Advertisement
Advertisement

Breaking News

samaresh majumdar

কালজয়ী সমরেশের উপন্যাস ‘উত্তরাধিকার’! পাঠকের সঙ্গে আলাপ ‘মৌষলকালে’

প্রিয় লেখকের চারপাশে ব্যক্তিত্বের অদৃশ্য বেড়া!

Samaresh Majumdar's Uttaradhhikar is in the list of best Bengali novels? | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:May 8, 2023 9:22 pm
  • Updated:May 9, 2023 12:12 am

কিশোর ঘোষ: বাংলা সাহিত্যে ভাল উপন্যাসের অভাব নেই। তবে পড়েই পাঠক ছিটকে যাবেন, রাতের ঘুম উড়ে যাবে, পাঠে পণ্ড হবে সংসার, বউ রেগে আগুন, বান্ধবী সম্পর্ক ভাঙার হুমকি দেবে… এমন উপন্যাসের সংখ্যা হাতে গোনা। যেমন ‘গোরা’, ‘পথের পাঁচালী’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘ঢোঁড়াই চড়িত মানস’, ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’, ‘পূর্বপশ্চিম’, ‘লোটাকম্বল, ‘বারো ঘর এক উঠোন’, ‘লালসালু’, ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’…। পাঠক বিশেষে লিস্টি কমবে-বাড়বে, গ্রহণ-বর্জন হবে। কিন্তু আসল কথা এই তালিকায় সাহিত্যিক হিসেবে নিজের স্থান করে নেওয়া বিপুল এলেমের কাজ। প্রশ্ন হল, সমরেশ মজুমদারের (Samaresh Majumdar) ‘উত্তরাধিকার’ কিংবা ‘কালবেলা’ অথবা ‘কালপুরুষ’ কি এই কড়া এবং কঠিন তালিকায় নিজের স্থান করে নিতে পেরেছে? আমার এক আশ্চর্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

সাহিত্যের ছাত্র। সঙ্গে লেখার চেষ্টা। ফলে নয়ের দশকের শেষে, পৃথিবী যখন ধীরে হাঁটো নীতিকে খারাপ চোখে দেখে না। ঘুঘুডাকা দুপুরে বইটই পড়ে বাঙালি। স্মার্টফোনের ‘ঠাকুরদা’ পেজার পৃথিবীতে পা দেবার ফন্দি আঁটছে! সেই সময় পাড়ার লাইব্রেরি থেকে ধার করে পড়ি অনিমেষের গপ্প। সমরেশের ট্রিলজি উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ। লেখক দেখান, আমি দেখি, আমার মতো পাঠকেরা দেখেন- অদেখা সাত কী আটের দশকের ঘাম-ধুলো-রক্ত! যৌবনের উষ্ণতা। ভুল ও ঠিক আন্দোলন। দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব। প্রেম। দাম্পত্য। সম্পর্কের জটিলতা। সমরেশের জাদু গদ্যে সবটাই ছিল বাস্তবের মতো গায়ে কাঁটা দেওয়া! এই পাঠের আরও বড় বিষাদময় অনুভব হল- বাঙালি বোধ হয় তার শেষ বড় রাজনৈতিক আন্দোলনকে ফেলে এসেছে। ট্রিলজি ভেঙে চতুর্থ উপন্যাস ‘মৌষলকালে’ রয়েছে সেই ইঙ্গিত। এই উপন্যাস সূত্রেই প্রিয় লেখকের দেখা পাওয়া, তাঁর বাড়ি যাওয়া ইত্যাদি।

Advertisement

২০১১-১২ সাল থেকে একটি নবীন বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের রবিবারের ক্রোড়পত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পেতে থাকে ‘মৌষলকাল’। আমি তখন ওই পত্রিকার রবিবারের বিভাগের কর্মী। ফলে যেতে হত ‘মৌষলকালে’র প্রতিপর্বের লেখা আনতে। এই ঘটনায় বিরাট ধাক্কা খেয়েছিল আমার ভিতরে থাকা সমরেশ-মুগ্ধ পাঠক। এইসঙ্গে আশ্চর্য এক জীবনের পাঠও নিয়েছিলাম। এমনিতে উত্তেজিত ছিলাম। প্রিয় লেখকের বাড়ি যাওয়া, তাঁর সঙ্গে আলাপ হওয়ার সুযোগ বলে কথা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার]

তাছাড়া অধিকাংশ সাহিত্য-পিপাসু তরুণের মাথায় থাকে অনন্ত রাত্রি। অর্ধেক উত্তরের মতো জোনাকি। পুরো জ্বলে না কিছুতে। কম পড়ে আলো। ভেবেছিলাম, ওই সব জোনাকি ছেড়ে দেবো লোকটাকে কাছে পেলে। তিনিই বাকি অর্ধেক জ্বেলে দেবেন! কিন্তু অফিসের গাড়ি নিয়ে শ্যামপুকুর স্ট্রিটে, থানার কাছের ওই বাড়িতে গিয়ে হতাশ হয়েছিলাম। আলাপ হলেও কথা হয়নি তেমন। প্রিয় লেখকের চারপাশে ছিল অদৃশ্য বেড়া! প্রয়োজন মতো ব্যক্তিত্বের গেট খুলে বেরোতেন এবং ঢুকতেন। অধিকাংশ দিন বাড়ির ভিতরে ঢোকাই হত না আমার। দোতলার জানলা থেকে দড়ি দিয়ে নামানো একটি ছোট ব্যাগ। তাতেই থাকত মুখবন্ধ খাম। অপূর্ব হাতের লেখা কিংবা ‘মৌষলকাল’।

[আরও পড়ুন: ‘আইনি পথে হাঁটব’, বাংলায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর মুখ খুললেন পরিচালক]

কর্মসূত্রে ফোনে কথা হয়েছে কতবার, সাক্ষাৎকার নিয়েছি তাঁর। বইমেলায় মিত্র ঘোষের স্টলে প্রকাশক নূরদা আলাপ করিয়ে দিয়েছেন। সৌজন্য বিনিময়। গম্ভীর, জড়ানো গলা- ‘ভাল থাকবেন’। কিন্তু রাশভারী ব্যক্তিত্বের আড়ালেই থেকে গিয়েছেন নয়ের দশকের শেষপ্রান্তে বড় হয়ে ওঠা আমাার মতো অনেকের লেখক-হিরো সমরেশ। একজন পেশাদার লেখক ও লেখা স্বতন্ত্র দুই আত্মপরিচয়। বার বার যা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন সমরেশ মজুমদার। ৭৯ বছর বয়সে প্রশ্ন ছুঁড়ে চলে গেলেন, বাংলা সাহিত্যের কড়া এবং কঠিন উপন্যাসের তালিকায় কি ‘উত্তরাধিকার’ কিংবা ‘কালবেলা’ অথবা ‘কালপুরুষ স্থান করে নিল? চির অমলিন স্থান? যাকে বলে কালজয়ী!

বোধ হয় নিল। কারণ মহাকাল জয়ে শিল্পের যে তিন গুণ জরুরি- সময়ের দলিল, বিষয়ের গভীরতা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রাফ্ট বা শিল্পশৈলি, তা রয়েছে এই ট্রিলজিতে। বিশেষত ‘উত্তরাধিকারে’। তথাপি ‘শিক্ষিত’ বাঙালি রবীন্দ্রনাথ, পিকাসো এবং চ্যাপলিন ছাড়া বাকি জনপ্রিয়দের মোটেই পাত্তা দেয় না। বরং বাঁকা নজরে দেখে। জনপ্রিয় মানেই সস্তা এই হল তাঁদের থিওরি। সমরেশও এই ‘মধ্যবিত্ত’ তাচ্ছিল্য থেকে বাদ পড়েননি। যদিও তাতে কিছু যায় আসে না বাংলা সাহিত্যের। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ