরপেক্ষ বৈশ্বিক নীতির একটি নতুন রূপ নরেন্দ্র মোদির বিদেশনীতিতে ফুটে উঠতে পারত। অন্তত সেই সম্ভাবনা ছিল।

পুনশ্চ: ভারতের অংশ নিজেদের বলে দাবি করে ভারতকে উসকানি দিয়েছে চিন। এটি আদতে চিনের বহু আকাঙ্ক্ষিত ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বিষয়টিকে আজগুবি বলে দাবি করলে কী হবে, আখেরে ভারতের হাতে কিছু রইল কি? জি২০ সম্মেলনের আগে ভারত এমনকী পাকিস্তানের সঙ্গেও নরম মনোভাব দেখিয়েছিল। দীর্ঘদিন পরে পাকিস্তানে ভারতীয় হাই কমিশনার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, পাকিস্তানের হাই কমিশনারও ভারতে আবার নিযুক্ত হবেন। পাকিস্তানের যুদ্ধ করার মতো পরিস্থিতি নেই, তারা আলাপ-আলোচনা চাইছে। ইমরান খান কবে দেশছাড়া হবেন তার জন্য দিন গুনছে পাকিস্তানের সেনা। নওয়াজ শরিফ আবার পাকিস্তানের দায়িত্ব নিয়ে ফিরে আসতে পারেন– এমন জল্পনাও হাওয়ায় ভাসছে। এই সময়টায় মোদি যদি পাকিস্তানের সঙ্গে আবার নতুন করে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করেন, তার নিশ্চয়ই একটা গুরুত্ব আছে। ’২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে আরও একদফা ‘যুদ্ধং দেহি’ পরিস্থিতি যে ভারতবাসীর জন্য অনভিপ্রেত– দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়।

(মতামত নিজস্ব)

লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক

[email protected]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ