খেলার দুনিয়ার তারকার বিচার তাঁর মাঠের পারফরম্যান্সের নিরিখে হওয়াই তো বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তা কি সবসময় হয়? তারকাদের বেডরুমে উঁকি মারার অভ্যেসটা যে কোনওভাবেই কাটিয়ে ওঠা যায় না। নিন্দুকদের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখে গেলেন সুলয়া সিংহ
দুই দেশের দুই রাজপুত্র। যারা নিজেদের কীর্তিতে বিখ্যাত হয়েছে। দাপটের সঙ্গে সাম্রাজ্য শাসন করেন। তারা আগ্রাসী। তবে হিংস্র নয়। তারা বদ মেজাজি, তবে ঠান্ডা মাথায় সবটুকু সামলে নিতেও পটু। অন্যের সঙ্গে নয়, তাদের লড়াই নিজেদের সঙ্গেই। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াইয়েই মত্ত থাকেন। শক্রুপক্ষ কী বলল, সেসব শোনার সময় কোথায়! তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। তাঁদের উদাহরণ তাঁরা নিজেই। আর সেই দুই এলিজিবল ব্যাচেলর রাজপুত্তুরের প্রেমে হাবুডুবু খায় গোটা দুনিয়া। তাদের বিকল্প? কে হবে বা আদৌ হতে পারবে কি না জানা নেই। তবে তাদের রাজত্বে দেশবাসী যে দারুণ খুশি, এটুকু স্পষ্ট।
হুম…। ফুটবল দুনিয়ার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর ক্রিকেট সাম্রাজ্যের বিরাট কোহলির মধ্যে ঠিক এতটাই সামঞ্জস্য। কথায় আছে, ফলেন পরিচয়তে। নিজেদের পেশাদারি জীবনে সেই প্রবাদ বাক্যই যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন মর্ত্যলোকের এই দুই তারকা।
ছোটবেলায় বাবা-মা ক্লাসের ভাল ছেলেটি বা ভাল মেয়েটির সঙ্গে তুলনা টানলে বেশ রাগ হত। নিজের মতো করে কি ভাল হওয়া যায় না? হয়তো যায়। কিন্তু সবাই মানতে চায় না। আর তাই হয়তো জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সিআর সেভেনের তুলনা চলে অন্য এক রাজপুত্রের সঙ্গে। ক্লাব আর দেশের নিরিখে, ম্যাচের নিরিখে, গোলের নিরিখে, পুরস্কারের নিরিখে, এমনকী ব্যক্তিগত জীবনের নিরিখেও পরীক্ষা দিতে হয় তাঁকে। হোক তুলনা। পর্তুগিজ রাজা ওসব কানে তোলেন না। তাঁর রাজত্বে তিনিই সেরা। সেকথা বলতে দ্বিধা করেন না। এ ব্যাপারে তিনি বেশ স্বার্থপরও। নিজেই নিজের প্রশংসা টশংসা করেন। গর্ব করে বলেন, “আমিই এক নম্বর।” গোল করলে সতীর্থদের থেকে সরে গিয়ে একাই সেলিব্রেট করেন। তাতে কী? তাঁর রাজত্বে তো দেশ ট্রফি খরায় ভোগে না। তাই এসব ‘খুন’ মাফ করে দেন তাঁর ভক্তরা। আর মহিলা প্রীতি? আরে রাজা বলে কথা। নারীপ্রেম একটু-আধটু থাকবে না, তাও কি হয়? প্রশ্ন হল এসব কোনওভাবে তাঁর খেলায় প্রভাব ফেলেছে কি? উত্তর সবার জানা।
একই উদাহরণের আওতায় পড়েন বিরাট সাম্রাজ্যের মালিক কোহলিও। মাঠের বাইরে বান্ধবীর সঙ্গে কী হল না হল, ওমনি হুমড়ি খেয়ে তাঁদের ঘাড়ের উপর গিয়ে পড়ে ক্যামেরার ফ্ল্যাশগুলি। আর বান্ধবীর উপস্থিতিতে ব্যাটে রান না এলে তো রীতিমতো রে রে করে ওঠে নিন্দুকদের কলম। আবার দায়িত্ববান নেতা হিসেবে, ভিনগ্রহের ব্যাটসম্যান হিসেবে, প্রাক্তনদের নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যৎ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার পর মেলে মুক্তি। কেন, যে রাঁধতে পারে, সে কি চুল বাঁধতে পারে না? প্রবাদ বাক্য কি আর এমনি এমনি তৈরি হয়েছে! তাই তো প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে বন্ধুর বিয়েতে রাত জেগে নাচের আঁচ নেতা কোহলির তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি গায়ে কোনওভাবেই লাগে না। আর এই জায়গাতেই মর্ত্যলোকের এই দুই তারকা অনন্য।
নিজেদের ভাবমূর্তিকে পারফরম্যান্সের নিরিখে তুলে ধরেন তাঁরা। তাই তো তাঁরা দেশকে অনেকখানি দিতে পারেন। আর পরিবর্তে ছোট-খাটো ভুল-চুকগুলো অদেখা করে দেশও অনেকটা ভালবাসা ফিরিয়ে দেয় তাঁদের। যাঁদের ক্যারিশমা খেলার রাজত্বকে বছরের পর বছর সুজলা-সুফলা করে তুলছে, তাঁদের কি ব্যক্তিগত জীবনটা নিজেদের মতো করে কাটানোর অধিকার নেই? নাকি ‘পাবলিক ফিগার’-এর তকমা চেপেছে বলে শোয়ার ঘরেও মুখোশের আড়ালেই থেকে যেতে হবে? কী বলছেন নিন্দুকরা?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.